ফিরোজ আহমেদ
নরকের হুরী
=====================
নরকের হুরীদের গায়ের রঙ কিছুটা কালো
ভালোবেসেছিলো তারা কাঠ কয়লার দিন
ভিনদেশের পুরুষ এসে একদিন তাদের নদীতে
সীসা ঢেলে দিয়েছিলো ধর্মের নামে।
কামে ক্লান্ত হলে চাবুক কথা বলতো, স্বরবৃত্ত ছন্দ
দ্বন্দ্ব ছিলো শুধু দুর্বল আর শক্তি ভেদে
ঈশ্বর-আইনে
মাইনে ছিলো ভাতের সাথে চোখের সামনে মাংসদণ্ড এক
দ্যাখ ঈশ্বর নরকে তাদের ভালোই কাটছে দিন।
নরকের কবিতার দোকানে তারা আসে, মাঝে মাঝে দেখা হয়
পৃথিবীর জন্যে তাদের চোখে কোনো প্রেম দেখিনি
কোনোদিন।
২৬/১২/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।
ফুল
==========
একটি সুগন্ধী ফুলের বেষ্টনে থাকে একাধিক ভ্রমরের
নাম
কিছু তীব্রগন্ধী ফুলের সুবাস দূর থেকেই লাগে
ভালো
কিছু মেঠোফুল হেঁটে যেতে যেতে ভালো লাগে
দানীর ফুলেরা ধ্যান ভঙ্গ করে বেঁচে থাকে।
জ্ঞানীদের কোনো দানী থাকতে নেই ঘরে
মাঝে মাঝে দলছুট পাখি হও, উল্লাসে উড়ে
ডানার স্বাধীনতা হারালে মরে যাওয়া ভালো খাঁচার
বেষ্টনে
ফুলেরা ভালো থাকুক গাছের ডালে,পাতায় লেখা ভ্রমরের নাম।
১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭
ঢাকা, বাংলাদেশ।
মহাপথ
================
নন্দনের চাষে কোনো নগ্নতা থাকে না
নগ্নতা থাকে শুধু গ্রাম্যতার অমসৃণ ভাবনা-ঘরে।
নদী পার হতে হলে নদীর কাছেই যেতে হয়
কামনার বিষ গিলে গিলে একদিন জীবন এগিয়ে যায়।
তারপর মানুষেরা মানবের বাড়ি যায় ধীর পায়ে হেঁটে
সেখানে দুঃখরা দুঃখ নয়
সেখানে সুখেরা সুখ নয়
সেখানে আপন বলে কিছু নেই
নেই পর বলেও কিছু আর,
কী এক নরম বাতাস বয়ে যায় নদীকে ভালোবেসে।
অথচ নদী পারে কোনো ঘর নেই গোলপাতার ছাউনির
আছে কিছু ঝড়ের বয়ান
আছে আকাশের সিঁড়ি, প্যাঁচানো ভীষণ
আছে মায়ের মতো পাতাদের ছায়া, বাবার মতো কোনো বৃক্ষ নেই।
জাদুমন্ত্রটা দুরূহ ভীষণ বার বার ভুলে যাই
শুধু নিজের নামটা মনে রেখেছি কেন, জানি না
জানি না এখনো ঠিক ঠিক নিজের পরিচয়,
অতিক্রান্ত পথের কোনো সীমানা থাকে না
যেমন মহাকাশ বিছায়ে রয়েছে স্তরে স্তরে।
সুখের দোকান
============================
প্রতিটি সুখের জন্য রয়েছে পৃথক দোকান
ঈশ্বর যে দোকানে যায়
মাঝে মাঝে আমিও যাই সে-দোকানে,কিন্তু
আমি যেসব দোকানে যাই
সেখানে কোনও ঈশ্বর থাকে না।
পথে যেতে যেতে অগণিত দোকান
আমরা সুখ কিনতে এদিকে সেদিকে দৌড়ে বেড়াই
