শনিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২০

অশোক রায়

 


অশোক রায়


বোধ-মুক্তি

জন্ম-অধিকার-বলে

ভেবে নিয়েছিলুম

এদেশে এ জীবনে

আমি যা-খুশি-তাই

করতে পারি যখন তখন

কিন্তু শেষে হার মানতে হল

ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র -তস্য ক্ষুদ্র

অমিত বলশালী

অণু-প্রাণিত দানবের কাছে।

মনে ভয় জাগে দেখি

মানব সভ্যতা মুখ-থুবড়ে

মহাকালের আঙিনায়।

বক্ষ কুরে কুরে খায়

হৃদয়ের জানলা বন্ধ হায়

বাক-রুদ্ধ শ্বাস-স্তব্ধ

আমি আর ইচ্ছেমত

বাচতে পারি না।

খোলা আকাশের নিচে

না চায়ের ভাঁড়ে চুমুক

না সিগারেটে সুখটান

প্রতিবেশির দরজা

মুখের ওপর বন্ধ।

অসংখ্য মেহের আলির

প্রতিক্ষণে তফাত-যাও

ঘরের কোণে একটেরে বন্দি

আমার কাছে মুক্তি এখন

লক্ষ-কোটির মুক্তোমালা।

 

 

লক-ডাউন


লক-ডাউনের আগেও আমি সারাদিন

প্রায় বাড়িতেই থাকতাম পেনশনে

গৃহবন্দি নয় ইচ্ছেমত হতাম পথিক 

সিগারেট বা দু-এক পেগ

কখনো-সখনো এদিক-ওদিক

লাইব্রেরি বা রিহার্সালে

ফিরে এসে বই-পড়া

ল্যাপটপের জানালায় কবিতা লেখা

এসব চলত, মাথাটা ছিল সাফ।


এখন অবশ্য ব্যাপার অন্যরকম

কিছু করতে ইচ্ছে করে না

লেখনী চলতে চায় না 

সবসময় মাথায় বিদ্রোহের বোঝা

আমি বুঝি শৃঙ্খলিত দিশাহীন ব্রাত্য

তবু আমাকে বাঁচতে হবে

সবাইকে নিয়ে করোনা-সন্ত্রাস রুখে


জীবন এখন খাদের মুখে

মানুষের অস্ত্বিত্ব ঘোর সংকটে

পরষ্পর থেকে দুরে-বহু দূরে 

মনের মধ্যে কালবোশেখি ঝড়

উথাল-পাথাল সব হিসেবের আলপনা

পাল্টাতে হবে অনেক-কিছু সাবেক

অনেক যত্নে তৈরী সুখ-স্বপ্ন

টুকরো হয়ে মাটিতে লুটায়

মধ্যাহ্নেই এমন সুর্যাস্ত

সপ্তদশ-কোটি পূর্ব-পুরুষ

দেখেছ কি কখনো আগে?             

 

 

অতিমারী যাপন


অস্থির মনটা আটকে গেছে

এতদিন-অজানা এক বাঁকে

রচনা মুখ ফিরিয়ে

সাদা ক্যানভাসে পাশ ফিরে আছে,

কথা বলে না

বুকের বাঁদিকে অনেকদিন ধরে

সোনালি চাঁপার কুঁড়ি না-ফোঁটা

লোধাশুলির মোড়ে বাসগুলো

সেই যে এসে দাঁড়াল আর নড়ে নি

চলতে চলতে সাইকেলের হাওয়া

কখন ছেড়ে চলে গেছে বুঝিনি

 

রাজার পথে বিকিকিনি প্রায় বন্ধ

আলো-আঁধারের সীমারেখা অস্পষ্ট

সব হাওয়া বেরিয়ে গেছে

আর হতোদ্যম মানুষ কিছু না বুঝে

চার দেয়ালে ছবি হবার পথে

 

ওরা আসছে হাওয়া ঘুরে আসবে

মহা ঝঞ্ঝা জীবনগুলোকে কোথায় নিয়ে ফেলবে

সুযোগ পাব কি

ব্যাটারি চার্জ করার

শুধু আমার হাতে নয়

হাত-উপুড় অনেককে করতে হবে সকাল সকাল।

 

 

 

পরিবেশ বলে আমি ভাল আছি 


লম্বা পথ চলে গেছে শাজাহানপুর

কেউ নেই সওয়ার দিন-দুপুর 

প্রকৃতির বুক জুড়ে সুখের নিঃশ্বাস

কোথায় গেল স্বেচ্ছাচারী

দু-পেয়ের দল?

 

গাছেদের ফিস-ফাস এখন অট্টহাস

পাখিরা গান গায় বসন্ত বাতাস

কবে এরা হল এত মাতাল

সোনার দিন বুঝি ফিরে এল রে

কথা বলে মা ছেলের সাথে।

 

রোদ্দুরে আকাশ দুর্বার নির্মল

কালো যমুনায় এখন নীলের ঢল 

সাইবেরিয়ার পাখি ডানা ঝাপটায় 

রুপসী নদী উচ্ছল সাগরের গায় 

সোনার দিন বুঝি ফিরে এলো ভাই।