রাবেয়া রাহীম
মধুর বিভ্রম
রাতের আকাশের অগুনিত তারকা রাশি সাথে মৃদু মন্দ
বাতাস
কখনো আমাকে টেনে নিয়ে যায় নির্জন কোন হাইওয়ে ধরে
অনেক দূরে
গাড়ীর গতি আরও বাড়িয়ে প্রায় উড়ে যাওয়ার মত করে;
------কখনো আবার ব্যাক ইয়ার্ডের
এককোণে
নিজের হাতে লাগানো বাহারি গোলাপের রূপ সৌন্দর্যে
বিভোর হয়ে পড়ি।।
আবার কখনো নিজ গৃহের প্রিয় কোণটিতে বসে
পিয়ানো বাজিয়ে গান গেয়ে যাই,
তখনই দূরে বহুদুরে জানলার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে
থাকা
একটি মানব-ছায়ার মতো দেখতে পাই
অনুভবে বুঝতে পারি সে রাত জেগে-জেগে আমারই গান
শুনছে,
আনমনে আমার দিকে চেয়েই থাকে--অন্যকিছুও হতে পারে,
দূর থেকে এমন কতো কিছুই যে মনে হয়...
আমি গেয়ে যাই
কখনো নিজের লেখা আবৃত্তি করি
সম্মোহনী আমি ভেসে যাই ওই বিশাল আকাশের তারার
ভেলায়।।
ভোরের সূর্যটা জাগতে থাকে একটু একটু করে
পূর্বাকাশটায় রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে
দুরের জানালায় শেষ জ্যোৎস্নাটুকুও ম্লান হয়ে
আসে ,
হয়তোবা ছায়াটি আমারই অপেক্ষায় মিলিয়ে যায়,
সেই সাথে আমিও।।
আবারও তেমনি করে আরেকটি রাতের জন্য নিজেকে তৈরি
করি
এভাবেই রাতের পর রাত ঘুমহীন কেটে যায় কিছু মধুর
বিভ্রমে;
আসলে পুরো জীবনটাই কেটে যাচ্ছে এভাবেই,
বুঝতে পারি কি!!
কি করে বিষন্ন হই
আবিষ্কারের মাতাল নেশায়
আংগুলের কড়ায় দিন গোনা সময়--
ত্রিশ দিন, নব্বই দিন
তিন শত পঁয়ষট্টি দিনও শেষ হয়...অপেক্ষার।
কুরুশ কাঁটায় বাতাসে স্বপ্ন বুনন
কর্ণের মতো জন্মের ভুলে
বুকের ভেতর অনাবিস্কৃত নীল হ্রদ --ভীষণ কৌতুহলে
উঁকি দেয়
নূহের প্লাবনে ডুবে যাওয়ার অভিপ্রায়ে,
কি করে বিষন্ন হই!!
অদেখা সখা
অচেনা অজানা সখা, হয়নি কভু দেখা
লয়ে মুগ্ধ প্রেমের রুপ, দুচোখ খুজে সদা ।।
বুকে নিয়ে শত সহস্র ব্যথা
দুটি প্রাণে জমে কত কথা ।।
যন্ত্রণার সাতকাহন ইচ্ছেমত অবগাহন
শুদ্ধ প্রেমিক রুপে মহিত করো তনু মন ।।
রাধার মতন বাঁধ ভেঙ্গে যায় সকল অভিমান,
হৃদয়ের দুকূল জুড়ে ওঠে শুধুই বান ।।
অসমাপ্ত কবিতা
তোমার নামে লেখা কবিতাটি অসমাপ্তই রয়ে যায়
পাথুরে জমাট বাঁধা অনুভুতিগুলো হররোজ চিতায় পুড়ে
রোজ চেষ্টা করি সমাপ্তি রেখা টানার
কক্ষচ্যুত নিঃসঙ্গতায় ঠায় দাঁড়িয়ে
কালো রাত্রীতে বিমূর্ত প্রসববেদনায় ওষ্ঠাগত
প্রাণ
তবুও সমাপ্ত হয়না কিছুতেই !!
