গৌতম কুমার গুপ্ত
ভাঙন সম্পর্কে
ভাঙন গড়ে উঠলে গঠন সম্ভব হবে কি এখনই?
কেবলই তো ভেঙে দিচ্ছো প্রণালী
স্রোত কথা রচনাবলী সব ভেঙেচুরে যাচ্ছে
এতটাই অসম্ভব করে দিচ্ছো বিন্যাস
পাঁজরের অস্থিকলা রক্তমাংসের অঙ্গসজ্জা
শিরা উপশিরা বয়ে যাওয়া রক্তজল
মানবিক যা কিছু দাক্ষিণ্য ও কৃতকর্ম
দ্যাখো ভাঙনের চাবুকে অস্থির কম্পমান অনর্গল
গান গাওয়া সেরে উঠলে এখনই
নেমে পড়ো অভ্যাসে অনুশীলনে মহড়ায়
নিজের ভেতর জেগে থাক সমস্ত রৌদ্র
উছলে উঠুক রাত্রির মোহনা
আগুন লাগলে নীরোর বেহালাটি যেন না বাজে
জল ধূলোবালি পাথর একত্রিত করে সব
দাহ্য যা আছে নগরীর পথে ও প্রবাসে
বিমূর্ত করো নির্বাপণের দহন নাগরিক কৌশলে
ইদানীং
ইদানীং শস্যকে ভক্ষণ করি না আমি
শস্য করে আমাকে
শিকড়ের ঘ্রাণ ছড়ায় অনাবাদী ঘুম
অতি অস্থিরে থাকি কেউ যদি কেড়ে নেয় বাটি
দু মুঠি চালের হিসেব বরাদ্দ টিনের আধুলি
একমুষ্টি ফসলের দায়
মাটি ভুলেছে সার বাতাসে ধাতব
বিষ লেখে জল সীসা ও গন্ধক
শস্য থেকে পৌষ্টিকের ঋণ
এখন বেজায় আক্রা সবুজের কি দায় আর
তবু তো ফোটে প্রাণিত পল্লবে
দূর খেকে মেঘেদের মিশে যায় শ্রম
ইদানীং শস্য আমাকে ভক্ষণ করে
জয়যাত্রা
মূত্রাশয়ের থলিতে বিষাদ ঢেলে চলে যায়
বুড়ো আঙুলের তাচ্ছিল্য
একটা অগ্রাহ্যের শিস্ বাজায় সাহসী ধমনী
গ্রাহ্যে আনে না এ যাবৎ আঁধার কুজ্ঝ্বটিকা
কুয়াশা ফেরতের রহস্য জাগায়
তর্জনীর নোটিশে তুচ্ছ করে চলে যায় দিনরাত্রি
বেঁচে থাকাতে আপস করে না জল
পিপাসার ছাইয়ে পুড়ে যায় নিশ্চিত আগুন
জলাশয়ের অক্ষুণ্ণে প্রতিহত যে সব জঞ্জাল
উচ্ছন্নের ইচ্ছে
ঢালে উন্মাদ প্রপঞ্চে
মূত্রের বর্জ্যে নষ্ট হয় পিপীলিকা উড্ডয়ন
খেচরের স্বাদ
সম্পর্ক
কি ভাবে হৃদয় জানাই এই দ্যাখো
প্রসারিত হাত,উদ্বাহু ভাষা করমর্দনে
সহজ চুপকথা প্রগলভতা ওষ্ঠ চুম্বনে
বাতাসের মতো হতে পারি প্রবাহ ঋণে
অথবা জলের মতো সহজ সরল দিন
বৃক্ষের মতো সবুজ বনানী শাখা প্রশাখা
ফলে ফুলে পৃথিবী ভরা জন্মমৃত্যু আঁকা
তবু তো বাড়িয়েছি হাত আমার অবতরনিকা
মুগ্ধ যা কিছু দিয়েছি আলোর ঋজু পথ
চোখের দৃষ্টি দৃশ্যে ধরা প্রচুর প্রখর জ্যােতি
কিছুটা ভীরু কিছুটা প্রকট লোভনীয় ক্ষতি
মেনে নিতে রাজী সম্মোহন
আমার প্রতীতি
কবিতা
কবিতার ঘ্রাণে উৎফুল্ল অক্ষরেরা নেচে ওঠে
সাজের পোষাকে ফোটে ফুল
স্পষ্ট হয় বৃতি ও পাপড়ি সুগন্ধ ভাসে
স্বরবর্ণে হাই উঠেছিল এতোদিন
ব্যঞ্জনবর্ণে জটিল কাঁচা ক্ষত হিজিবিজি
শ্বেত কাগজে শ্বাস জমে প্রবল পীতশ্বাসে
প্রচ্ছদের নামে ও প্রকরণে কাব্যবিনুনী দোলে
বালিকার চঞ্চলতা অথবা যুবতীর লাবণ্য
অক্ষর চেয়ে দ্যাখে অনর্গল শ্রাবণীমুখ
রৌদ্র নেয় বৃষ্টি মাখে ছায়া লেখে অক্ষর
প্রতিটি পৃষ্ঠায় তুলে নেয় আবাদী ফসল
উৎসবের সৌকর্যে অক্ষর
হাসে গান গায়
কবিতার শিকড়ে গেঁথে যায় বিরল বিভাব
মূলরোমে জেগে থাকে জীবনের ত্রাণ
আমাদের আনন্দ দুঃখ
সামাজিক লবণের দায়