মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

অলভ্য ঘোষ



অলভ্য ঘোষ

পাগলী

বুকে দুধ ভর্তি স্তন দুটো
ছেঁড়া ব্লাউজের ফাঁক ফুঁড়ে
যেন বের হয়ে আসতে চাইছে।
ফুটপাতের কোনায়
কাটা মুরগির মতো
লাল টুকটুকে
নাড়ি ভুড়ি জড়ানো
রক্ত স্রাব ভেসে যাওয়া ধুলায়
ধুকপুক করছে মানবের ভ্রুণ।
পথ চলতি লোকেরা যেন
ভিড় করে সিনেমা দেখছে।
দুই হাতের উপর ভর দিয়ে
উঠে বসার চেষ্টা করেও
পড়ে যায় দুর্বল পাগলী টা।
প্রসবের আবর্তে
ক্ষরণ হয়েছে অনেকটা রক্ত।


এতটা রক্ত ঝড়ে এ দেশের
স্বাধীনতাও আসেনি।


দূরে এক সাংবাদিক
গল্পটাকে খবরের হেডলাইনে
পরিবেশিত করতে
ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল খুঁজে চলেছে।
ট্রাফিক পুলিশ ভিড় সরাতে ব্যস্ত।
ভোটের প্রচারে লালবাতি
সাইরেনওলা মন্ত্রী যাবেন এ পথ দিয়ে।
প্রসূতি পাগলীর খবর পেয়ে
কোন এক খ্রিস্টান মিশনারীর লোক
এসে হাজির।
ভ্যাটিক্যান সিটি থেকে
তাদের নাকি কেউ আবার
সন্ত উপাধি-ধারী।
হাড়হাভাতে এদেশের
সদ্যজাতের চাহিদা খুব বিদেশে।
মোটা মোটা ডোনেশন দেয় তারা।
এই তো কদিন আগে ইঁদুর ছানার মত
বড়দির নার্সিং হোমে রেট করে মিলেছিল
চালান হবার জন্য প্রস্তুত
কলকাতার নবজাতক।
মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস
সমাজ সেবিকারা যেন এগিয়ে চলেছে
গোয়েন্দাদের মত পাগলী টার দিকে।
পাবলিকের চোখের পাতা পড়ছে না।


-কে মা করেছে পাগলীটাকে?
-অপজিশন।
কখন যেন লাল বাতি সাইরেন বন্ধ করে
গাড়ির সওয়ার ন্যাওটা পুলিশকে
কানে কানে ফিসফিস করে বলে;
-ভালো করে একটা ইনকয়েরি করে দেখো!
এ দেশের রাজনীতির বেশ্যারা
প্রচার পেতে নিজের মাকেও লাইনে দাঁড় করায়।
বিরোধী ক্যাডারদের হাতে পাগলির ধর্ষণ!
হট কেক।কোটে প্রমাণ হতে হতে ভোট ফুরাবে।


বিরোধীরাও সদলবলে উপস্থিত হলো।
একদল বিরোধী পাগলীর জাত খুঁজে পেল।
পাগলী টাকে বলল সীতা মাইয়া;
রাবণ নয় ধর্ষনের তীর মহম্মদের দিকে।
আর এক দল বিরোধী; ধর্মের ভোট নয়
মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে
বেশ উদ্বিঘ্ন তারা গদি হারানোর পর থেকে।
শাসকের ব্যর্থতা ঝান্ডা উড়িয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে
ময়দান কাঁপাচ্ছে যখন;র্যা ব নামার আগে
পাগলী টা হঠাৎ একগাদা থুতু ছুড়ে দিল
সংবিধানের দালালদের মুখে।


ঘৃণার সে বজ্র নিক্ষেপে
বিন্দুমাত্র গরল ছিল না
অ্যাসিডের মত । খসে পড়ল না
দাঁত ,মুখ ,নাক-চোখ;
পুড়ে ছাই হলো না এদেশের মেকি গণতন্ত্র;
সার্বভৌমত্ব!


