সুমী সিকানদার
চিত্রক / ২
যেতে হলে যাও নির্মোহ,
ফিরোনা সায়াহ্ণে ভুল কোন রঙের ছদ্মবেশে।
যাবার দৃশ্য থেকে আমি পাই মৃদু ছন্দময় অথচ
গাঢপ্রণয়,
এঁকে ফেলি মূর্ত নান্দনিকতা, স্মৃতিকাতরন বুদবুদ আর স্পর্শভ্রমণ ।
চোখের পাতায় রুপারঙ বজ্র ঘষে ঘষে আঁকা।
আরো এঁকেছি দুর্বোধ তোমার ইশারা
ব্রাশে তুলে নেই তোমার যত টলটলে ইচ্ছে
,তোমার ছু্ঁযে থাকা ভঙ্গিমা
জটিল অথচ স্বাচ্ছন্দ্য আঁধারে।
এঁকে ফেলি যা যা চাইছি, সন্ধ্যার নম্রতম মুখ, টপকে যাই বৃষ্টির ছাঁট।
থাকুক কিছু অসমাপ্ততা, থাকুক কিছু অনিশ্চিন্ত বোধ , চুরমার তাড়না।
সারা স্বপ্নের রঙ তীব্র লাল তো নয়
ভোরের আধাভাঙ্গা আলোয় ভাল দেখা যায় না,
ম্লান লালে তোমাকে খুঁজি।
আর তুমি, মিলিয়ে যেতে যেতেও
যা কিছু গভীর তা নিয়ে ফিরে আসো মেঘসহ মন্দারে।
মাতালঘ্রাণে ,ভোরের ক্লান্ত ব্রাশে
আমার গ্রীবায় ,আমার ক্যনভাসে।।
আমাকেই
কোথাও একটা যেতে হবে বুঝি, কোথায় জানিনা।
এক শান্ত মাঠময় সঘন সবুজ ছেড়ে, বেনারসী শস্য ছেড়ে
একটু পর পর এক পায়ে দাড়িয়ে থাকা নির্লিপ্ত
বৈদ্যুতিক খুঁটি , শুনে রাখো।
তোমায় ছেড়ে যাবো পিঙ্গল।
কিছু ঘর তুলেছিলাম ছোট ছোট একচালা ,
রাতে দুরন্ত বৃষ্টি এক্কা দোক্কা খেলে ,বুকে কান পাতলে শোনা যায়।
তাতে চা-বাগানের দুইপাতা এককুঁড়ির সইরা থাকে।
তাদের বলেছি, সময় নেই।
যেতে হবে পোয়াতির সন্তানের কান্না না শুনেই।
আহা পেটে তিলডলা তেল দিও , দাগ জানি না পড়ে।
দড়িতে বাঁধা আমাদের গাহুল পরানগাভী।
নিয়মমত দুধ দেয় পোয়াতির জন্য ,
তার বাছুরের জন্য কিছু দুধ ছেড়ে দিও গো ,সে বলতে জানেনা কস্মিনেও।
আমার খামার বাড়ি,
টমেটগুলো পেকে পেকে পড়ে থাকবে গাছের পায়ের কাছে,
এভাবে কতকাল পড়ে থাকবে জানিনা।
অন্য কোন ফিকে সবুজ টমেটো জন্ম নেবার আগ পর্যন্ত
যেন
তারা পড়ে না থাকে ।
বিটনুন মেখে খেও।
হলুদিয়া সরিষা, রোদের চেয়ে গর্ব তোমার বেশী ।
তোমার কিছু সোনাল আমাকেও দিয়েছে বিধাতা
এ রঙ ঘষে গেছে তোমার তামা গালে তামাম কালে।
অকপটে আজ বলে দাও ,মেনে নেবো অপার মান্যতা।
যা কিছু শব্দহীন ছিলো ,অস্ফুট ছিল ভাঙ্গন
সেসব ইশারারা আজ বড় বেশি শব্দ করছে ... কসম।
আমার কাছে কেন শব্দ লুকাও ।
সন্ধ্যা ঘনার আগে আগে , লবনাক্ত যোগসাজশে
কিচু রুদ্ধশ্বাস মূহুর্ত আলগোছে টেনে নিয়ে চলে
যেতে হবে ... আমাকেই।
কফিপর্ব
তোমার লং রুটের বাসটা চলতে চলতেই ফোন করেছি,
ফোন ধরতে ধরতেই তুমি বাস থেকে নেমে পড়লে ।
নেমে পড়তে পড়তেই বৃষ্টি এসে
তোমার গালে মাথায় পড়তে লাগলো ।
¬
বৃষ্টি পড়তে পড়তেই তুমি দৌড়ে আড়াল খুঁজছো ,
যেন সে তোমায় ছুঁতে না পায়।
বৃষ্টি ছুঁতে না ছুঁতেই শুরু হয়ে গেলো কফি ও
কবিতা
তোমার গাঢশব্দ, কিছু মাইনাস কিছু প্লাস।
¬¬
প্লাস মাইনাসের শেষে হাতে রইলো কফিমগ
এক্সক্লুসিভ ধোঁয়া ততোক্ষনে উড়ে গেছে।
ধোঁয়া উড়ে যেতে না যেতেই লেখাটা শেষ।
কাল আবার কফি হবে, হেজেলনাট।
রাশিফল
না আর সেলফোন নয়,
মেসেজ রেখোনা হোয়াটস অ্যপে
স্কাইপেতে কি কোনও কালে গোটা আকাশ দেখেছে কেউ !