তোমার নামে একটি নদিও আছে আমার
আরও আছে,
বৃক্ষরাজি দিয়ে বেষ্টিত একটি পাহাড়
প্রতিদিনকার না বলা কথাটি সঙ্গোপনে বুকে চেপে
আমার ভোর আমার সাঁঝে
নদীর তীরে বসে পাহাড় দেখি
শেষ কথা কবে হয়েছিল---
বর্ষবরণের রাতে?
নববর্ষের প্রাতে?
আনন্দে?
কষ্টে?
দেখা কি হয়েছিল তোমার সাথে---
মন মন্দিরে?
হৃদয়ের অতলে?
নিজের গভীরে?
তারপর--প্রতিদিন নব জন্মের পথ পরিক্রমায়
তোমাকে খুঁজে পাই আলোক বন্দী রুপে নিজের ভেতর!
বাতাসে ভেসে আসে তোমার কথা
মুগ্ধতায় বিবশ মন
হাজার সাজানো কথা ভুলে যাই বলতে তোমায়
অথচ কতকিছু ভেবে রাখি বলব বলে!
আমার না বলা কথাগুলো বুঝে নিও
জল টলমল নিরব চোখের ভাষায়।।
ছিলোনা কোথাও প্রেম
সুখ স্মৃতির দহনে গলে যায় সব সুখ,
অন্তহিন অভিমানে পুড়ছে আজ মন !
বাড়িয়েছিলাম হাত এক আকাশ নির্ভরতার লোভে,
পুরোটাই ছিল যে প্রেম তাঁর সাথে,
মধুর যামিনীর লোভে শরীর চাইলে,
মনটা পড়ে রইল অপাংক্তেয় হয়ে।।
নিঃশ্বাসের সাথে নিঃশ্বাস বিনিময়ে সঁপেছিলাম
একান্ত বিশ্বাসে
যে বলিষ্ঠ শরীরের রোমকূপে থাকে শুধু কামনার
উত্তেজনা
সুঠাম দেহের সৌরভ ফেটে বের হয় বীর্যের উৎকট গন্ধ
গতিময় নিঃশ্বাসে থাকে পশুর হিংস্রতা, উত্তপ্ত ঠোঁটে,স্পর্শে
শুধুমাত্র নিষ্ঠুর যৌনতার উল্লাস সেখানে কোথাও
প্রেম খুঁজে পাইনি--ছিল শুধু কপটতা--কামনার
উন্মাদনা!
প্রেম ছিল কি কোথাও, কোন খানে ? তোমার--আমার সাথে!
কাজলদিঘী চোখ, গোলাপি ঠোঁট, বুদ্ধিমতি নাক,উন্নত বুক,
মাত্রাবৃত্ত ছন্দ দেখে--একদিন তুমি রাবণ হলে
পুরোশক্তি দিয়ে হরণ করলে এই আমাকে;
অনুভুতিগুলো ভোঁতা খঞ্জর হয়ে বলে--ছিলনা কোথাও
প্রেম!!
উপলব্ধি
দ্বিধাগ্রস্ত মন চিনতে পারে কি নিজ সত্তা!
এইতো আছি বেশ ...হাট করে খোলা দরোজা
অচেনা বকুলের চেনা ঘ্রাণে বাতাস
আসা-যাওয়ার জানালার শার্শিতে বন্দী দৃষ্টি
দেহ নামক
শখের রঙিন খাঁচায় আটকে আছি--
শত শত
চাপা আর্তনাদ, লুকিয়ে রাখি বুকের জমিনে
বিদ্রোহী ক্ষণে-- মন হয়ে উঠে অচ্ছুৎ, অস্পৃশ্যা ভাগ্যের কাছে
নির্বাক এই আমি. মুক্তি চাই, আত্মার পরিশুদ্ধি চাই
!!
আলোকিত অতীতের দ্বার খুঁজে ফিরে পেতে
হারিয়েছি দৃষ্টিশক্তি---নিঃশেষ করেছি প্রাণ
শক্তি !
