মিতালী মুখোপাধ্যায়
অসহায়
পুরুষ বড় অসহায়
তাই সবকিছু চেয়ে নেয়
প্রেমিকার হাতদুটি নেড়েচেড়ে,
তারপর ঠোঁটে দুঃখী চোখে তাকায়
পুরুষ বড় অসহায়
কিছুদিন পর চেয়ে নেয় বিবাহের প্রস্তাব,
একা থাকা বড় কষ্টের
একটা ঘর-সন্তান
পুরুষ বড় অসহায়
সকালে উঠে হাসিমুখে চা চেয়ে নেয়
খবরের কাগজটা তো এখানেই ছিল,
বলতে পারো কোথায়
পুরুষ বড় অসহায়
স্নানঘরে থেকে গামছা কিম্বা লুঙ্গি
রুমাল সিগারেটের প্যাকেট বা ছাইদানি
ঘড়ি,জুতোর কালি
সব চেয়ে নেয়
যা তার দরকারি
পুরুষ বড় অসহায়
সন্ধ্যাবেলায় টিভির ঘর থেকে চেয়ে নেয়
ডায়াবিটিস মাপা যন্ত্র
আর ট্যাবলেট দুখানা,
জলের গ্লাসটা টেবিলের উপরেই রেখে,
হাল্কা করে
টেনে দিও কপাটখানা
…………………………………………………………
অর্ধেক জীবনের কথা
অর্ধেক জীবনের একটা গল্প থাকে
একটা ভিত দেওয়া দোতলা বাড়ির ঝুলন্ত বারান্দা
নীচে দু’পাল্লার ধাতব কপাটের একখানা
গ্যারেজ মর্যাদা
অর্ধেক জীবনের একটা গল্প থাকে
বারান্দায় বা ছাদেরটবে ফুলের সুবাস
নিজের দেহের সাথে নিজেকে তাল মেলানোর আপ্রাণ
প্রয়াস
অর্ধেক জীবনের এক গল্প থাকে
ছেলের চাকরির একখানা সাদা খাম
কিম্বা লাল কার্ড ছাপিয়ে কন্যাসম্প্রদান
অর্ধেক জীবনের একটা গল্প থাকে
নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখা
তুমি কি সুখী
না নিজেকেই এতদিন ধরে করেছ প্রতারণা
…………………………………………………………………
লজ্জায়
এখানে আমি একটুকরো ভারতবর্ষ
যেখানে জন্মেছে গান্ধীজীর অহিংসা
আর জাতপাত নামক এক ব্রাত্যকুয়াশার স্পর্শ
আছে যোগ, তার সাথে আরও আছে মানুষের
জনসমুদ্র
কেন ভেসে যায় মৃতদেহ গঙ্গায় ?
যেখানে মানুষ খাবার খুঁটে খায় ময়লার গাদা থেকে,
সেখানে দেবদেবীর পুজো আড়ম্বরে কি’করে হয় ?
ফুটপাতে প্রতিদিন কত জন্মায় ?
দলিতকে ছুঁলে কি এখনও স্নান করতে হয় ?
এইসব প্রশ্ন ছবি-ডকুম্যানটারি
সবকিছু, সব লুকিয়ে ফেলতে চাই
আমার প্রবাসের ড্রয়ারে,
কারণ কোন উত্তর নেই বলবার
আমার এখানে এক মূর্তি আছে,
একাএকা সেও,
জিভকাটে লজ্জায়।
………………………………………………………………………
লাশ
আলোক বর্ষের হিসাব নিকাশ আমার নেই যে জানা
দুধের পথের গ্রহতারা সব আছে মহাকাশের মায়া,
এসব আমায় ভাবায় না যে,তাড়া করে
ত্রাস
কামদুনি থেকে কাবুল কঙ্গো সর্বত্র দেখি আমি
মানবতাহীন সব লাশ!
আমি- তুমি যে খন্ডিত মানব - কয়েক খন্ড সার!
আলোক পথের যাত্রী মোরা
কি নির্মম! শূন্য অন্তঃসার!
কুন্তী কেঁদোনা
আর
তুমি যত কেঁদেছো,
তার চেয়েও বেশি, চোখ মুছেছে রবিবারের ভারত।
কুমাতা কুন্তীর কান্নার মূল্যে,দূরদর্শনের কোটি টাকার লক্ষ্মীলাভ।
কুমারী মায়ের অব্যক্ত ব্যথা, ব্যাভিচারের ফ্রেমে ভরে
উপভোগ করেছে পুরুষেরএকদল।
কর্ণমুখে রবিবাবুও প্রশ্ন রেখেছিল তোমায়,
কেন রেখে গেলে তুমি,অগৌরবে তাঁকে, মাতৃনেত্রহীন করে, মানহীন বংশহীন, অন্ধ অচেনা বিশ্বের কোলে ?
তোমার মাতৃত্বেরপেরেকে, হাতুড়ি বুলিয়েছে এই
পিতাসমাজ।
ঈশ্বরপুত্র কোলে অবিবাহিতা দেবী মা মেরীর সাষ্টাঙ্গে ক্যাথলিক সমাজ,
সেখানেও প্রতিবেশীর লাঞ্ছনার চোখ, জঠরে উঁকি দিয়েছে, কুমারীর ভ্রূণঈশ্বরকে।
ভারীগ্রন্থের ধর্মবাণীর পাতা, সর্বযুগে উড়ে যায়, নারীঅবিচারেরহাওয়ায়।
কুন্তীরা তাই আজ, সমাজের রেটিনায় মানবিক অধিকারের দাবি চায়।
…………………………………………………………………………………