নাসির ওয়াদেন
ভাষা তরী
একটি ভাষা ছড়িয়ে দিল রক্ত নদী এক প্লাবন
উঠল ভরে শিউলি ফুলে ঘাসের ছন্দে লাল উঠোন
রক্তে রাঙা মটরশুঁটি রক্তে ভেজা পাখির তান
আনল ডেকে দেশের বুকে বাংলা মায়ের জীবন গান ।
ভাইয়ের বুকের তাজা খুনের আর কতকাল বইবি ঋণ
জাত ধর্ম চুলোয় দিয়ে আনব আবার সেই সুদিন
সালাম-বরকত রফিক জব্বার মরেও ওরা আজ অমর
ভাইয়ের তাজা খুনের স্রোতে শপথ নেবে নৌ- বহর
রক্ত নদী শুকোয় নাকো, ভাষার নৌকা উজান বয়
হাত বেঁধে আজ শপথ নেবো, অমর একুশ অমর রয় ।
~~~~~
স্বপ্নের পেছনে দৌড়াচ্ছি
আলো ঝলমলে এক গাঢ় অন্ধকার
স্বর্গের বাগান থেকে চুরি করে এনে
জ্ঞান বৃক্ষের ফল রোপণ করি মাটিতে
রোদ ডানা মেলে ওড়ে স্বপ্নের ভেতর
শিল্প-নদীর স্রোতে অসংবৃত শব্দগুলো
শিল্পের বিনিময়ে বুকের নিশানা হয়ে ---
আমি এখন এক অদ্ভূত মৃত্যুর মধ্যে হাঁটছি
সত্যের আলো জীবনের গাছসমূহ
সজীব করে তুলছে অক্ষরের ক্ষেতে
স্বপ্নের পেছনে পেছনে দৌড়ুচ্ছে জীবন ।।
~~~~~~
স্বগতোক্তি
আমাকে শোনাও সহজ সরল
কদাকার মানুষের শব্দ-ধ্বনি
কথাদের ছিন্ন চিত্রকল্প
বাঁশরীর ছিদ্র সুরের সংলাপ
আগুন জ্বেলেছে বৃষ্টি জল
বরফের টুকরো টুকরো ঘষে
রোদের তাপ পোড়াচ্ছে
পৃথিবীর ঘৃণা আর অহংকারগুলো --
আমাকে শোনাও মানুষের পাপকথা
যে পাপে পুড়ছে তোমাদের মন
এবার ধুয়ে মুছে ফেলার এসেছে সময়
কালিমাগুলি গিলছে ব্রাত্য অন্ধকার ।।
~~~~~~
মেরুকরণ
গ্রাম থেকে শহরে যাওয়ার পথে
মৌনতা শরীরে বদান্যতা বাড়াচ্ছে
বাতাসের ফোটা-জল রঙিন কাচের ওপর
ভালবাসার তুলি শব্দকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আঁকে
গাঁয়ের বেহায়া আবদার এসে শহরের রাজপথে
জলকেলি খেলছে সোহাগী আলোর স্রোতে
শহরের সংঘাতগুলি বাড়ির উঠোনের সিঁড়িতে
একটু জিরিয়ে নিতে চাই গুড় জল খেয়ে --
সুখের বাতাস তুলো ভিজিয়ে পদাবলী গেয়ে
ছোঁয়াচে দুঃখের সাথে এঁয়োতির ছেঁড়া বালিশে ।
~~~~~
ঐতিহাসিক সত্যতা
সোহাগের কাঠে ঘুণ লাগে
পশ্চিম দিগন্তে সূর্য আপ্লুত
বাতাস বর সেজে মেঘের বাড়িতে
পা ধুচ্ছে জোছনার জলে---
অসংযমের লোনতা জলে
হাবুডুবু খাচ্ছে বদান্যতা ডিঙি
অনুভূতির সান্ধ্য তীরে হাঁপিয়ে ওঠে
মধ্যযুগীয় অশ্বারোহী
চেতনার পাঠ্যসূচিতে ঝরছে
অসহিষ্ণুতা ধারাপাত
ক্রমে ক্রমে ভাঙছে মোহ, মাৎসর্য্য
বন-জোৎস্নার ফুল বিছিয়ে
শরীর মাপছে তর্করা
পানিপথের যুদ্ধ চাটছে
নিহত অশ্ব খুরের ধুলো ।
~~~~~~~~~~~