মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

কাকলি ভট্টাচার্য্য



কাকলি ভট্টাচার্য্য

অর্ঘ্য
_______
একুশের সমাসন্ন ভোরে,
লাল সূর্যের আভা স্পর্শ করলো
তোমায় ।
জলে স্থলে নিভৃত অবকাশে,
মানুষেরা উচ্চারন করছে
মাতৃ - মন্ত্র ।
নাদ থেকে পরানাদ পর্যন্ত
যার বিস্তৃতি ।
হৃদয়-স্পর্শ করা অনুরণন আর
নিখাদ ভালবাসায় ছুঁয়ে যায় তোমায়
'মা'  'মা'  'মা' মহাশব্দ-
ধাবিত হচ্ছে তমসা ভেদ করে আলোক পথে।
চেতনায় আর চিন্তনে তুমি আছো -
আশৈশব -- আমৃত্যু
প্রনাম তোমায় বাংলা ভাষা ।
_________________






বাসন্তিক ভোরে
__________
শানিত তরবারির মতো, দৃপ্ত পর্বতচূড়ার মতো-
অন্ধকার ছিঁড়ে- আলোর --
আগমনীর মতো
তুমি এলে ।
অবচেতন থেকে চেতনে রূপান্তরের মুহূর্তে,
প্রথম সূর্যালোক দেখা আর
ধমনীতে বহমান শোণিত স্রোতে
তুমি এলে ।
আচমন স্নানের পরিশুদ্ধতায় --
সকালের ভৈরবী তে তুমি এলে ।
অনাদি - অনন্ত উচ্চারণে
আপ্লুত শরীর মনের বাতাবরন,
সেই প্রথম তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে
মহা -ঘোষণা
" আমি বাংলা ভাষার একতারাতে প্রান হারাতে চাই "
_______________






এক ভাষা শহীদের ইচ্ছা
_______________
মা গো, আমায় আবার জন্ম দে,
এবার আর পদ্মা মেঘনার
তীরে নয়।
ওখানে তো অরা তোর কথা বলে-
হাসে - কাঁদে - গান গায়
ভাইজান তো 'মা' ডাকে আকাশ কাঁপায় ।

ইচ্ছে এবারে --

তোর শাঁখা পরা হাত ধরে
হাঁটি হাঁটি পা পা করি
শিলাবতি  - মহানন্দার পারে 
লুকোচুরি খেলি তোর সনে,
হোগলা আর কাশফুল বনে ।
_________






হৃদিপদ্ম জলে
________
আধুনিক ঝলমলে ভারতবর্ষের
কোনে কোনে - উচ্চারণে দেখি
ভাষার কলঙ্ক।
এখানে অসহ্য চোখ ঝলসানো আলোয়
মাঝে মাঝে শুনি
মায়েদের লক্ষ্য করে শব্দভেদী বাণ ।
আর কর্ণকুহর ঝলসে ওঠা মায়ের
তীব্র আর্তনাদ ।
শিশির ভেজা সবুজ সকালে শুনতে বড় সাধ হয় --
" আমার গরব আমার আশা
 আ মরি ------------- "
______






তোমার গায়ে চন্দন-গন্ধ
_______________
সেই রক্তরাঙ্গা ভোরে --
হৃদপদ্মে তোমার ছবি এঁকে
দর্পিত বীরেরা --
তাদের চোখে কিছু বর্ণমালা
নিষিদ্ধ বর্ণমালা ।
আয়ুষ্মান হয়ে মৃত্যুর দিনে অবিচল ,
অঙ্গীকারে মশগুল ।
বুলেটের গুলিতে বিদ্ধ হয়েও
ফোটাল অপরূপ রক্তগোলাপ-
সাগরে সাগরে -- নদীতে নদীতে --
সমতলের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে -
ছড়িয়ে দিল

বাংলা ভাষার চন্দন-গন্ধ ।