শাশ্বতী সরকার
সম্পৃক্ত
কতটা সম্পৃক্ত হতে পারলে আর তৃষ্ণা জাগে না!
কতটা সম্পৃক্ত হতে পারলে আর প্রশ্ন জাগে না!
কতটা সম্পৃক্ত হতে পারলে আর আশা জাগে না!
কতটা সম্পৃক্ত হতে পারলে আর প্রেম জাগে না!
হে নৈঃশব্দ্য, বোঝাও আমাকে।
গহনচেতনামাঝে
নেশায় চুর হয়ে শোব পাহাড়ী পথের বাঁকে
পাশে অনন্ত খাদ আর চন্দ্রালোকিত রাত
গাও কবি গাও, বন্ধু আমার,
“কী ধ্বনি বাজে
গহনচেতনামাঝে!”
সুরে ডুব দিই আজ...
পরশপাথর
শতধা বিভক্ত মন শতদিকে ছুটে যেতে চায়
শত আহবানে।
ইচ্ছের ঘরেতে নিত্য দিয়ে তালা
চাবি তার ছুঁড়ে ফেলে দিই জলে।
রাত্রি নিঝুম হলে শুরু হয়
বৈশাখী ঝড় –
বিকট পাগলী এক আলুথালু খুঁজে চলে,
হারানো লুকোনো তার পরশপাথর।
এক কবিতার জন্ম
আমার ভ্যালেন্টাইন,
জানলার পাশে শুয়ে ওই বিবর্ণ বিশালতায়
যখন তোমাকে খুঁজছি,
কালো কাঁচ ভেদ করে তোমার উষ্ণ তেজ
ঠিকরে এসে পড়ল আমার শরীরে,
বসন সরিয়ে আদরে মাখলাম সারা অঙ্গে
সে রৌদ্রকণা চুঁইয়ে গেল আমার অভ্যন্তরেও
আর জন্ম নিল নতুন সোনালী এক কবিতা।
অভীপ্সা
দখিনার মলয় বাতাস নয়,
উষ্ণ মরুর বুকে চেরাপুঞ্জীর বৃষ্টি হতে পারি
যদি প্রেমিক হতে পার।
অবগুন্ঠিতা নয়, খাজুরাহোর কামিনী হতে পারি
যদি শিল্পী হতে পার।
ভালবাসার নদী নয়,
উত্তাল সমুদ্র হতে পারি
যদি দক্ষ নাবিক হতে পার।
ভেবে দেখ, চৌকাঠ পেরিয়ে অন্দরে যেতে
পারি
যদি ঈশ্বর হতে পার।
বেশ আছি
যদি বটগাছ ভেবে আঁকড়ে ধরি তোমাকে,
দাঁড়াতে পারবে তো?
যদি বন্যার মত আছড়ে পড়ি ওই বুকে,
সামলাতে পারবে তো?
যদি উন্মত্ত ক্রোধে ফেটে পড়ি,
চৌচির হয়ে যাবে না তো?
যদি আদরে আদরে ক্লান্ত করি,
উষ্ণায়নে গলে যাবে না তো?
ও পুরুষ, আমাকে ডেকো না ডেকো না
তার চেয়ে, তোমাদের ঠিক করে দেওয়া
ছোটোখাটো মাপটিতে
এই আমি বেশ আছি, বেশ আছি।
সমুদ্রের কাছে
সমুদ্রের কাছে আমি যাই নি এখনো।
সমুদ্র কি ফিরিয়ে দেবে
আমার উত্তাল শরীরে
তোমার স্পর্শখেলা, গোপন চুম্বন,
হারানো যত স্মৃতি বেদনা-মধুর!
অথবা নিয়ে যাবে কোন
অতল ঐশ্বর্যের দেশে,
আমাকে বসাবে কোন
রত্ন সিংহাসনে!
জানি দেবে না, দেবে না
বারবার ফিরে যাবে শুধু
দিয়ে মিথ্যে হাতছানি।
সমুদ্রের কাছে তাই আমি
যাই নি এখনও।
বিনির্মাণ
খুঁজে পেলাম অনন্তমাঝে ভালবাসার এক খনি
সপ্তরং-এর বিচ্ছুরণে চারদিক যার উদ্ভাসিত
দেখ, আমি তোমাকে ঘিরে কেমন
উদ্দাম নেচে চলেছি
এক-একটি রং-এর আলোয়, এক-একটি সুরঝঙ্কারে—
আর তোমার দেহ থেকে খসে পড়ছে জরা
তুমি হয়ে উঠছ অপরূপ রূপবান এক
জ্যোতির্ময় তেজস্বী পুরুষ
তোমার তেজ ঠিকরে এসে পড়ছে আমার তেজকুম্ভে
আর জন্ম নিচ্ছে অফুরন্ত ভালবাসাময় উজ্জ্বল
এক অখন্ড পৃথিবী।
নিভৃতনীলপদ্মরাগে
আমি তোমার সুখ হব
নিভৃতনীলপদ্মরাগে তোমার বুকের আদর হব।
আমি তোমার বৃষ্টিধারা
বৈশাখেরই দাবদাহে একটু সুখের পাগলপারা।
আমি তোমার গোপনতিয়াস
প্রতীক্ষাময় দিনগুলোতে চাতকচোখের ব্যর্থ-পিয়াস।
আমি তোমার একলা-রাতে সর্বনাশী
বুকের খাঁচা ভেঙ্গেচুরে দুরন্ত এক কালবোশেখি।।
সাধ
ছোটবেলা থেকেই শ্রী স্বপ্ন দেখত একটা কুঁড়েঘরের।
আলো-বাতাসযুক্ত খোলামেলা এক কুঁড়েঘর।
আর একটা নিজস্ব পাহাড়ী ঝর্ণা।
কুঁড়েঘরে থেকেও তার একটা গাড়ির বড়ো শখ ছিল,
দুরন্ত চালিয়ে যাতে পৌঁছে যেতে পারে যেকোনো
গন্তব্যে।
শ্রীর বড়ো সাধ তার প্রেমিকটি গান বাঁধে
আর ভাতও বেড়ে রাখে পরিপাটি।
শ্রীর বড়ো সাধ তার প্রেমিকটির ন্যুড আঁকতে আঁকতে
যখন ক্লান্ত তুলি খসে পড়ে যায় হাত থেকে,
তখন কোলে তুলে যত্নে শুইয়ে দিয়ে
কপালে চুম্বন আঁকে সে প্রেমিক।
শ্রীর বড় সাধ তার প্রেমিকের প্রতিটি বীজ থেকে
জন্ম নিক
চাঁদের আলোয় ধোওয়া হাজার হাজার দেবশিশু
যাদের চোখে সে এঁকে দেবে ভালবাসার বীজমন্ত্র।
শ্রীর বড় সাধ তাদের শিশুরা নক্ষত্র হয়ে উঠুক
নিজস্ব ভুবনে।
বিশাল অট্টালিকার এক কৃত্রিম ঠান্ডা ঘরে শুয়ে
শ্রী স্বপ্ন দেখে আলোবাতাসযুক্ত খোলামেলা এক
কুঁড়েঘরের।