মনোজ আচার্য
অন্তর্ঘাত
মুহুর্তেই বজ্রপাত!
কোথাও কালশিটে মুখ
কোথাও ভাঙ্গন পাঁজরের হাড়গোড় মট্ মট্!
বিশ্বাসের ইমারত নিমেষেই ধূলিসাৎ।
চাঁদের সাথে জ্যোৎস্নার অন্তর্ঘাত!
তবুও তালুবন্দি একমুষ্টি যথাসাধ্য!
পিঠে ছুরি তাই ঘায়েল হৃদপিন্ড!
ছুট্ ছুট্ নীরব মৃত্যুর গোল্লাছুট।
মাথার ভিতর দলাপাকানো জট্
আবোল তাবোল ভাবনা আর কম্পিত ঠোঁট!
আমি তখন হিংস্র দানব বা খুনে শয়তান!
আমার রাজ্য অন্ধকার!
সূর্যোদয়ের অলীক আশায়
প্রহর গোনা অঝোর ক্রন্দন!
শুকনো চোখ আর বুকে সুনামির আন্দোলন!
.
.
এখন অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই
ঢালে প্রতিরোধ, তলোয়ারে কাটাই
লড়াই!
লড়াই! ধুন্ধুমার লড়াই!
শিশুটার বুকে জমে বিষাদ বারুদ স্তূপ
সে আগামী এক ভবিষ্যতের বিস্ফোরণ!
ক্লান্ত লড়াই ঠাঁই ইতিহাসের শেষ অধ্যায়ে!
তোমার -আমার
তোমার যত প্রশ্নচিহ্ন
ছিন্নভিন্ন এই বুকের খাঁচায়।
আমার কাছে মোটা অভিধান
উত্তরেরা পাতায় পাতায়।
তোমার আছে সাহেবীয়ানা
শরীর জুড়ে আতর ঘ্রাণ।
আমার আছে চারটে দেওয়াল
তিনটে পেরেক একটা থাম।
তোমার জীবন রঙিন বড়
স্বপ্নগুলো আকাশ ছোঁয়ায়।
আমার স্বপ্ন ফুটপাতে সব
প্রতি পদেই হোঁচট খায়।
তোমার লক্ষ্য বিশাল মঞ্চ
হাজার চোখ তোমাকে চায়।
আমার লক্ষ্য রবীন্দ্রনাথ
একলা ভোরে খালি গলায়।
তোমার ইচ্ছে হাজার বাতি
লক্ষ টাকার মোটর গাড়ী।
আমার ইচ্ছে জ্যোৎস্না রাতে
আবছা আলোয় লাজুক বাড়ী।
তোমার সকাল তোমার বিকেল
সবটুকুই তো রং-এ ঠাসা।
আমার সকাল চায়ের সাথে
বিকেল মানেই আড্ডা খাসা।
তোমার পথ তুলোর মতো
আগামী তোমার সুখে মোড়া।
আমার পথ রাঙামাটির
আঁকা বাঁকা ধূলায় ভরা।
তোমার প্রেম অবুঝ বড়
কোন হিসেবে আমাকে চায়!
আমার প্রেম নিবিড় কালো
যা ছিল সব এই কবিতায়।
ছোঁয়াছুঁয়ি
যন্ত্রনাগুলো কফিন বন্দী
বুকের খাঁচায় আবদ্ধ যাবজ্জীবন।
পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চে তোমাদের অট্টহাসির স্রোত
সীমান্তে কাঁপছে আকাশ, বাতাস, নদী নদ,
গাছপালা, ধূলিকণা, মেঠো পথ!
আর কাঁপছে ওদের সমস্ত শরীর, স্নায়ুকোষ,
শিরা উপশিরা, ওদের অস্তিত্ব, ভাবনা, চেতনা।
সীমান্তে সেদিন যুদ্ধ!
