মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নুরুন্নাহার শিরীন




নুরুন্নাহার শিরীন


এক।।

এত যে অমল পাঠ এত যে গীতল ...
এতটা জ্বলন্ত এতটা শীতল ... 
নাম তার হতে পারে প্রেম হতে পারে দেশ।
অথবা সে ছবিময় অধরা অশেষ।
ছমছমে সঙ্গ তার ঝমঝমে গাঁ উদাস -
ছুঁয়ে-ছুঁয়ে ঘুম আসে না, সে পঞ্চতপা শ্বাস।
সূর্যজাগা সৃষ্টিধুম বৃষ্টিধোয়া রঙ -
দৃষ্টিকাঁপা হৃদ্যতার পাঠশালা ঢং ঢং।

সে আলোজলে ভেসে আসা সবুজের গান -
সে আমার উড্ডীন স্বদেশ ছেলেবেলা আনচান।
সে যে ছবি কথা বলে ভাসায় সাম্পান -
সে আমার স্তব্ধতায় বাজায় মুক্তির গান।

ও আমার গান যাও যেখানে হৃদয় নত -
শোনো মুগ্ধতায় রক্তের বাজনা অন্তর্গত।
ও আমার গান যাও পাতায় থাকো -
মনভাঙা সব চাপেও হৃদয়জয়ী গন্ধে ডাকো।




দুই।।

তখন স্বপ্নান্ধ বলি 'কে বলেগো মাঠেমাঠে নেই আমি?
তখন শ্যামান্ধ বলি 'কে বলেগো বইমেলাতেও নেই আমি?
মাঠ জানে বইমেলা জানে সেথায় ছিলাম আমি।
ফেরদৌস জানে আকাশও জানে ওদের আমি।
আমরা মানেই প্রত্ন কেউ না জানুক স্মৃতি জানে।
আমরা মানেই প্রত্নবেলা জাহানারা জানে।

এখন জানি না বইমেলা ধূলিধূসর কেমন -
লোকজনও আমাকে চেনে না তেমন।
অথচ আমার হৃদয়ে আজও বইমেলা আছেতো তেমন।
অথচ আমার হৃদয়ে আজও বইমেলা আছেতো তেমন।




তিন।।

মাঝেমাঝে ঈর্ষারে বলি বিদ্বেষবিষ জ্বালাতে পারো কি?
বিকট তোমার কালো লুকাতে পারো কি?
এইখানে শত ঈর্ষাকাব্য তোমারই মতো -
ধেয়ে আসে চর্বিত রিরংসার মতো –
এইদেশে ভিনদেশে -
সংক্রামক ব্যাধির মতো জখমিত মেঘে ভেসে -
সইতে পারিনা তাই বিপর্যয়ের বেশে -
এদেশ-বিদেশ এইখানে-অইখানে বাঁচি কবিতারে ভালোবেসে।




চার।।

আমারই চারপাশে উড়ছে ঝাপসা দূর ... 
সে দূর যেন বা আমারই প্রিয় মনোহরপুর।
সে যেন উদাস দুপুরের সুর পাহাড়ে-পাহাড়ে
শিকড়ের জলগান? মন বলে হতে পারে
অথবা অদেখা ভোর? যা ছিলো মনের মাঝে
ফিরেছে হঠাৎ ঘনায়মান গভীর সাঁঝে।
তাহাকে পাঠাই মনেমনে স্বপ্নভর্তি চিরকুট -
হাজার চাপেও স্বপ্নাদ্য হয়নি লুট।
তাহাকে ওড়াই অশনির দিনে -
অসীম ভাবের ঘুড়ি একলা এনেছি কিনে।




পাঁচ।।

একলা একটি ছায়াতুর মুখ ... 
আমিতো জেনেছি সে আমাদের শ্যামল সুখ।
অক্লান্ত অক্ষরগুলো যতবার পড়ি ... 
ততবারই হৃদয়ে চিত্রকল্প গড়ি।

কত যে জীবন চেয়ে ঝুর্ঝুরে মর্মরধ্বনি শুনি -
হাড়ের গভীর হতে রক্তধ্বনি গুণি।
বৃক্ষমূলে মঞ্জুরিত হতে চেয়ে যে জল গিয়েছে ভেসে -
সে জলে আকাশতল আজওতো ওঠে হেসে।

আমি কি আমাতে তাই জ্বেলেছি শিকড়বাতি?
আমি কি ফেরাবো  হৃতলিপি আত্মঘাতি?




ছয়।।

এ কোনও এষণার গালগল্প নয়।
এ খুব এতিম খসে পড়া কথামালা ছায়াময়।
যখন যোজন ঘাটে কথারা ভেসেছে বলে -
ঘাটলাতলে জোছনা জ্বলে ... 
চোখের পলকে ঘটে জলজ ভাবের খেলা ...
হয়তো তখন কোথাও কারও সূর্যাস্তের বেলা।
নতুন ভোরের আলো আসার সময় -
তখনইতো প্রাচীন মেঘদূত পুনরায় কথা কয়।




সাত।।

আবার আমার ঘুরে দাঁড়াবার সাধ জাগে এই বাংলায়।
আবার আমার ফিরে দেখবার সাধ জাগে এই বাংলায়।
এমনি করেই শত শিহরিত শিখাময় শ্যামলিমা -
এমনি করেই হৃদয়ে বাজায় অমলিন অরুণিমা।
যা কিছু যোজন দূর সে হয় কাছের খুব -
যা কিছু যাতনাময় সেসব তখন চুপ।
*************

 ফেব্রুয়ারী। ২০১৭ সাল।
         ঢাকা। বাংলাদেশ।