জয়া চৌধুরী
উদার
আরে ধুর-
এইসব আলোক প্রাপ্তা গুলোকে না
ধরে ধরে নির্ভয়া বানিয়ে দিলে মন্দ হয় না।
এদের যতই করো না কেন
ব্যক্তিস্বাধীনতার ঘ্যানঘ্যানানি এদের অসুখ
ওসব এদের মাতৃ ধারায় আছে।
রাজদ্বারে শ্মশানে চ যঃ তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ
আরে বাবা শাস্ত্রবাক্য কি মিথ্যে হতে পারে?
কালভেদে প্রকাশ হয় আলাদা টাইপের
তাই আমি ওর সঙ্গে
রাজদ্বার থেকে কলঘর
বেতার থেকে সেতার
রাজপথ থেকে অনলাইন
রাবড়ি থেকে ফুলকপির চপ
সবটা জুড়ে তিষ্ঠোতে থাকি
ওর প্রতি আমার যত্ন নেওয়া দেখে
সবাই যখন বলে আমার মত সঙ্গী অনেক তপস্যায় মেলে
খুশী হয়ে ভাবি আমার ঋণ ও কখনোই শুধতে পারবে না
তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম না হইব কেন?
তুমি তো জানো- সবকিছু এজন্যই
যখন ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরি
এক এক করে
কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে রাখি
মুখে চোখে জল দিই হাত পা ধুই
ঘরোয়া যা কিছু পড়ে আছে প্রতীক্ষায়
পরীক্ষায় শেষ ঘন্টায় লেখা উত্তরের মনোযোগ- এ সে সব
চটপট সমাপ্তি টানি
কী কী হলো সারাদিন ভর
কোন কোন প্ল্যান এবার করা দরকার সেকথা বলতে গিয়ে
চোখ পড়ে যায় বারান্দার গন্ধরাজে
বাইরের আমি কে অন্দর দুহাত বাড়িয়ে ডাকে
এরপর
একটা দারুণ আদরের নতুন অপেক্ষা করতে থাকি
তেষ্টার জল
তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে
আমার আলজিভ পর্যন্ত তেষ্টায় শুকিয়ে ওঠে
আমার প্রাণ জুড়ানোর জন্য আরো
আরো গভীরে ডুবে যেতে থাকি তোমার।
ছোটবেলায় রূপনারায়ণ আমাকে ডেকেছিল
সে আলেয়ার পেছনে ছুটেছি বেদম দমহীন
বিস্তর পিরিন্যেওস আর তিতিকাকা ডিঙনোর পরেও
শুনশান বিষ্ণুপুরী দুপুর থেকে যেত বুকটা।
আবার সেই তৃষ্ণায় মরে যাবার গল্প।
একটা পানিপাঁড়ের খোঁজে কিই না করেছি!
এখানে কেরোসিনের দোকানে লাইন
ওখানে পাসপোর্ট অফিসে হত্যে-
সাউন্ড প্রুফ ঘরে সশব্দে মৌন থেকেছি
চুনো কুল আর কালোজাম কুড়োতে কুড়োতে
শেষমেশ কখন যেন বাদাম গাছ হয়ে গেলাম...
আমি তো জানি বৃক্ষ তোমার বড় প্রিয়
শুভঙ্করী
প্রেম করতে কি লাগে আর...
একটা দিল
দুটো মানুষ
তিনখানা শব্দ
চারটি ভাত
পাঞ্চজন্য শাঁখ উলু ইত্যাদি
ছ’চামচ আদর চাদর ঘুমু
সাত ঘন্টা জুড়ে চুমু
আট কড়াই টড়াই ঝামেলা বাপু
ন’মাসে নার্সিং হোম
দশঘরা নামতা শেষ
চল সোনামন একটা ল ও ও ও ও ম্বা চুমু খাই ...উমমমমম
-
এবার ভালোবাসাবাসি শুরু হোক।
শুধু তোকে ঘিরে
তোকে রেগে গিয়ে হোক চুম্বন
তোকে হেসে ফেলে হোক প্রাণের গান
তোকে মাৎসর্যে হোক আলিঙ্গন
তোকে মদিরা করে হোক মত্ত
তোকে শরীরে হোক গ্রহণ
তোকে মননে হোক বিগ্রহ স্থাপন
তোকে কামে হোক আশ্লেষ জরজর
তোকে ক্রোধে হোক চাপ দন্ত নখর
তোকে লোভে হোক মুখস্থ
