মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল



ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল


ওরা সবাই দিকু                   
-----------------------------         
বড়োদের ওরা দেখতে পারেনা।
ওদের চোখে বড় মানেই দিকু,
ওদের চোখে বড় মানেই ফিউডালইংরেজ।

ভাত সাজানো থালা
ওরা দু'পায়ে মাড়িয়ে যায়
ওরা যেন বিরসার ছায়া।
অথচ ভাতের জন্যেও তো
বিরসার লড়াই ছিল।

এ যুগের বিরসারা
নিজের ভাতের থালা মাড়িয়ে
অন্যের জন্য লড়াই করে,
এটাকে কি শ্রেণীসংগ্রাম আখ্যা দেওয়া যায়?

উলগুলান করা মানুষগুলো
আজও আছে সমাজের আনাচে-কানাচে
ভাত জ্বালানো আগুনের ধোঁয়ায়
ওরা ধরা পড়ে।

ধরা পড়ে ---
সমাজের অন্যায়, পাপ, অনাচার, শঠতা
জড়ো করা জ্বালানো আগুনের ধোঁয়ায়।

তাই ওরা বড়োদের দেখতে পারেনা
ওদের চোখে বড়োরা ফিউডাল, দিকু।





প্রতীক্ষার আগমনী
-----------------------------
জটিল আবর্ত-----
আমাকে বিদ্ধ করো, বধ করো।
ত্রিশূল দিয়ে আমাকে বিদ্ধ করো মা।
আমার রুধিরে ভেসে যাক  তোমার
ইন্দিবর। যে অসম্ভবেরা সূতিকা গৃহ
দেখেনি তাদের বাষ্পমোচন করো।

দিকে দিকে নাগিনীর ঘেরাটোপ, তাই
বোধনের গন্ধে দম আটকায়।
তোমার আলতা পরা রাঙা পা
রাখো আমার স্কন্ধে,
আমি ডুবে যাই আদি অকৃত্রিম
ওম্ ব্রহ্মে। যেখানে প্রবেশের ছাড়পত্র
পাবেনা কোনো কোটালকোনো শিরোমণি,
কোনো ভিখারী,কোনো বাতাস,
কোনো প্রেম।

শুধু থাকবে চৈত্রের হাহাকার,
মণিকর্ণিকা ঘাট, সারেঙ্গীর যন্ত্রণা, কবিতার ভাষা,
আর থাকবে হেমন্তের হিমে ভেজা
হারানো মায়ের ছেঁড়া শাল।





এক্সপ্রেস
-----------------------------
রাত বোঝাই করে চলেছে পণ্য।
পণ্যের গায়ে লেগেছে আলো,
ঠিকরে পড়ছে তার যৌবন শরীর থেকে
ফরাসী-খালের গন্ধ।
শুধু তুমি বলেছিলে
বেলফুলগুলো ছিল ভালো
এখন পচন ধরেছে।





অশান্ত উপত্যকার মাঝেও
-----------------------------
মেঘের আঁচলে উড়িয়ে নিলাজ
ভালোবাসায়
লক্ষ মানিক কঠিন চোখেও
আগুন জ্বালায়
বুটের তলা শত্রুপক্ষের রক্তে ভেজা
অনন্ত রাত পূর্ণিমা চাঁদ
হয়নি দেখা!

প্যারেড-বুলেট-মানচিত্রে
মনটি বাঁধা
অনেক শীতেও পাইনি আগুন
স্বপ্ন দেখার।

দড়ির ব্রিজে পা রেখে সাম্য হাঁটা
নদী-শরীর স্রোত দেখিয়েও
অনেক ভাটা।

বোম বাক্সে মাথা দিয়ে
তাকেই খুঁজি,
অনেক দিনের অদেখাতে মনোবিকলন
পূর্ণিমা চাঁদ ঝলসানো এক প্রগাঢ় চুম্বন।





ভোরের মাসিরা
-----------------------------
ভোরের ট্রেন
পথ চলা শুরু
কাঁধে ব্যাগ, রং-চটা শাড়ি
সেফটিপিন দিয়ে আটকানো
বাবুর বাড়ির চটি।

কখনো ঝুলে
কখনো পর-পুরুষের বুকে লেপ্টে
ট্রেনের ধর্ষিত দৌড়।

শহরকে স্বাভাবিক রাখতে
এরাও বসন্ত হয়,
শুকনো ডালের পলাশ ফুল।

শহরের কিচেন থেকে
বেরোনো কালো ধোঁয়ায়
ওদের ভাতের থালায়
শিউলি ফোটে।