মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

শীলা বিশ্বাস



শীলা বিশ্বাস

শব্দপলটন

আমার ঠোঁট ছুঁয়ে যে রূপকথা এঁকেছ
সে রূপকথা আবহমানের
আমার চুল ছুঁয়ে যে নিশা মাখো
সে নিশা বিদিশা নগরী হয়ে
নগর কলকাতায় এসে মেশে
আমার অহল্যামন পাথর হৃদয় ভাঙে
শুধু তোমারই মায়াস্পর্শে
এক পেয়ালা জ্যোৎস্না পান করে বসে আছি
অলৌকিক রোদ্দুরের অপেক্ষায়
তোমার প্রবেশ পথের কালো মেঘ সরে যাচ্ছে
খেয়ালী হাওয়ায় নির্বিবাদে
অগনন ফোটনকনা লিখছে নির্মাণের ভাষা
বিরুদ্ধ স্রোতেও যতিচিহ্নহীন একটানা
শব্দ পলটন বিপুল বেগে ধেয়ে আসে
কথার সাম্রাজ্য বিস্তারে
এখনও বলছো তুমি বোঝোনি ......।।





নো ম্যানস ল্যান্ড

আমাদের মনে একটা নো ম্যানস ল্যান্ড আছে
নিজেই নিজেকে চালান করে দিই সুইচড অব মোডে
বুকের ভেতর সন্ত্রাস থেমে গেলে সৃজনশীলতার বিস্তার
স্থিতধী মন জেগে রয় মন-ঘাটায়
আলতো পরশ রাখে অপর মন
দূর থেকে মঙ্গল কামনায় প্রদীপ জ্বেলে
বিনীদ্র রাতে ঈশ্বরমাধ্যম হয় প্রেম
দ্বীপে আলো জ্বলে ওঠে
ঝরণার উড়ন্ত বাষ্পকনা ভিজিয়ে রাখে মন
অবগাহন শেষে প্রতীক্ষায় থাকে নো ম্যানস ল্যান্ড
জাত গেল রবে  রেখাপাত করে না কলঙ্ক ।।





স্বপ্নের জাহাজ

ফুল ছিল, ছিল না যে পথে কাঁটা
হারিয়েছি, পেয়েছিও তো কিছু, নিরুদ্দেশে হাঁটা
ছিল না ছলচাতুরী কৃত্রিমতার তাজ
সবই ছিল সুখ দুঃখের ভাঙাচোরা কোলাজ ।

দুঃখকুচি বাতাসে ভাসে, ভাসে ব্যর্থতার লাজ
ফুল না লেবু কি বোঝো বললে গন্ধরাজ ?
ভেঙে পড়ার দিনে জড়িয়েছিলো যে তোমাকে
দাঁড়ালে পরে ফেলেছে তোমায় সুদূর আস্তাকুঁড়ে।

আকাশছোঁয়া স্বপ্ন ছিল মাটিতে পা রেখে
চুরচুর স্বপ্নগুলো মারিয়ে গেছে হয়নি আওয়াজ ।

বলো কোন ঘাটে ভেড়াই আমার স্বপ্নের জাহাজ ?





জলের আলোড়নে

ব্যাঙেদের সঙ্গী খোঁজার ডাক জলের আলোড়নে
স্নিগ্ধ পৃথিবীর নিঃশ্বাসে রমনের ঘ্রাণ
মেঘে মেঘে আত্মরতির উচ্ছাস
কোনও চাঁদ কোরালের মত ঋজু নিঃসঙ্গতায়
মাধুকরী বন্যায় আলোকবর্ষ কমে নক্ষত্রে নক্ষত্রে
প্রত্যাশার ক্লোরফিল ছেনে রান্না করে নরম রোদ
ঋতুবতী মাটির ধানের চূড়া বেয়ে গড়িয়ে পড়ে বৃষ্টিফোঁটা
ঋতুস্নান সেরে রাধা কলসী ভরে যমুনার কালো তরল প্রেমে
অলৌকিক শস্যের আলোয় হরিণেরা নেচে ওঠে
কল্পনার হাঁস মৈথুন ভাঙে ব্যাথার গর্ভগৃহে
দেখো কৃষ্ণকলি মেঘের ছোঁয়ায় সবুজ গভীর অরণ্যে আরো ঘনীভূত
এখনি প্রকাশিত হবে শষ্যায়নের নতুন ছবি শিল্পীর পুরানো তুলিতে ।।





মুক্তি                             

শূন্যতা আর পূর্ণতার চূড়ান্ত বিন্দুগুলোর মধ্যে যে সরলরৈখিক দূরত্ব তারই মধ্যে কাল্পনিক অসংখ্য বিন্দু। ধূসর সময়ের বিষাদগ্রস্থ বিন্দু একটা একটা করে তারা খসা সময় চেয়ে নেয় তার মুক্তির জন্য। মুক্তি চায় পার্থিব কান্নার। অবয়ব  খোঁজে শূন্যতার। আঁধার থেকে পূর্ণতার উল্লাসের কাছকাছি কোনো বিন্দুতে হোঁচট খেয়ে পড়ে দিবাস্বপ্ন। চুরচুর ভাবনাগুলো মরীচিকাময়। হারানো পথে ফিরে যায় আবার। একটু পরেই শুরু হয় আনন্দিত সময়ের উল্লাস। কারণ শূন্যতা আঁকতে চেয়ে জ্বলে গেছে একালের কবি। শুধু ভাস্বর হয়ে আছে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তের জল দিয়ে লিখে যাওয়া শব্দ মুক্তি।