কারো কারো ইচ্ছে করলো পাগলীটার তলপেটে
ছুটে দিয়ে কেঁত কেঁত করে লাথি কষিয়ে দিতে।
সাহসে কুলালো না।


উৎসুখ মানুষের ভিড়ে কত মানব দরদী মোবাইলে
বন্দি করে চলেছে গোটা দৃশ্যপট ।
নারীবাদী মানবতাবাদীরা মিডিয়ায় বসে সন্ধ্যাবেলায়
গালভরা মানব অধিকারের বহু চর্চিত,চর্বিত বুলি কপচে
বাড়ি ফিরে বিছানায় শরীর চায় স্ত্রীর।
মাসিকের অসম্মতির ও বারণ মানে না।
কারো আবার প্রিয় নারী কখনও কখনও
স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে থানায় পৌঁছলে
ছোটবেলার টিকার দাগের মত
বুদ্ধিজীবীর প্রিয় ব্যান্ডের সিগারেটের ছ্যাঁকা মেলে
শরীরের আনাচে কানাচে।


টিপ্পনি নয়!
বাসে, ট্রামে ,মিছিলের ভিড় ঠেলে ভারতবর্ষের নারী
বাড়ি ফিরে গা আলগা করে গোণে তার স্তনের উপর
নখের আদমশুমারি।


পাগলীটা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো আবার;
-"ভালবাসা না বাল! শুধু চোদার তাল।"


কেউ কেউ ফিক ফিক করে হাসল।
কেউ কেউ মুখ চাওয়া চাই করল ।
কুকুর ধরার মত ফাঁসকল করে পাগলী ধরা হলো।
পাছায় ইনজেকশন ফুটতে ঘুমে ঢলে পড়ল সে।
সভ্য সমাজের উদ্দেশ্যে
তার অসভ্য কথাটির তাৎপর্য বুঝলো না কেউ!


আজকের শিশু বাঁচবে কিনা জানি না;
কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা পর্যন্ত
সমস্ত ভারতবর্ষের ভারত মাতা মনে হলো পাগলিটাকে।
সে ছাড়া আমরা সকলেই অসুস্থ।




অ্যাসপারগারস সিনড্রোম

কাল রাতে তুমি এলে
রোজ রাতের মত দীর্ঘ স্বপনে।
না সেতো স্বপ্ন নয়;আমি চোখ মেলে
চেয়েছিলাম। তোমার দীঘল
চোখের পাতা পড়েছিল দুইবার;
লিপস্টিক দেওয়া লাল ঠোঁট;
কেঁপেছিল কুড়ি থেকে গোলাপ
ফোটা পাপড়ির মত।
সুরমার আইলাইনার।
রেখায় বাধা চোখে মণি দুটো
তোমার চঞ্চল এদিক ওদিক।
ছুট ছিল। আকাশের দিকে।
মাটির দিকে।


অথচ তুমি আমার দিকে
চাইতে পারছিলে না।


আতরের মত কোন পারফিউমের গন্ধে।
আমি যেন সম্রাট শাহজাহানের মতো
একটা গোলাপ ফুল হাতে
তাজমহলের অন্দর মহলে বুক পেতে
তোমার অপেক্ষা করছিলাম। আর তুমি
আমার মমতাজ আকাশের তারাদের ছেড়ে
এই চাঁদনী রাতে এসেছ আমার সাক্ষাতে।


