মনিকা আহমেদ
শীত রাতের গহনে
চলো ধাই শূন্যচরাচরে___পালাই
ডাকছে ঐ হলুদ শালবন;
কোথাও বাজছে সুরেলা শানাই।
পাতার ঘ্রাণ নাকে এসে, ডানা ঝাপটালো
সময় কি পাল্টালো?
মেঘ মেদুর আকাশ হঠাৎ -ই চমকালো
বুক পকেটে রাখা খামে কষ্ট জমা ছিল
হঠাৎ আসা দমকা বাতাস সব উড়িয়ে নিল
কেন তোমার গহন রাতের স্বপ্ন গুলো
এই চোখেতেই এলো (?)
আমার
করুন শূন্যতাবোধ- তীব্রতর হলো
মাঘের
গাঢ় রাত্রিবেলা হচ্ছি এলোমেলো ।
★
অলিখিত বোঝাপড়া
আমায় বুঝতেই পেরুল তোমার সমস্ত যৌবন
বুঝলাম যা বুঝেছ তা নিতান্তই
কম
পুরো
জীবন পেরুনোর পর বোলো,
বুঝতে-যুযতেই,পুরোটা জীবন গেল!
বলবো তখন,এখনো কি বুঝতে পেরেছো,
বোঝাপড়াটা আসলে
জল কাদার মতো সযতনে মূর্তিগড়ার মতো।
নিজেকে যে,অতল জলে লুকোয়
তাকে পাখির মতন উড়িয়ে দেয়া ভালো ।।
এক জীবনে বোঝাপড়াটা
না
করলেই নয়?
তোমার কিসের এত ভয়;
নারী যে নদীর মতনই হয়।।
এ কাব্য চাঁদের সাথে তুমুল প্রণয়ের।
চাঁদেরও কলঙ্ক আছে সে কে না জানে!
তবু চাঁদের সাথেই প্রেম জমে যায়_কেন যে!!
________________________________
নর্তিত নীল চন্দ্রিকা
চাঁদ যেন বাঁধন খুলে নাচলো দুলে, এলোচুলে
হেঁয়ালী খেলায় মত্ত আলো, উছলে পড়ে প্রণয়দুলে;
আধাঁর কেঁটে
জ্যোৎস্নার রং পড়ল গলে
মুগ্ধ চোখে, ভালোবাসার রণাঙ্গনে।
অবেলায় ঘুমিয়েছিলাম স্বপ্নঘোরে-
পরিপ্লুত চাঁদকে দেখে প্রণয় জাগে
মনের কোণে- হরিণ বনে;
ডাকলে আমায় ব্যাকুল স্বরে, তাই তো এলাম
পুড়তে এলাম, চাঁদের খোলে ।
আজ ভাসবো দুজন -দুলবো দুজন- ময়ুরকন্ঠী রাত
নাই-বা ডুবুক পূর্ণচন্দ্র জ্যোৎস্না ভাসী চাঁদ।
লাজুক আলো নীল দরিয়ায় ভাসুক কালো জলে_
থাকুক তোমার হাত কিছুটা আমার হাতের পরে ।
________________________________
অপ্রয়োজনেও কথাবলি
অপ্রয়োজনেও কথা বলি নিজের
সাথে
আকাশের জমাট মেঘের সাথে
কচি ঘাস-মাটির সাথে।
দু’টি ঘুমন্ত শিশুর সাথে
ভেঙে পড়া ব্রিজের সাথে
রাস্তার নুলো ভিখেরির সাথে
হারিয়ে যাওয়া প্রিয়বন্ধুর
অদৃশ্য মুখটির সাথেও
কখনও গীতবিতান পড়তে পড়তেই
কথা বলে উঠি, ও রবিঠাকুর
তিঁনি শুনুন বা না শুনুন
অপ্রয়োজনেই বলি, ভালোবাসি ভালোবাসি...
কথা বলি, আমার ছায়া অথবা অপছায়ার সাথে;
যাকে খুব বেশি
ভালোবেসেছিলাম
তার আঁকা অন্তর্লীন
স্থিরচিত্র আর অগণিত চিঠিগুলোর সাথে...