হৃদপিন্ড জুড়ে অস্তিত্বের স্পর্শ দুঃস্বপ্নের
বুদবুদ তুলে
হুমড়ি খেয়ে পড়ে অনিচ্ছার লেহনে !
দুঃখ দেখিনি ,কষ্ট সইনি,সুখও চিনিনি!
তুলনাও আসেনি....শুধু পাজর ভাঙ্গার শব্দ
রাত-দিন শিরায় শিরায় পায়চারি করে
জান্তব চিৎকার দিয়ে জানান দেয়
জন্মান্ধ এই আমি নিজেকেই কখনো দেখিনি
!!
অলিক আত্না
অবশেষে অপেক্ষার শূন্যতায় ভীষণ নিঃস্ব আমি
ক্ষয়ে যায় প্রাসাদ – কি করে থাকে প্রাণের মেলা!
তোমাকে ছুঁতে না পারার কষ্টে ভীড় করে বহুবছরের
ক্ষোভ,
বিফল হতে চায় সহস্রাব্দ প্রণয়--
মৃত্যুর আলিঙ্গনকেও প্রিয়তর মনে হয়।
প্রাপ্তি-প্রত্যাশা, পাওয়া-হারানোর হিসেব
কান্নার করুণ সুর, শুনতে পায় কি কেউ !
বুকের ভেতর অজস্র কবিতা জমে পার হয়ে যায় সময়
নিরব রাতের বুকে সোডিয়াম আলোতে এখনো জেগে থাকি
‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’ বারে বার কে যেন বলে যায় !!
ভিজে চুল বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল
নরম তোয়ালে জড়ানো আদুরে শরীর!
না স্বপ্ন নয়...সেই অলিক আত্না! বেলা- অবেলায়
দেখি যাকে !
স্বমেহন রতিসুখ...
দিন সন মাসের হিসাব থাকেনা,
শুধু মনে পড়ে রোজ, না রোজ নয় প্রতিক্ষণ প্রতিমুহূর্ত
দেখে যাই তার সম্পূর্ণ নগ্ন রুপ,
হ্যাঁ,অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে
দেখেছি সে মায়াময় রূপ !
কি দুর্লভ ! কি যন্ত্রনা আর শুখানুভূতীর সেই
রুপ!
দুচোখ ভরে দেখি তাকে, ভূমিকম্প হয় সমগ্র আমিতে
বলতে ইচ্ছে করে কত কথা, কিন্ত বলতে পারি কই !
তাঁর ভেতরেই যে আমি রই!
শুধু দেখে যাই তাকে, সে আমার সত্য আমার পবিত্রতা..
তাই পাপ বোধ ছিলনা--
দ্রুত বুকের ওঠানামায় লুকানো প্রতীক্ষার অবসান
কোথায় সেই অলিক আত্না! হায় অধরা হয়ে রয়!!
আহা কী নেশা
থরে থরে বই দিয়ে সাজানো বইয়ের তাক
ভাঁজে ভাঁজে যত্নে তুলে রাখা কাপড়ের আলমারি
পরিপাটি করে সাজানো গৃহের প্রতিটি কোন
ছবির ফ্রেম, আলমারীর কাঁচ সবই চক চকে
কখনো আপন মনে বলে যাই কখনো বা গুঞ্জরন
সংসারের যৌবনকাল পেরিয়ে-মহাকালের গোধূলি,
কামগন্ধী জ্যোৎস্না, চঞ্চল হাওয়া, মেঘমুক্ত আকাশ
অবিন্যস্ত চুল,চোখের কোনে জল
হাসি কান্নার এ জীবন দর্পন-
এক ফালি চাঁদে ঝুলে থাকে ক্ষীণ দ্যূতি
কিছু কি হারিয়ে ফেলেছি আমি ?
আমার নিঃসঙ্গ বেলার সুর- জোছনার গান
ধূপ শিখার মন্ত্রবানে কেঁপে ওঠা অবচেতন মনের
নিঃশব্দ পদচারন..
চক্রবুহ্যের ক্ষীণ আলোর মায়ায় আত্মার মিলন
হাতে হাত গভীর রাত আকন্ঠ আকর্ষণ
কে তুমি, অবিরত করে চলো এই- আশ্চর্য
খেলা !