বুকের ভিতর তোমার কপোত কপোতী
বক বকম করছে। অথচ মুখে
একটাও কথা পড়ছে না।


আমি চিবুক খানা তুলে ধরে
আলতো ঠোঁটে ঠোঁট চুবতে গেলাম
তুমি সড়ে গেলে দশ হাত।
মৃগয়ার হরিণীর মত।
তোমার জরির পারের জেল্লা
মহলের শিশা গুলো থেকে
আলো ঠিকরে এসে চিকচিক করে উঠলো।
আর চিকচিক করে উঠলো আমার বুক।
মরুভূমির বালির উপর সূর্য কিরণের মতো!
তোমার কপালের ঝুলন্ত টিকলির মত;
আমার হৃদপিন্ডটা যেন দুলছিল।
ডান দিক-বাম দিক পেন্ডুলামের মতো।
তোমার পায়ের নুপুর ঝনাৎ করে উঠেছিল
যেভাবে। আমার বুকটাও মোচড় দিয়েছিল
ঠিক একই রকম। পেছন থেকে তোমার কোমরে
দুটো হাত ছোঁয়ালাম। বুঝতে পারছিলাম
তোমার বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছে
হাতের মুঠোয় বন্দি দুটি নিরীহ শশকের মতো।
তোমার শরীরটা কাঁপতে কাঁপতে যেন
শক্ত আড়ষ্ট হয়ে আসছিল। আর আমার হাত দুটো
ততই তোমাকে আষ্টেপিষ্টে আমার বাহু বন্ধনে
বেঁধে ফেলতে চাইছিল।
আমি মিশে যেতে চাইছিলাম
তোমার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। দুটো প্রাণীর
অনুভূতির চরম সিক্ততার অনুরণন
ছড়িয়ে কি পড় ছিলনা এই সুবিশাল আড়ম্বর ময়
রাজমহলে। শূন্যে ভেসে আছি মনে হচ্ছিল।
মসৃণ স্বচ্ছ আরশি গুলো নির্লজ্জের মতো
আমাদের দেখছে কিনা;
সেদিকে খেয়াল ছিল না। ঝাড় বাতিটা
মাথার উপর নিভিয়ে দিতে বললে যেন তুমি;
আলতো ঠোঁট আটকে আসা গলার বাঁকে।
লজ্জা সব লজ্জাবতীর মতো আলোর সংসর্গে।


আমার বুকে প্রেমের চিতা নিভবে কেমন করে।


একি ওড়নার তলায় যখন দুজনে মিলে হলাম এক!
আগুনে যেন ঘৃতাহুতি হল। শরীর ফুঁড়ে
শরীর ঢুকে পড়ে;
বোঝার উপায় থাকে না কোনটা কার।
এত বড় সাম্যের পথ ছেড়ে
কে জানে কেন এই পৃথিবীতে
ভেদাভেদ আছে গেড়ে।
শজারুর মতো কাঁপতে কাঁপতে
নরম তুলতুলে স্তনও
কচ্ছপের খোলের মত শক্ত হয়।
সমস্ত সত্তারা সব
মিলনে অস্তিত্ব হারায়।


আমি তখন নিয়ন্ত্রণ রেখার বাইরে।
স্খলিত হয়ে পড়লাম।
বোবা চোখ বুজে এল ঘুমে।
তবু তুমি নিবিড় আমার বাহু পাশে।


সকালে ঘুম ভেঙ্গে উঠে দেখি;
আমার স্বপ্ন সহচরী হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে।


-যা!মিছে বানিয়ে বানিয়ে বলা।
তোর আমার এক দশকের ফারাক।
তুই যখন প্রথম পৃথিবীর আলো দেখছিস
আমি তখন অলকানন্দা স্কুলে ক্লাস থ্রিতে পড়ি।


তাতে কি নবীর যদি খাদিজা হয়;
আমার মমতাজ চন্দ্রিমা হবে না কেন!


-সুন্নত!


কেন তুমি হেসে গড়িয়ে পড়ছ শুনে!


