বিকাশ চন্দ
ঠিকানা একটা তো চাই
একতারাতে সুর তুলেছে লালন সময় কথা---
গীতি ময় মাটি পুতুল পোড়া মাটি গান,
নবান্ন সময় চুপিচুপি এসেছে ধানের গন্ধে---
আহারে ! কাতর নম্রতা জানে আবিশ্ব প্রকৃতি বসন্ত,
কপালে রেখে গেছে চুম্বনের স্পর্শ বাতাসি উন্মাদনা।
নিজের চেনা কালো টুপি ডাক বাক্সের লাল রঙের শরীর,
ওর ভিতরে লুকিয়ে আছে যৌবন বার্ধক্য সব----
স্বপ্নের মুক্তো দানা বেঁধে হাসির বিক্ষোভ,
এ সময়েই সমুদ্র জেনেছে শরীর সম্ভোগ অমোঘ মুগ্ধতা---
অন্তর্লীন স্রোত তার চেয়ে বেশী পাঁশুটে নম্র ক্রোধ।
কপালে ছিল উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস তছনছ আত্মার নাচন,
অনুযোগ ছিলনা কোন নেই জন্মের খেদ ---
তফাৎটা কোথায় বন্ধুত্বের হাতে হাত দেশ,
ঘরে বাইরে কর্কশ কথার ফুলঝুরি অদ্ভুত বন্ধুত্বের ক্লেশ---
নিরবচ্ছিন্ন আমাদের নিজস্ব ঠিকানা একটা তো চাই।
শিবির সংহিতা
লাঙ্গলের ফালে তখন সিথি কাটে মাঠের শরীর---
জল ছলছল প্রান্ত দেশ সুখী সবুজ আলতা পাটি পা,
রূপ রঙ ভিজে কলাবতী ফুল লজ্জা ভেজা শালুক---
সুখি সময়ের কোঁচড়ে বসন্ত লতিকা খুশী খুশী ফুল কথা।
সবুজ পাতার তলায় সুখী দম্পতি শালিক বুলবুলি----
কতবার খালি পেটে ফোঁপানি কান্না বৃষ্টি ভেজা চোখ,
এলোমেলো গোপন সাঁতার মাটি মা তখন পার্বতী----
ভোলানাথ চাষীর ব্যাটা হয়তো জানেনা গৌরী পট কথা।
আজব ঘুড়ি দোল খাচ্ছে বাতাস চেরা ফাঁদ,
বর্ষা মাখা পূর্ণিমা চাঁদ উঠোন জুড়ে অন্য আলোর ডাক----
শরীর জুড়ে হাড় মাংস মজ্জা ফুল বেল পাতা পদ্মপরাগ,
মানুষের জন্য বেশি কিছু চাহিদা নেই শুধু বিনম্র অঞ্জলি।
কতবার প্রার্থনা রাতে দিনে জাতি গোত্র শেষ বার মানুষের ঘরে---
সামনের সবুজ বনাঞ্চল জানে বসন্ত বৌরি পাখির কান্না,
কোনোই ঠিকানা নেই আগামী দিন শুধু থাকে চোখে মুক্তা জল---
কোথায় গেল আয়ুষ্মান আয়ুষ্মতী আশীর্বাদী ধান দূর্বা ফুল।
সাপেরা আপেল খায়নি শরীরের খাঁজে শিহরণ----
সীমানা বিহীন পথের দু'ধারে বাস্তুহারা মানুষের গান,
ভাঙা ইট মাটি ভাঙা উনুন জানেনা উদবাস্তু শিবির সংহিতা---
অসহিষ্ণু খিদের জ্বালায় ইঙ্গিতে ডাকে বিষণ্ণ বনিতা।
অচেনা ছায়া পথে
অগ্নি সময় কালে ঝরে পড়ে ছিল কিছু সবুজ ঝরা পাতা---
শুকনো ডাল গুলো বয়স্ক
ঝরা পাতার শোক দেখে ছিল,
হিল হিলে রোগা ডাল গুলোর ডালায় পাতার অঙ্কুর---
আকাশের দিকে তাকিয়ে একটু কালো মেঘ আর অনেক বৃষ্টি।
নিখাদ জীবন্ত শরীর ক'জন পুরুষ কিছু রমনী-----
পাতার খস খস ঝাড়ুর শব্দ বলে এতো না ফোটা মরশুমি ফুল।
হা-হুতাস যন্ত্রনা সিক্ত বুক বনবালা দেবী প্রতিমা সব---
এ যেন অপেক্ষা কাল পুড়ে যাচ্ছে শরীর,
নড়ে ওঠে পৌরুষ সংক্রান্তি কাল পৌষ পরব----
অচেনা প্রাণীরা আড়চোখে দেখেছে সম্ভোগ,
বনের ঋতু জানে আহ্নিক কাল বিষুব সীমায়
চেনা প্রাণীদের মতো আবরণ হীন,
শরীর জুড়ে পাথরে ঠোকাঠুকি চকমকি আলো---
এখনো দুটো কাল পরস্পর শীত বর্ষা আর উষ্ণতা।
আজন্ম দেখেছে কখনও মোহান্ধ ফুলের নেশা---
আয় বন শরীর খা খুবলে খানা বুক---
এখন বন ছেড়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে খেলছে বনের অসুখ,
রাত হলেই বন গা ছমছম, একে ঘূর্ণি সময় কাল---
চেনা শহরতলীর ফুটপাথে বনজ ঘর বাড়ি,
দেহের সাথে নীলের আকাশ বাড়ি অচেনা ছায়া পথে।