অথচ প্রতিটি সুখ আড়াই হাত দূরেই থেকে যায়।
২৮/১২/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।
জোকার
==============
সার্কাসের জোকার, এবার রঙ মুছে ফেলো
বেদনাহত ফুলেরা দাঁড়িয়ে
পালকের নরম ছোঁয়া ভুলে সূর্যের কাছে যাও
শীতান্তের বৃক্ষরা পরবে পাতার কামিজ,
জীবনের কোনও মেঘ-রঙ কুয়াশা থাকতে নেই।
তারপর একদিন রূপালি ইলিশ যাবে নীল তিমিদের ঘরে
জলজ প্রাণীরা কখন স্নান সারে, জানা যাবে ভেতর কাহনে।
১২/১২/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।
এসো পাঠ করো
=========================
এসো, পাঠ করো ভাঁড়ের দলিল
মগ্ন হও, ভেতরের কিছুই তোমার নয়
স্তরে স্তরে সাজানো চারুমিথ্যার বনেদী ভাঁড়ার
দর্শনে
জমা পড়ে আছে গবাধিপ্রাণীর মগজের ফসিল।
সবচেয়ে পরিণত বাক্যটি হত্যা হলে
টিকে থাকে পৃথিবীতে মহান অর্বাচীন
প্রতি সন্ধ্যায় ঘাস খেয়ে ঘরে ফিরি নতমুখে
মাথায় তুলে রাখি গোড়ালিতে জমা হওয়া ব্যথার কথন ।
দিনে দিনে জমে ওঠে কালো পাহাড়ের চাঁই
মানচিত্র এগিয়ে যায়, মানুষ কোথাও নাই।
১২/১২/২০১৬
ঢাকা, বাংলাদেশ।
প্রস্তাব
==========
চুম্বন ঝুলিয়ে রেখো না ঠোঁটের ঝুলবারান্দায়
নদীকে দিও না হিমবাহি বাতাসের বাঁধ
আমাকেই প্রস্তাব রাখো, আসুক অবগাহনের দিন।
দিন চলে যায় দিনে দিনে
শরীর লিখে রাখে তার ঝরা-নদীদের নাম
আমাকেই প্রস্তাব করো, সাঁতারের নদী হও তুমি।
আমি এক জন্মান্ধ কৃষক
লাঙলের বাট ধরে দাঁড়িয়ে আছি বহুকাল
আমাকেই প্রস্তাব করো, উর্বর ভূমি-- কর্ষণে মাতাল হবো একবার।
নকশীকাঁথা
=========================
একজন মানুষ বিকেলের সূর্যের মতো হেঁটে যাচ্ছে
তার
হাতে ফসলী শস্যক্ষেত্র পাণ্ডুলিপির মতো
তার মাথায় ভর করে আছে ঈশ্বর ও ইবলিস
তার কাঁধে মানুষের সামাজিক বোঝা
তার সাথে আজ কিছুদূর হাঁটা যাক।
লোকটি হেঁটে যাচ্ছে
তার চোখে জমাট কৃষ্ণগহ্বর
তার বুকের পাশে নকশীকাঁথার সেলাই
পেটের কাছের চুল্লিটার আগুন নেভে না
চুল্লিটা জ্বলে উঠলে অন্যরা ঘুমায়,
তবু কোমরের নিচে বয়ে চলে এক নদী।
লোকটি সস্তাদরে নিজেকে বেচে দিয়ে
কিনে নেয় অশিল্প ঘাসের মাঠ
কিনে নেয় সস্তা মাছ আর দামী কনডম
কিনে নেয় রণজিৎ দাশের কবিতার বই
কিনে নেয় স্বপ্ন আঁকার দারুণ তুলি।
কোথাও মিথ্যা সেলাই নেই তার গায়ে জড়ানো
নকশীকাঁথায়।
১৮//১/২০১৭
ঢাকা, বাংলাদেশ।