-প্রথম ভাগের সুন্নত সবার জন্য ওয়াজিব নয়
দ্বিতীয় ভাগের সুন্নত গুলো প্রতিটি উম্মতের জন্য
অবশ্য পালনীয় কর্তব্য।নবীকে ফলো করতে গিয়ে
ফেল মারবি বুঝলি। তার চেয়ে
বরং সাইক্রিয়াটিস্ট দেখা।


হো হো করে হাসছো তুমি!
সকলের চোখ এড়িয়ে টিফিনের
অবসরে যে রাতের কাব্যালাপ।
তাজমহলের আরশি গুলোর মত
অফিস ক্যান্টিনে সবাই
এখন চেয়ে আছে আমাদের টেবিলের দিকে।
ঝাড়বাতির আলো যেমন মহলের শিশেদের ওপর
প্রতিফলিত হয়ে ঠিকরে আসে। তেমনি
তোমার উপেক্ষার হাসি সংক্রমিত করেছে
উপস্থিত সকলের হো-হো-করে হাসা
ক্লোজআপ দাঁতের হাসিতে।
অমলেট টা ন্যাতার মতো পড়ে প্লেটে।
চা জুড়িয়ে জল।
ব্রিটিশ পিরিযোডের ঢাউস ফেনটা
মাথার উপর ঘট ঘট শব্দে ঘুরছে।
একটুও হাওয়া লাগছে না গায়ে।


কেবল একা আমি না সকলেই
মনো রোগীর মতো কোন না কোন
কাল্পনিক সম্পর্কে বাঁচে!




উপহার

তোমায় দেবো বলে অনেক ভেবে
যে উপহার রেখেছিলাম মনে এখন
দেখছি সেঁধিয়ে গেছে শীত ঘুমে ।
আবার কি বসন্ত আসবে কখনো;
সেই সব নাম না জানা ইচ্ছের প্রজাপতি
গুলো নানা রংয়ে উড়ে বেড়াবে স্বপ্নের
অলিতে গলিতে ।
যা হারিয়ে যায় তা কি ফিরে আসে ?
যা নিভে যায় তা কি আবার জ্বলে ?
যা উবে যায় আর কখনো কি তার
দেখা মেলে ?
পৃথিবীতে আমরা কত অসহায় নিরানব্বই
শতাংশের উত্তর জানি না ।
কিন্তু জানি এ জীবন কে যত ভালবাসবো
ততো তাড়াতাড়ি মরব । ভালবাসায়
আত্ম কেন্দ্রীকতার বিষ রাখা থাকে যদি
তা সংকীর্ণ হয়। তবু ভালবাসি
নিছক এক বরফের ভালবাসা । এক
লহমায় যা গলে যাবে ; এক ঝড়ে ধুলোর
মতো যা উড়ে যাবে;পূর্ণিমার পর
অমাবস্যা এলে । সে দিনের কথা ভেবে
আজ কেন বিমূর্ততা । তবুও ভাববো না ভাববো না
করেই প্রেমে পড়ে আমি ও আমার কবি বন্ধুরা ।
আঘাত পাই একটি ভ্রম আলেয়ার মতো;
প্রেম নেই শুনলে ।
এই দেখেছ উপহারের কথা বেমালুম ভুলে
বসেছি । তোমায় দেব দেব বলে কখনো
দিই নি যা তা কী জানার কৌতূহল হয় না
তোমার । সেটা কি জান সেটা একটা লকলকে
সাপের ফণার মতো কামনার ছোরা। উপহারের
অছিলায় কসাই হতে চেয়েছিলাম । কিন্তু কখনো
ক্ষণিকের পলকা সুখে স্থায়ী কোমলতার প্রাণ
কেড়ে নিতে চাইনি ।
আমার সুপ্ত উপহার তবু যদি বলো
সেদিন ছিল দরকার খননের কাজে প্রেম খনি ।
আমি বলি তবে , সে রতন কি হবে
যা রত্নাকরে লোটে । সম্পদে যদি
সমৃদ্ধ না হোই বৃথা আহরণে ।




