কচি রেজা
এক
হয়ত জল প্রবাহিত হচ্ছে
তখন চৌবাচ্চায় ! টিনের চালে সামান্য সাবান ঠোঁটের এক কাক
তীক্ষন শব্দে ঠুক ঠুক
করছে বর্তমান !
ঘড়ির নির্দেশে যে সন্ধ্যা
, গোপনে তাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে খিধে ! খড়
কেটে দিচ্ছে
আর সাম গান গাইছে কোনও
প্রতিপক্ষ রাখাল ! এভাবে সৃষ্টি হয়েছে
জগতের নাম !
কেন পাখির মৃত্যু আটকে
বেড়ে ওঠে শাখা ! পথের পাশেই কি কুকুরের শেষ অন্তিষ্ট্য !
বেদনা এক লেবেঞ্চুস !
একবার জন্মাতে চাই !
দুই
জন্মের মুহূর্তে শুনেছিলে
কুকুরের কান্না ! ভেবেছিলে , প্রগল্ভ কুকুরটা্
কাঁদছে বুঝি
ধনুষ্টংকার জ্বরে ! যখন
অমাবস্যার সঙ্কট গোটা জগতে, যখন ভাটা দেখা
যায়না
সমুদ্রে , তখন কোনও না কোনো কান্না এভাবে সতর্ক করে ! হয়ত মূর্তির এক
পাশের
মুখ খেয়ে নিচ্ছে দুরন্ত
কাল !
তবু আরেক পাশের কী
দুর্দান্ত আকাঙ্খা নিয়েই এই চরাচর ! এ জগতে শিশুর জন্ম দেয়
পিতার মেরুদন্ড !
তিন
স্টেশনের পর স্টেশন পার
হয়ে যাই , নামিনা কোথাও ! হয়ত ট্রেনে বিদায় দিয়েছিল কেউ !
হাত নেড়েছিল !
বিস্মৃতপ্রবণ আমি ভুলে গেছি তার হাতও ! প্রতিটি স্টেশনে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখি ,
যখন লাল ফুলগুলো দেখি
ফুলগুলো অপেক্ষা হয়ে যায় ! প্রতিটি স্টেশনে অচেনা কেউ হাতে
প্ল্যাকার্ড নিয়ে দুটো
নাম ও ছবি নিয়ে আমাকে খোঁজে ! কোনটা আমি ! স্কুলের মিসের সুরেলা
গলায় ভেসে আসত নীরজা !
একই সঙ্গে শুনতে পাই মায়ের ডাক ! শুনতে শুনতে নাম জানলায়
এসে দাঁড়ায় , দরজায় এসে আমার নীল শাড়ি ,হাতের সোনালি ব্যান্ডের ঘড়ি , একটি প্রবালের
আংটি খুঁজতে থাকে আঙুলে !
কবে যে আঙুলগুলো একে একে নেমে গেছে স্টশনে আমাকে
না জানিয়ে !
স্টেশন ছেড়ে যায় গাড়ি ,
নামিনা কোথাও আঙুল ছাড়া !
চার
যখন ঠাকুর্দা হব শাদা
লুঙ্গী আর বড়ো পকেটের ফতুয়া পরব ! বাঁকানো লাঠিত থাকবেই ! দুপুরে
বড়ো বৌমাকে বলব , নলেন গুড়ের সন্দেশ আর জিলাপি দিয়ে দুধ ভাত দিতে ! আর
নাতনিকে
চেঁচিয়ে বলব , আমিত রোজ রোজ স্কুলে যাইনি তাতে কী তোর ঠাকুর্দা হইনি !
পাঁচ
কচ্ছপের মত রোদের বিরুদ্ধে
পিঠ দিয়ে আমরা কুয়াশাকে ডাকছি শীতকাল ! শীত ঢূকে পড়েছে
মেষপালকের শরীরের বাদামি
উলে ! দাঁত বসাচ্ছে ঠোঁটের ধারে ! অনেক
জন্ম আগের
দৌড় স্মরন করে বৃদ্ধ
ঘোড়াটি সশব্দে নাক ঝেড়ে অপেক্ষা করছে ,
শীতের শতচ্ছিন্ন জোনাকিরা
যেখানে মরে পড়ে থাকে
সারারাত !
ছয়
যেখানে রেখে এসেছি এ
জন্মের চোখ , এ জন্মের সাঁতার ফেলে
এসেছি যে নদীতে সেই গ্রামের
পাখিরা উড়ে উড়ে আসছে
শহরের দিকে ! সামনের নাগকেশর গাছের পাতায় সন্ধ্যার ছায়া
পড়েছে লম্বা হয়ে যেন হাত
বাড়িয়ে ছিঁড়ে নেয়া যাবে ! এখন বোতলের ভেতর থেকে বিকেল দেখি !
আমি ডুবে যেতে যেতে
কুড়িয়ে নিচ্ছি অতলের চিঠি !
সাত
নিমপাতা ভেসে যাবার
মুহুর্তে ভাঙ্গার গল্পে জমা হতে থাকে সন্ধ্যার শব্দ ! এসেছি ত এসেছি অর্ধসত্য
গাছগুলো অনুসরন করে ! ভেঙে
গেলে কেন এত শব্দ করে চোখ ! উড়তে থাকা পাখিটিই কি তবে
শেষতম তরুন ! আর আমি
প্রদর্শন করে ফেলেছি যত অপূর্ব সঙ্গম ! এইযে গম্ভীর মৃত্যু একি দৈবজ্ঞের
নির্দেশ ! ঘুমিয়ে যাবার
পর কেউ যেন পুনর্বার এই কাচজীবন না পরায় আমাকে !
আট
মাত্র একটি আপেল নিচে পড়ে
গেলে একজন বিজ্ঞানি চিৎকার করে ওঠে, পেয়েছি
আবিষ্কার হয়
মাধ্যাকর্ষণসূত্র
আমিও বহুবার , গতকাল ও আজ শূন্য
তার ব্ল্যাকহোল দিয়ে গড়িয়ে পড়ে
তোমাকে পাঠাই ঝলমলে
মহাকর্ষ আর ঠোঁট জ্বলে উঠলে চোখ বন্ধ করি
কোনো এক আর্কিমিডিস বলে,
পেয়েছি
এটাই চুম্বনসূত্র
নয়
আর জন্মে বাঁশি হতে বলোনা
আমাকে
আর জন্মে রাক্ষস হবে
ভেতরটা
বৃষ্টি হবার কথা ছিলনা
অথচ ঋতু মুখস্থ করেছি কতদিন
বিকেলকে আগলে কুড়াতে গেছি
মাঠ
আমি বেদনার উপকারিতা নিয়ে
ভবিষ্যতে সমুদ্র পাড়ি
দেয়ার জন্য জাহাজের কথা ভাবছি
পুরানো হলেও মোরগফুল রঙের
পাল
এইসব স্বপ্ন আমাকে রক্তময়
ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দেয়
ব্যর্থ না হলে আয়নার
মমিতে কি দেখা যায় নিজের অসমান স্নান
দশ
সে ফিরেছে , মৃত্যু বহন করে চলেছিল যে দীর্ঘদিন
একদিন পালাতেও চেয়েছিল
খুলে যাওয়া অসাড় পালকে
ঢেকে একটি বীজদান
রেজারেকসনের পরে উদবাস্তু ব্যথায়
যেমন দেখতে হয় তাকে ,
হাঁটু বুকে
তুষার পড়ছে , একটু পরেই অনেক কিছুই তুষারে আবৃত হয়ে যাবে