পৃথা রায় চৌধুরী
যবনিকা
অনেকখানি জুড়ে যে আছে,
সে বুঝি অনধিকার চর্চার রোদ।
কুলকুল এক নদী ঘাম মিশে যায়
নাক টানার ঘেন্নায়।
খুব বেশি হলে দমকা কাশি, হাঁপ... দমবন্ধ নাটক।
গতকালের চলে যাওয়া দেখা হয়নি
আজও বাসের অপেক্ষায়
গা ঘেঁষে দাঁড়াবার মুখোমুখি
দেওয়াল জুড়ে 'অসাধারণ গণনা'...
তফাৎ, ছ'পা হাজামজা।
তুমি চেয়ার হয়ে আসো, তকমা হও
তুমি তুমি হবে কবে?
অগোছালো ঘেমো জটের কিছু কান্না
শুষে নেয় আঙ্গুলতুলো
ফিরে যাওয়ার মুখে ফিরে
ঘরমুখো ঠেলে দাও... জীবন!
কোনো কাঠামোয়
সব ভুল বুনে দেবে ঠিক,
ধুয়ে মুছে দেবার দায়হীন।
খন্ডহর
প্রেম লিখছো... বিগত
বটের ঝুরি সাতপাক
ইটের পাঁজরে নতুন গন্ধ মিলিয়ে
অভ্যস্ত স্বেদ।
একে একে বছরের ওপর
কুমারী শরীরের নাব্যতা ঢালা
পিতা, তোমার গর্ভে বটের বীজ
প্রসবপীড়া দেখে কে?
খই ওড়া পথে
সুদূর দুই প্রান্তের ধ্বংস
মাতে সতেজ বিবর্ণতায়
...প্যালেট উপুড়।
চুপিচুপি মাঝরাতে মেশে
খসে আসা অভিমান...
উদ্ভাস
পরতে পরতে আলো জমে আছে
ভেসে থাকে ধানশীষ খুশি
আরো একবার দেওয়ালের খাঁজে খাঁজে
নামের অক্ষর পুঁতে ফেলি।
চল, সেই অন্ধগলির মুখে আজও
ছিলিমের ধোঁয়ায় লেখা হয় দেখ,
কোনোদিন নেশাবুঁদ হতে পারি নি...
সব বেঁচে থাকাই বর্তে যায়
নতুন রঙ চেনার অন্ধত্বে;
রক্ষার্থে বাড়ানো হাতের নেই থাকা... নির্ধারিত।
শীত তোমার...
চেনা সুরে দেওয়াল খানখান
হোক চিত্র বদল...
হোক, বারেবারে শীতের দোহাই
হোক, বারেবারে এভাবেই দেখতে চাই
জানো কি জানো না, কি বা আসে যায়?
সজাগ প্রহরা, যেভাবে ছুঁয়ে দিয়েছো
সেভাবেই সেজে থাকা
আগামীকাল আলবিদা,
বিদায় বলেও ছায়া ফেলে রাখো রক্ষার্থে
ফেরার পথ বিজন সে সেতু
এক পা দু পা সন্ধ্যে নামে ওই
... সাজানো হুল্লোড়ে বাতির
মায়া।
এখন কবিতা
তোমার তাতে কিই বা এসে যায়
যখন দেখো, সমস্ত শব্দেরা আমার শহর
ছেড়ে
তোমার সাথে ঢুকে পড়েছে
স্বেচ্ছায় বেছে নেওয়া তোমার একাবাড়ি।
কার মনে পড়ার কথা নয় প্রশ্নের উত্তরে
আমার নাম আসে নি তোমার মনে...
ধন্য ধন্য বর্ষা নামে বারুদ সমেত
যে গান শুনতে চেয়ে চলে গেছ
সে গান ঠোঁটে রাঙিয়ে বেড়াই
কানে পরে থাকি, তোমার প্রিয় 'নন্দর মা'
তোমার দিয়ে যাওয়া স্বরে;
এখন ছাতার নিচে হাঁটি
রোদ পেরিয়ে বৃষ্টি নেয়ে
তোমার থুতনিতে কটা সাদা গোনার অপেক্ষায়...
দিনক্ষণতারিখের গল্প,
তুমি এলে হবে।
পুনর্জন্ম
পায়রাডানা ভোরে ডুবে গেছে
অজস্র তিস্তা তোর্সা
ধুলো ওড়া কুয়াশায় সাফাই হয়ে যায় পূর্বজন্ম,
কিছু বেয়াদব বিচ্ছিন্ন লগ্ন
আঙ্গুল ছুঁয়ে স্পর্শহীন...
ওই বারান্দা থেকে তাকালে ধূসর পাতাখসা
সাদাকালোয় যত রং নিয়ে
ক্রমানুসারী আলোর দিশারী
বিদায় বলার ক্ষণ পেরিয়ে গেলে বোঝা গেল
খবর রেখে আসা হলো না।
শেষকৃত্য
বুকের কাছে বন্দুক রেখে দেখেছিলে
হাড় হিম মশাল জ্বলে থাকে পাতাল তারায়।
সাথে থাকার মাপকাঠি
যন্ত্রণার কোলে সুখনিদ্রা।
নিরুপায় খাঁখাঁ প্ল্যাটফর্মের নাম তুমি;
একচ্ছত্র মালিকানা দিয়েছ,
বিনিময়...