অচলায়তন

মনে হচ্ছিল একটা শপিং মলে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
প্রিয় মানুষ গুলো সব শোকেস বন্দি।
প্রাণ নেই।সাজানো রয়েছে সেরা ফ্যাশন।
কেবল পরিপাটি চাকচিক্য।
উপরে লেপন চোপন;ভিতরে খড়ের গোজন।
আইডেন্টিটি কার্ড এর মত গলায় ঝুলছে দাম।
গায়ে চেনা গন্ধ নেই।ন্যাপথলিনে ম ম করছে।
চোখের পাতা পড়ছে না।
স্পট লাইটের আলো ধরা আছে।ছায়া নেই।
কায়া মায়া বেহায়া;
কতখন সহ্য করতে পারে এই মিথ্যে বেঁচে থাকা।
ধৈর্যের উপর ধর্ষণ হতে হতে মনে হলো ছিটকে
বেরিয়ে যাই।কিন্তু একচুলও নড়তে পারলাম না।
ভাল করে চেয়ে দেখলাম খালি চোখে বোঝা না গেলেও
আমার চারিদিকে স্বচ্ছ কাঁচের মত দেয়াল খাঁড়া।
আমিও বন্দি একটা বাক্সে।
জেলখানার চেয়েও মর্মান্তিক আমাদের জীবন।


বোকা এই বাক্সটার পাশে
একটা পথ শিশু হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে।
অবাক দৃষ্টিতে দেখছে ও আমাকে।
প্রযুক্তির তীব্র আলট্রাভায়োলেট রশ্মি ওর মস্তিষ্কের
ভেতর দিয়ে সুষুম্নাকান্ড বেয়ে শিরা ধমনীতে প্রবাহিত হয়ে
গুহ্যদ্বার ফুঁড়ে বেড়াচ্ছে না।ও স্বাধীন।
পায়ের কাছে পড়ে থাকা একটি ইটের ঢেলা
ছেলেটা হাতে তুলে নিল।দে ছুঁড়ে।
ভেঙ্গে তচনচ করে দে বিচিত্রবীর্যের মহাভারত।
আমাকে নিয়ে চ।যেমন খুশি খেলিস আমায় নিয়ে।
এই গু মুতে ঠাসা মাথাটা
ধড় থেকে খুলে নিয়ে ফুটবল করে খেলিস।


গুপ্ত ক্যামেরায় কন্ট্রোল রুমে বসে দেখা গেল
মুক্তির সার্জিক্যাল অ্যাটাক।সুরক্ষার নামে ক্যাশলেস
ডিজিটাল লেজার রশ্মি ছুটে এলো ছেলেটার
মাথা ফ্যুড়ে ভরে দিল কাম, ক্রোধ,লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য।
ঢেলাটা খসে পড়ল মাটিতে।কয়েক আলোকবর্ষ দূরে নয়
মাত্র দুই হাত দূরে পড়ে আছে ঢেলাটা।
মানুষের এই অচলায়তনের উপর তা ছুঁড়ে দিতে
কেউ কি এগিয়ে আসবে না!

_-----------------------------------




উপগ্রহ

সারা রাত কেটে গেল;
অমাবস্যার আড়ালে চাঁদ।
জ্যোত্স্না মিলল না।
একটা পেঁচা কর্কশ
ডেকে ডেকে উঠছিল যখন
রাতের বুক চিরে।
আটপৌরের মত প্রেয়সী বলল;
- জানি তুমি চাঁদে মজেছ।


আমি তো চাঁদনী খুঁজছিলাম
প্রেমিকার বুকে!
তার ঘন চুলে
বিলি কেটে দিতে দিতে
যেন অমাবস্যা হাতড়িয়ে
পৌঁছতে চাইছিলাম
তার ঠোঁটে ..... চিবুকে।
ঝুলন পূর্ণিমার দোলনায় ঝোলা
যুগল চাঁদের মতো
দুটি প্রাপ্তবয়স্ক
ঝুলে থাকা পূর্ণ স্তনের থেকে
আলো চাইছিলাম আমার বুকে।
কাব্য জোছনার যে আলো
সংক্রমিত করে কবিকে।
চন্দ্রকলার স্নিগ্ধতায়
মিশে যেতে চাইছিলাম
চাঁদের অনুকৃতিতে।