তোকে মোহে হোক পুনঃ স্মরণ
তোকে কামড়ে আসুক শীৎকার
তোকে ভুলে গিয়ে হোক ক্রন্দন
তোকে মনে রেখে হোক উৎসব
তোকে ঘিরে থেকে হোক চুম্বন
শুধু তোকে ঘিরে তোকেই ঘুরে ফিরে
তোকেই ভালবেসে হোক ভালোবাসা।
শব্দেরা
টুপটাপ ঝরে পড়তে থাকে শব্দেরা
রুমালে কুড়িয়ে ঘিয়ে সাদা কমলা বেগুনী হরিৎ শব্দ টুকরোদের
কখনো অ্যাসবেসটাসের চালে তুমুল ঝমঝম
ভালো থাকো ভালো থাকো উড়ুম ধুড়ুম শব্দ ডাকাতেরা
কান পেতে শুনি, শুষে নিই, ভরে তুলি
প্রতিটি খাঁজ শব্দ প্রসাধনী তৈলে
প্রখর দহন তাপ সাঁই সাঁই বালিয়াড়ির ভিতর
অচেনা ঠোটফাঁটা রুখুসুখু শব্দ প্রতিম তুমি
ফণীমনসায় জ্বালা জ্বালা কাঁটা ভরে
কুটি হয়ে যায় শরীর
জাড় শীতে ঠকাঠক দাঁতে দাঁত শব্দ ওমের
আকূতি
সারাক্ষণ সারাটা জীবন সারা যোনি জাত কাল জুড়ে
আছো যদি তুমি শব্দ-
আমাকে ছুঁয়ে থাকো
আমায় ঋদ্ধি দাও
অনাহত সমাধিতে ডুবিয়ে দিও তোমার ব্যঞ্জনা ধ্বনিতে... প্রিয় শব্দ।
অসমাপ্ত
মেয়েটা বড্ড জেদী মেয়েটা ছিল লাজুক
দাঁতের নিচে ঠোঁট লুকিয়ে নিজেকেই কেবল
ভাঙত, মোচড়াত, ছিঁড়ে ফেলত...
এমন করায় বাধা দেয় নি ওকে কেউ
এমনি নিপীড়ন ওর নিজেকে নিয়ে
আঁচলে সন্তান তবু বেয়াড়া প্রশ্ন
ঈশ্বর এই একলা পন আমাকেই যে কেন?
পার্টি দিয়ে সওনা বাথে রকিং সুখে
চরম বোধের ক্ষণে
একলা পন আর একলা পন
ওর গুঁড়িয়ে দিত ভেতর
পোষা প্রেম ছিল দাঁড়ের ময়না কিংবা ম্যাকাও
ঠোঁটের ভেতর প্রতারণা আর স্কচের বাস
ভালো লাগে না কিছু ভালো লাগে না
ঈশ্বর এই একলা পন আমাকেই যে কেন?
অধমের নিবেদনং
জাম্পিং ঝপাং জাম্পিং ঝপাং
ভুল সব ঘটনারা মনে আনুক নালিশং।
যদি কুছ খারাপং হয় দিক বিদিকং
ভালোরাও আছে হে নেত্রং খুলিতং।
আবাহন ভালো কাজ বিসর্জন খারাপং
এই জানি এগুবার প্রাথমিক ধরণং।
জাম্প কাট করিতং সিদ্ধান্তে আসিতং
নহে কাজ বিবেচক মনুষ্য শোভিতং।
জাম্পিং ঝপাং জাম্পিং ঝপাং
সব কিছু নেগেটিভ নহে এই জীবনং।
ভালো হয় নিজ কাজ ভালো করে আচরং
তৎপরে সমাজের সকলেরে উপদেশং।
এই থাক আবিশ্ব চরণেতে প্রার্থনাং
ভালো থাক ভালো থাক ভালো থাক মনুষ্যং
ভালো থাক ভালো থাক ভালো থাক প্রাণীকুলং
ভালো থাক ভালো থাক ভালো থাক চরাচরম্।।
মন খারাপ
মন খারাপের সময় গুলো তে আরো কাজের ভেতরে সেঁধিয়ে যাই
কাজ গুলো আমার আহ্লাদ পেয়ে দিন দিন বেড়ে উঠতে থাকে
হরলিকস কমপ্লানের মত চুমুক দিয়ে কাজ খেয়ে নিই দিনে প্রতি প্রহরে
আঙুলে ভিএর মত জীবন আটকে গুলতির মত কাজ টেনে নিই
ঝিলিক
ব্যস্ত জীবন কখন একঘেয়ে হয়ে যায়
টের পাওয়া যায় না
আজকাল চিঠি আসা ঠাকুরমার ঝুলির মত
কৌটো বন্দী ভোমরার গল্প
তোমাকে আদর করাগুলো মাথার ভেতর
ঝিম ঝিম চুমু মাখাতে থাকলে
কাজে কাজে কেজো ট্রাফিক জ্যাম জানান দেয়
এখনো শিস দেয় দোয়েল
মনে মনে তখন শীতের সোয়েটার বুনি।