কথা বলি,প্রিয় কবির সদ্য প্রকাশিত কবিতার বইটি ছুঁয়ে;
আয়নার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা
মুখটির সাথে।
যে তুমি আমায় না-দেখে
অবহেলায় ওপাশে ফিরে তাকাও;
সেই তোমার সাথেও......
তৃতীয় জন্ম
আমি অবগাহন করছিলাম, তন্ময়তার গভীর সমুদ্রে, আকণ্ঠ।এর বাইরে- পৃথিবীর কিছুই চিনিনি তখনো!
একদিন, ঘন আঁধারে ঢেকে গেল আকাশ। হঠাৎ হাজার হাজার তরঙ্গ,কম্পনে কম্পনে ধেয়ে এলো প্রচন্ড
ঘূর্ণঝড়!আমি গভীর সমুদ্রে হারিয়ে যাচ্ছিলাম- সমস্ত অস্থিত্ব নিয়ে।তারপর, হঠাৎ চোখ রাখলাম
পৃথিবীর দুরবীনে।আকাশ-পৃথিবী,এক বিশাল প্রগতির সিঁড়ি
আমার সামনে মেলে ধরেছে। আমি ধীরেধীরে এগুলাম।
তীব্র ব্যথাতুর কণ্ঠে বলেছিলাম, চিনতে পারছো আমায়?
আমি সেই মুনুপাখি। যে দেবদূত এর কাছে একটা
বৃষ্টির রাত্রি প্রার্থনা করেছিলো একদিন!দেবদূত বিস্ময়ে বলেছিলেন, শুধু একটি বৃষ্টির রাত্রিতে ভিজতে চাও তুমি? কেন হে!আমি বলেছিলাম- এ আমার পৃথিবীর অনিন্দ্য সুন্দর এক
স্বপ্ন।তুমুল বৃষ্টিতে কেবলি সিক্ত স্নানের স্বপ্ন বুনি, স্বপ্ন আঁকি____ দিন- মাস -বছর -যুগ-
শতাব্দী- একা একা----
বৃষ্টির ছোঁয়ায় জেগে উঠি, ছোট্ট চারাগাছ যেমন মাটিফুঁড়ে আকাশের দিকে তাকায়।ভাবি,অদৃশ্য কেউ গভীর ভালোবাসায় আমাকে ছুঁয়ে দেবে!অদ্ভুত এক
মানুষের কান্নার শব্দ শুনতে পাই। বাতাসে কান রেখে
বুক হিম করা হু হু কান্নার শব্দ শুনি।
সেই আমায় চিনতে পারছো রাত্রি সিন্ধু পৃথিবী?হুম সে চিনেছে।তার উষ্ণতাপে জুড়িয়ে গেলো চোখ আমার।আমি গভীর
আনন্দে, যেন এক নক্ষত্রের পাড়ে, ডুবন্ত সূর্যদেবের নীলিমার তলে হারিয়ে গেলাম! আহা--
মনে মনে সমুদ্র কে বললাম, 'পরাজিত হতে ভালোবাসি তার অর্থ এই নয়, জয়ের যোগ্যতা নেই!'
আর নক্ষত্রের নীলিমাপাড়ের নিঝুম দীপের ঘুমঘোর ভাঙ্গতেই, দেখি- সূর্যদেবের এতটা কাছে এসে গেছি যে, তার ক্ষরতাপে ঝলসে যাচ্ছে
আমার সমস্ত সত্ত্বা!
বেঁচে থাকার তীব্র আকর্ষনে, দ্বিতীয়বার সিঁড়ি বেয়ে এ আমি কোথায় এলাম? সূর্যের বিছানায় শুয়ে থাকা কি যায়? সূর্যের স্পর্ধা আছে, আমাকে পোড়াতে পারে!
মনে মনে সূর্যকেও বলেছি_
'পুড়ে যেতে ভালোলাগে, তার অর্থ এই নয়, অন্যকে পোড়াতে পারিনা’।।
*