-না হবে না এসব।


আমাকে ফেলে
দরজায় খিল দিল অভিমানী।
পোড়ারমুখী চাঁদ
এখনো কি দেখছে আমায়;
উন্মুক্ত পায়রা ডাঙার মাঠে
বোরকা ঢাকা কালো মেঘের আড়াল থেকে।
চাঁদের কলা কৈবল্য শিখেছে কি
আমার চন্দ্র কোনা?
সাঁতার শেখাও আমায় কাব্য শরীর জুড়ে।
ভাসতে শেখাও ভেলা লখিন্দরের মতো;
জানি আমি তুমি বেহুলা হলে
কাল কেউটের ফনায় ও জীবন মেলে।
সাপের গায়ে খোলস যেমন লেগে;
তোমার গায়ে চাঁদ গিয়েছে মিশে।
জোছনা তোমার শরীর বেয়ে এলে
আমার তখন অমাবস্যা কাটে।
মন তো ছিল শুধু তোমাকে ঘিরে
চাঁদ কি কেবল আকাশে ফুটে থাকে।
দীঘির বুকে দেখনি চাঁদের স্নান!
আমার বুকে চাঁদ ও যে আছে।
আকাশ যদি বুকটা আমার হয়।
চাঁদ হতে হবে আপত্তি কই তোমার।
চাঁদ কি কেবল চাঁদেরই নাম হয়।
সোনার চাঁদের নাম শোননি কখনো!
তুমি আমার সোনার গৌর অঙ্গ।
চাঁদ মিশেছে আমার শরীর জুড়ে।


আমার বুকে যখন সোহাগ পরাগ রেণু;
হ্যংলা চাঁদের বদন পেলাম দেখা।
কৃষ্ণচূড়ার পাতার ফাঁক থেকে নির্লজ্জ টা
দেখছে উঁকি মেরে।কাব্য গুলো চাঁদের দিকেই চেয়ে
সব বোঝে তা এই পৃথিবীর চাঁদ।
প্রেমিকার বুকের উপর আলপনা যত আঁকি
কল্পনা ততো ভিড় জমিয়ে আসে।
এমনি করেই আমার কক্ষে সে।
আমিও কারও কক্ষ পথেই ঘুরি।
ঘোরাঘুরি চলছে জীবন জুড়ে।
ভবঘুরে হয় না যেন নিঃস্ব।
চাঁদের যেমন কলঙ্ক আছে সাথে
পৃথিবীর ও আছে একটি উপগ্রহ।
আকাশের চাঁদ থাকে থাকুক আকাশে
চাঁদনী ধরার ধুলায় গেছে মিশে।





এক্স ফ্যাক্টর
___________________________

জয় পরাজয় বলে কিছু নেই ।
সবকিছুই আপেক্ষিক ;
মহাবিশ্বের মহত্বের কাছে
আমরা ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র ।
অনাবিষ্কৃত ভর চিরকাল
আচ্ছন্ন করে রাখবে মানুষের
ফেরেশতা কেও । শত সহস্র কোটি
প্রজ্ঞার উন্মোচনেও কোন
দিন বোধগম্য হবে না আমাদের
মস্তিষ্কের গভীর গহীন রহস্য ।
যেখানে সব সন্দিগ্ধ চোখ
নিভে যাবে প্রদীপ জ্বলবে
বিশ্বাসের । বীজ গণিতের
ফর্মুলায় ফেলে মেলাতে
গেলে এক্স ফ্যাক্টর হবে ।
ধ্রুব এই এক্স । উপলব্ধিতে
প্রত্যক্ষ অথচ হাওয়ার মতো
অদৃশ্য ।

অনুলিখন: নিবেদিতা পাল