শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

উজান উপাধ্যায়


উজান উপাধ্যায়

চাবি

খুব খুব রাগ হয়
খুব রেগে যাই

মনে হয় সামনে পেলে হেস্তনেস্ত করে নিতাম
আজই,কিন্তু তুমি যে এখানে নেই আজ

বাবা

তোমাকে কোথায় পাবো জানা গেলে
টেনে আনতাম ঠিক

ঝগড়াও বেঁধে যেতো চূড়ান্ত রকম

যদিও জানি একজন বকে গেলে
তাকে তো আর ঝগড়া বলেনা

তুমি তো সেই একই রকম শান্ত ধীর মিটিমিটি হেসে যেতে,
আর বলতে তুই বলছিস যখন ঠিকই হবে

তবে একবার ভেবে না হয় দেখিস আমার কথা

তবুও রাগ বেড়ে যায়
ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে যাই নিজের ভিতরে

বাবা

তুমি কেন একটা ভুলস্বর্গের তালাবন্ধ দুর্গের সামনে
দাঁড় করিয়ে এলোমেলো সব চাবি দিয়েগেলে

ভালোবাসা মানবতা আদর্শ মনুষ্যত্ব সততা

দূর দূর জীবন্ত ফসিল সব

ওসব চাবিতে যে দরজা খোলে তার ভিতরঘরে
শুধুই অবসাদ পরাজয় আর লোভী দেবতার মসনদ

সেখানে নিজের জন্য রাজত্ব কিনতে গেলে
অন্য চাবি, তুমি জানতে
দিয়ে যাওনি।

বাবা এসো তবে
তোমাকে ছিঁড়ে ফেলি

এসো তোমাকে চুরমার করি

তোমার মেনিফেস্টো বাতিল অকেজো

যাকে যাকে তোমার পথ দেখিয়েছি
সবাই অভিযোগের তীর শাণিয়েছে

বলেছে পৃথিবীর মানুষকে ভালোবাসা দিতে গিয়ে,
বিপরীত মুখে মুখে বৃষ্টি খুঁজতে গিয়ে

মেঘেদের ঘরবাড়ি স্বপ্নের ঘোড়াদের আদুরে আস্তাবলে
ডানা ভাঙা পাখির মতন।  হৃদয়নগরটাকে পুড়ে যাওয়া
নীলগ্রহে ছেড়ে দিয়ে আছি।

তোমার আঙুল মাপে নিজেকে মাপতে গিয়ে
আমার লাশের সাথে মিশে গেছে-

আমার ভুবন, তোমার ভুলের কাছাকাছি।

বাবা

খবরদার, আজকাল সামনে এসোনা,
আবার বিদ্রোহের গন্ধ ভাসবে আমার আকাশে-

বারংবার আমার মৃত্যু দেখতে তোমার যে
কষ্ট হবে বাবা।

সে আমার সহ্য হবে না, তার চেয়ে চল
এখনও আমার পুড়ে যাওয়া ঠোঁটে
বিক্ষুব্ধ দাঁতে যথেষ্ট রাগ বেঁচে থাকতে

তোমাকে ছিঁড়ে ভেঙে দুমড়েমুচড়ে
কুটিকুটি করে ফেলি।

বাবা তোমার স্বর্গের চাবিটা তো অন্ততঃ ঠিকঠাক হোক।








আত্মগত

লালপাথরের টিলা পার হয়ে ছেলেটি হেঁটে যাচ্ছে একা। ছেলেটি এখন ছুটিতে আছে। ছুটি ভেঙে গেলে আবার অবসর, তাই তার আত্মগত নদী তাই তার ফেরিওয়ালা সাজ। ছেলেটি খুঁজছে কাজ, বাঁশি বাজানোর।

ছেলেটি কাগজ ছেঁড়ে, নানা মাপে নানা অছিলায়, যা কিছু বন্ধন ভেঙেচুরে কাগজের ফুল পাখি বানিয়েছে নানা মাপে , উড়োজাহাজের মত অলীক নৌকাও।

ছেলেটি ঈশ্বর নয়। ছেলেটি শয়তান নয়। শুধু তার গল্পের নেশা। নেশাতুর দৈত্যরা ছেলেটিকে বুঝেছে আপন।