সৈনিকদের মাটি কামড়ে হামাগুড়ি
ক্লান্তির ঘাম তৃষ্ণার্ত মাটি চুষে নেয় অবিরাম।
কালো ধোঁয়ায় আঁধার নেমে আসে অকালেই
সীমান্তে সূর্যোদয় হয় না আর!
গোলা গুলির বিভৎস শব্দে
ঢাকা পড়ে যায় সদ্যজাতের কান্না!
তাই যন্ত্রনাগুলো কফিন বন্দী
আজও বুকের খাঁচায়!
শব্দ থেমেছে আজ....
মৃত্যুর গায়ে আঁচড় কেটে সৈনিক ফেরে ঘরে
শরীর মাপা কাঠের বাক্সে তিনরঙ্গা চাদর মুড়ে!
ওর নিথর দেহ অভেদ্য প্রাচীর গড়েছিল কাল
সীমান্তে।
ঠিক তখনই একটা রক্তাভ উত্তপ্ত সীসা ওর বুক
ছুঁয়েছিল..
যখন তুমি ঝলমলে রেঁস্তোরায় আলো আঁধারের ফাঁকে
তোমার প্রেমিকার উষ্ণ ঠোঁট ছুঁয়েছিলে...
ওর বুকেও বুলেটের পাশে একটা প্রেম ছিল।
নিরুদ্দেশে
আজ আকাশ ছুঁয়ে দেখলাম
পৃথিবীর কানায় কানায় দিগন্তবলয়
যদি সীমান্তে কোনও দহন ধোঁয়া পাও
একটা কুন্ডলীতে আমার গন্ধ পাবে।
আমার সকল স্বত্ত্বাগুলো অগ্নিদগ্ধ হল
চিরন্তনী ভাবনারা সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে
আমার আয়ত্তের বহু দূরের প্রান্তরে।
ইতিহাস রচিত হয়না এখন
কালের প্রভাবে ধূলাময় ধূসর গল্প হবে হয়তো।
আমি প্রাক্তন হতে চলেছি এবার ...
তবুও ছন্নছাড়া মস্তিস্কের স্নায়ুতন্ত্রের বিকল্প
খুঁজিনি কখনও।
তোমার হৃদপিন্ডের বায়বীয় আস্তরণে
আজ আমার অস্তিত্ব কোই?
তোমার অনীহাময় ইঙ্গিতে কখন যেন হারিয়ে গেছি
পৃথিবীর এক অচেনা আজানা ভৌগলিক নিরুদ্দেশে!
রোজ ভাবি
তোমার আমার রঙিন জগতের মাইটোসিসে
মাঝরাতে দুটো ক্ষীণ আলোর আবেশে
তোমার উত্তরে আমার অনেক বিপরীতে
দুটো মানুষ দুটো অপত্য পৃথিবীতে।
শুভেচ্ছার বিনিময়ে আলো নেভে
ঘন অন্ধকারে নিঃশব্দ আরেকটা রাতে কাটে
হঠাৎ ব্যাস্ত দিনের সুর বাজে বালিশের নীচে
আবার তোমার আমার একদিন বয়স বাড়ে।
ভোর দেখেছিলাম কে জানে শেষ কবে?
তুমি ছিলে আঁধারমাখা আলো নিতে
কয়েক বছরের আগে আমার ব্যালকনিতে।
প্রথম ফোটন ছুঁতাম আমি তোমার গানের সুরে
আজ সেসব ধূলাময় পান্ডুলিপিতে।
সেদিন নিরক্ষরেখায় হেঁটে যেতাম একসাথে
আজ তুমি সুমেরু বৃত্তে আমি কুমেরুতে।
রোজ ভাবি প্রতিটি সকাল হোক তোমার বুকে
নীরব থাক প্রতিটি মুঠোযন্ত্র আবার
একটা বিছানায় একটাই পৃথিবী হোক আঁধার
নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে যাক দুটো গভীর নিঃশ্বাসে
আগামী সূর্য উঠুক আমাদের দুই পাশে অনায়াসে।