বন্ধ করো সকল মাধবী মাধ্যম
এসো লাইভ টেলিকাস্টে।
মসৃণ উচ্চাঙ্গের সময়টুকু পড়ো আমাকে
দুপুর কুড়াক সন্ধ্যালাবণি।
খুলে নিলাম তোমার কালোচশমা ,খানিক খালি চোখে দেখো
কুয়াশায় অনুবাদ করে নাও আজকের রাশিফল
আজ তাবৎ শিস শুভ।
ভুল বানানের খসড়া খুঁটে খুঁটে ঠিক করে পাখিঠোঁট
পাতা উল্টানো গদ্যেরা লাগাতার পরিবেশনে ঢলে পড়ে
তারা বিরতি চায়
এখন কোন বিরতিতে যাচ্ছিনা আমি
আজ যেকোন বিরতি অশুভ।।
চিত্রক //৩
ছবিটা শেষ করতে সময় লাগছে
কিছু ব্রাশের আঁচড় মোলায়েম কিছু তীর্যক।
কিছুক্ষণ থেমে তাকাই
ঝুঁকে হাতে তুলে নেই তাদের খোঁপা থেকে
যেসব ছন্নছাড়া ফুল পড়ে গেছে উদাসীনতায়।
তোমার মুখশ্রী থেকে আরও বড় যে খোপাটা আঁকা হলো
তাতে ফুলেরা পরস্পরের শোভা বন্দনার সুযোগ পায়
শ্যামল সুশ্রী মুখে তার ক্লান্ত ছায়া,
তুমি কবেকার আমার বনজবা।
তোমার গলায় গোল করে আঁকছি ছয়তারের মালা
কোনটা পুঁতির কোনটা পালকের কোনটা মাটির ঢেলা
সব মিলিয়ে পুরোপুরি ছাঁচে এখন বনজবা চাকমা।
তোমার ঠোঁটে ঠেসে লাল দিতে গিয়ে
মনে মনে শুষে নিলাম চাপা কষ্ট গুল্ম
প্রবাল কানে পেতে সাগরের ডাক শুনতে চাওয়া
আধা ডোবা বিকেল টাকেও ছিটিয়ে ছিটিয়ে এঁকেছি
দেখ চিনতে পারো কিনা।
তোমার পরনে কি আঁকবো ভাবতে ভাবতে
এঁকে ফেলেছি লালনীল চেকের গামছা শাড়ি
কোমরের বিছাটা কষে ঘুরিয়ে পরিয়ে দিলাম
রুপা রঙ এ কিম্বা রঙ্গে।
পায়ের অনেকটাই খোলা, তাতে নীল সুতলী প্যচালাম
আঁকা শেষে ক্যানভাস হাতে নিলাম
তাকে মুছে নিলাম যত্নে মলমল কাপড়ে
তখন রোদ অন্যপাড়ায় চলে যাচ্ছিল।
তোমাকে এবার পাতলা আবরণে ঢেকে দি্যেছি
ঢেকে দিলাম চার দিন নিখোঁজ থাকার পর
তোমার শুকিয়ে শক্ত হয়ে আসা কালচে রক্ত কে
ঢেকে দিলাম টানা নির্যাতনে তোমার বন্ধ জবান, স্থির চোখ
শুধু বেহায়া কালো পা’ টা কেমন বেড়িয়ে আছে নীল সুতলীসহ
তাকেও ঢেকে দিলাম।
নিজেকে কতবার ঐ কালো পায়ে উপুড় সেঁধিয়ে দিয়েছি,
না না এ দৃশ্য আমি আঁকিনি , নানান জেরায় পরবো শেষে।
তোমার মিশমিশে রঙের পায়ের জন্য
আমি উন্মুখ রক্তজবা গাঁথতাম মনে না রাখাই ভালো।
আর কোথাও কিছু বাকি নেই
সদ্য শেষ করা ছবিটা দেয়ালে সটান তাকিয়ে আছে
আমারই দিকে
সবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা 'কী সুন্দর আঁকা'
‘ চারদিন ব্যাপী প্রদর্শনীতে 'বনজবা' নামের ছবিটা
ভাল দামে বিক্রি হবে নিঃসন্দেহে।