শেষযাত্রায় দিয়ে যাবো শামুকের দৃষ্টি।
জাদুঘরের সিঁড়ি ধরে নামার কালে
বাচ্চা ছেলের মুঠোয় পুরুষ হেসেছিল,
কিছুটা ছেলেবেলা তোমায় দিলাম।
এখন কঙ্কাল জড়ো করি,
হাতভরে চকমকির গুঁড়ো মেখে বুঝে ফেলি
দানা দানা আগুন জন্মে গ্রাস করবে
স্মৃতি নামের সপ্তম ঋতু।
জিয়নকাঠির মৃত্যু
একই দেওয়ালের দুটো পিঠ আলাদা করে, ভেবেছ মিটিয়ে দিলে কথার পাহাড়
মেটে দিকে জলের ঝাপটায় গলে গেছে হাড় পাঁজরাও
ভেতরের নরম আলোয় ডিজিটাল টাইলস বসানো পিঠে
আলতো হাত রেখে ভেবেছ, সমস্ত প্রাণ এখনো ধুকপুক করছে
ওই সর্বংসহা কাঠামোয়... কেন ভাবলে এমন বলো তো?
চোখের তলায় যেই ঢেউগুলো জাঁকিয়ে বসেছিলো,
হেসে কেঁদে এখন ঠিকানা পালটে পাগলাগারদে। উঁহু, পাগল না, পাগল না
হৃদরোগী মনোরোগীর মাঝামাঝি নাম ভাবো তো দেখি...
অবশ্য ভেবে না পেলেও দিকচক্রবালকে কেউ চিনে নিতে
ভুল করে না;
সুতরাং, তুমি পাশ, পাশ, কেবল পাশ।
বন্ধ দরজার এপারে ঢোকার জন্য ঝড়ের আকুল হুতাশ
রাত্রি দিন নির্বিশেষে বিষ ঢেলেছে হঠাৎ শুন্য হাতে
প্রার্থিত বন্যায় তোমার দুঃখঝুলি ভাসিয়ে
দিয়েছ...
এখন পাড় ভাঙ্গার গান কানে নিয়ে দেখো, শববাহী কাচের ঘেরাটোপে
সাইরেন বাজিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে সুন্দর ধ্বংসাবশেষ।
গ্যালারির প্রথম সারিতে বসে
বিষণ্ণতায় মোড়া আসন্ন শরৎ দেখে ঠিক বুঝে নেবে,
তোমায় সঞ্জীবনী দিয়েছিলাম।
জঞ্জাল রিসাইক্লিং
গরম ভাতের থালায়
নামতা মুখস্ত করে যাও
দেখ রোমাঞ্চকর ধোঁয়া
সব গিলে খেতে কেউ বলেনি
রেখে দাও তথ্যচিত্রে
মাড়টুকু আলাদা সরিয়ে বেঁচেছ জানি।
চাপা দিয়েছ অ্যাম্বিশানের মন্তাজ,
“গো অ্যাহেড” শব্দের অপভ্রংশ
দেওয়াল জুড়ে জানান দেয়,
সত্যিই মিথ্যের রিমিক্স
দরজার সামনে কুটোর পাহাড়
জিন্স-টপ বেয়ে নামে সাবেকি ত্রিকোণমিতি।
পাশের বাড়ির আধখোলা জানালায়
পরকীয়ার আভাস দেখে
মুচকি হেসে সেলাম করো মনে মনে,
বলো বেশ করেছ,
রীতি বৌদি - বিধান দা
ভাঙো, ভাঙো আর জিও।
ভোরের আড়ালে লুকোনো
গিজগিজে নোংরা ছারপোকা খোঁজো
তাদের রূপটান মাখিয়ে
ম্যাগাজিনের কাভার পেজ হবে
কোলাজে আলাদা আলাদা নাক-মুখ-চোখ
ছাপিয়ে দিয়ো নিজের মতো করে।
অবেশেষে এক নিঃশ্বাসে
পচুইয়ে চুমুক দিয়ে
ছাদ থেকে একতলায় নামো
নাড়ো কলকাঠি,
বারো এক্কে বারো
বারো দু’গুনে চব্বিশ... ।
ফের মুখোমুখি
না, চিনতে পারছি না তো,
কে তুমি?... না, না, আপনি?
"চিনবে না জানি,
তোমার সেই কলেজ কেটে 'শোলে' দেখা,
কতো বার দেখা, তবু কাঠের চেয়ারে পাশাপাশি...
ধান্নোর সেই ছুট... "জব তক হ্যায় জাঁ"
কেত্তন!"
কি আশ্চর্য, দেব! তুমি?
"বাঁকানো হ্যান্ডেল সাইকেল,
পেছনের সীটে কোমর আঁকড়ে তুমি,
কোপাই, খোয়াই, সোনাঝুরি...
ভুবনডাঙ্গায় ঝগড়া, সমুদ্দুর,
তোমার কোমর ছাপানো একরাশ মেঘ।"
এতোদিন পরে কোত্থেকে? মেঘটেঘ গুলি মারো, এখন সব...
"হ্যাঁ, সেই ভালো।
মারো গোলি... আমি সেখান থেকেই, যেখানে ছিলাম,
চাকরি করি, তবে মেঘ রেখে দিয়েছি নিজের
করেই।
মনে পড়ে, তোমার 'কুছ কুছ হোতা হ্যায়' দেখে পাগলামি,
চিৎকার করে শ্যামবাটির খালপারে বলা,
"তোর সবুজ খয়েরি চোখ শুধুই
আমার"
তোকে দেবার পর, ধূসরতা নিয়ে বাঁচি।"
খুব দেরী হয়ে যাচ্ছে, জানো?
ও অপেক্ষায়... অফিস পার্টি...
আবার দেখা হবে, কেমন?
আজ আসি।
"এসো।"
সলিটেয়ার পোড়ায় অনেক,
মেঘ, কোপাই, পালেদের ছেলে...
রোশনাই...।