আহা কী নেশা!!
দুঃস্বপ্ন
আত্মার অবাক আয়োজনে আন্দোলিত হই,
দেখা-অদেখায়--আমার ভেতর তুমি, তোমার ভেতর আমি,
তোমার সাথে আমার সম্পর্কের গভীরতম কারণ এই কি!
কাল রাতে দেখেছিলাম দুঃস্বপ্ন--ভীষণ এক
দুঃস্বপ্ন
পরনে সাদা থানের ধূতি, হাতে প্রজ্বলিত আগুনের শিখা
অনাবৃত শরীর---মিহি বৃষ্টিতে ভিজে ঠকঠক করে
কাঁপছ তুমি
কাঠের উপরে কাঠ তাঁর মাঝ খানে
আমার নিস্তেজ নিষ্প্রাণ হাল্কা শরীর
বৃষ্টির ছাটে চোখের পানি ধুয়ে তোমার দুটি চোখ
রক্ত জবার আকার ধারন করেছে ,
ঘ্রাণে আঘ্রাণ মন্ত্রবানে ডুবে যায়
সরল প্রাণ তার অধিক কিছুতো নয়।।
আবারও তুমি---পরনে সাদা সুতি পাঞ্জাবী, মাথায় টুপি
দাঁড়িয়ে আছো ঝোপ ঝাড় আগাছায় চারপাশ
আর আমি সাড়ে তিন হাত মাটির একটি গর্ত
আতর লোবানের গন্ধে মৌতাত
সাদা কাফনের ফাঁক গলে
আমার নিষ্প্রাণ মুখটি ঢেকে দিলে যতনে
মাটির উপর মাটি--তার উপর চাপা মাটি দিয়ে
আমি আর কিছুই দেখতে পেলাম না।
শুধু জানতে চাই---তুমি ভালো আছো তো ?
স্বপ্নের গুড়ো গুড়ো রঙ দিয়ে আকাশে ওঠে এখনো চাঁদ
হৃদমাঝারে তবু বাঁধি গভীর গোপন সংসার--
তোমার বোতাম খোলা শার্ট
আর আছে তার গভীরে বিশাল একটা আকাশ,
এই আশায় কি!!
ঝুমঝুম বৃষ্টি
অন্যরকম বর্ষায় সেই রাতে দেখেছিলাম তোমার চোখে ঘোর
ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন ধোঁয়াশায় ঢেউ ভেঙেছিল বুকের
জমিতে
ছুঁয়ে থাকা দিশেহারা তুমি ফিসফিসেয়ে বলে উঠলে--
তুমি আমি প্রকৃতি সাথে নিয়ে নৈঃশব্দ্য
মেঠোপথে ঘাস মাড়িয়ে যাবে ওই দূরের
বালুচরে-নিঝুম দ্বীপে
নাকি থেকে যাবে এই বুকের দুরুদুরু স্পন্দনে?
তবে এই নাও--আবক্ষ উদারতা
একেবারে অনাবৃত, উম্মুক্ত তোমার তরে--
সেই সময়টিতে বৃষ্টি নেমে এসেছিলো আমার উঠোনে
ঝম ঝম--হৃদয় জুড়ে শিহরণ!
প্রহেলিকা
আচ্ছাদন করেছিলো আমায়
ঝুমঝুম বৃষ্টি আমার ভেতরে বাহিরে
রিমঝিম-ঝিমঝিম-ঝমঝম
ভেসে যাচ্ছিলাম সেই বৃষ্টির তোরে,
তোলপাড়-আলোড়ন!
আহা! অসময়ের বৃষ্টি!
মেঘেদের গুড় গুড়, থেকে থেকে চমকানো বিজলী
তিরতিরিয়ে কাঁপছিলাম বাঁশ পাতা হয়ে
ঝড়ো হাওয়াও ছিলো বুকের জমিন জুড়ে!
অবিরাম! ভীষণ এলো মেলো!
আহা! কাঙ্ক্ষিত ঝড়!
ছিলাম দুজন একসাথে!