ছেলেটি পায়ে হেঁটে মেঘদূত হয়ে যাবে বলে আকাশ ভেঙেছে নিছকই খেয়ালের বশে।

বেশ ছিলো ভোরগুলো, দুপুরের রোদভাঙা ছুট-বেশ ছিল পাহাড়তলীতে গিয়ে সাঁতারের নীল আড়ম্বর।

আচমকা নদীপারে খসে গেল দুষ্টু এক তারা, খোপায় কাঁঠালচাপা , হাতে তার বসন্তের প্রেমিক পলাশ।

ঠোঁটে তার মেঘলা আঁতর, ছেলেটির ছুটি খানখান।
ছেলেটি হেঁটে যাচ্ছে কবিতার মেয়ের ভিতর।

পাথরের চোখ ভেঙে ভেঙে, সাঁকো থেকে নেমে আরও এক সাঁকোর উপর...

নগ্ন এক নদী আচমকাই শূন্য ফুঁড়ে ছেলেটির সামনে নেমে এলো, ছেলেটিকে ছুঁলো ।

অকস্মাৎ- কোত্থেকে কি হলো!

ছেলেটি আবারও পাথর। মেয়েটির নাভি থেকে ঝুলে ছেলেটির গোপন অক্ষর।








মাতাল জোনাকি


খাদের ভিতর থেকে তোমাদের দিকে হাত বাড়িয়েছি, ঠিক এখন চাঁদের ভিতরে আমি গড়িয়ে যাচ্ছি ক্রমাগত। দুহাতে মেখেছি লাভাময় দুঃখ যাপন, হত্যা করে হরিণীর লাশ ফেলে গেছে কেউ, এখানে গভীর ক্ষত উঁকি দিচ্ছে মদের গ্লাসেই, বরফের চাঁই ভেসে উঠছে -ঢুলুঢুলু চোখে টলছে নবান্নের সেদ্ধ হওয়া ধান। এখানে আমাকে কেটে সেই রক্তে উৎসবপালন।


পরের পর ঘাতক প্রেমিক আর মত্ত প্রেমিকারা ঠোঁটে ঠোঁটে চাঁদের জ্যোৎস্নার নাভিকেন্দ্র আর আলোকিত তরঙ্গমুখ থেকে লোভ চেটেপুটে দাঁড়িয়েছে রাত্রিকালীন ঘুমের নেশাতুর চোখে।


দেখেছি তো ভালোবাসা বলে, ওরা খুব মস্তি পেয়ে গেছে। দেখেছি তো সমর্পণ বলে দুহাতে ছুরির মত
প্রতারণা সাজিয়ে রেখেছে।


দেখেছি সন্তান বলে, দেখেছি মাতামহ পিতামহ বলে ছায়া ছায়া পুকুরের জলে বিম্বিত কুয়াশার ঢঙে ওরা সব নগ্নবুকে সাজিয়েছে লোলুপ শ্মশান।


ভালোবাসি বললে মহুয়ার রসে রসে বুদ্ধের বাণী, অন্ধ শয়তানী নখে দাঁতে প্রবল ধূসর কিছু লালা।


বাবাদের সব ভাই সব বোন বাবাদের বাগানের সব ফুল সব পাখি ঘুঙুরের ছলে ব্যক্ত করেছে ছলাকলা।


সবটুকু মৃতদেহে বলা এই নধর গ্রহেই, ভিতরে যে জল, পাখির চোখেও যে মেঘলা অনল-


শহরের প্রতিটি রেস্তোরাঁয় প্রতি তক্তপোশে রাখা আছে খুলে রাখা অন্তর্বাস, বারোমাস এভাবেই
ভালোবাসা নামে প্রকান্ড খেলা চলে সাপলুডো ছকে।


ভালোবাসি বললে  বোকা বুঝে ফেলে।

ভালোবাসি বললে শিকার বুঝে ফেলে।

১০

তবুও মরছি রোজ, এই যে বয়স হলো পুরোটাই ফাঁকি, জানা আছে এভাবেই আরও যত অমরত্ব বাকি-

১১

আমার হৃদয় থেকে চেটে নেবে রঙিন শকুন, ভালোবাসা প্রেম আর বাকিটা ভুবন-

১২

বৃথা এক নৌকায় মাতাল জোনাকি।