মৌ মধুবন্তী
বিউগল ও কবি
কতটা মজুর তুমি কবিতার মাঠে?
কতটা আঘাত পেয়েছ মনে
কবিতার শব্দ গিলতে?
কতটা নির্মমতা দেখেছ,৭১'এর
বর্বর পাক বাহিনীর আক্রমনে?
কতটা বাংলা শব্দের দিত্ব অর্থ জানো
ব্যাকরন? সমাস? কারক? বিভক্তি?
এক কথায় অসাধারণ? লাপাত্তা
হারামখোর, কবিতাকে ধর্ষণ করে
নিমেষে পলাতক ; যৌনবাজ।
যতি চিহ্নের নীচে বসে
আবগারী শুল্ক আদায়
দেখেছ? দেখেছো কি
শব্দের ক্ষেপনাস্ত্রে নিজেকে
ক্ষত-বিক্ষত, উলংগ হতে
কঠিন ভংগুর চিন্তাকে কতটা
জমায়েত করতে সক্ষম হয়েছ?
কবিতা নেমে গেছে গভীর
সমুদ্রে কন্যাকুমারীর হাত
ধরে, তাকে ফেরাতে কতটা
জলে ডুবেছ?
পাথরে আর ভাংগা নুড়ির নিষ্ঠুর পথে
কতটা একাকী হয়েছিলে? কবির
ভেতরে কতটা তুমি সত্য কবি আর
কতটা ঠগবাজ,তার বিচার করে দেখেছ?
নিক্তিতে তার ওজন করেছ?
সব প্রশ্ন শেষ হলে, জীবন, কবিতা হয়ে ওঠে
কস্মিনকালে সে জীবনের
দেখা মেলে- অগ্রপথিক তুমি পথের
শেষ সীমানায় গিয়ে দাঁড়াও, দেখবে
কোথাও তোমার পথিক পা, চিহ্ন রাখেনি।
তুমি কোনদিন কোটেশান হতে পারোনি।
এক কলম কবিতা লিখেই বিজ্ঞ কবি তুমি!
ঝড় উঠুক ঝড় উঠবে
মাগো!
কতদিন দেখিনি তোমার মুখে সরল হাসির টান
তোমাকে কোনদিন কাঁদতেও দেখিনি অনির্বান
কি পাষাণ বুকে বেঁধে তুমি সন্তানের শোকে মুহ্যমান
চারিদিকে হরির লুট,
হাহাকার, রাজাকার-ধর্ম সোলায়মান
কার কাছে যাবে তুমি , এই ভেবে ভেবে বিমুর্ত হয়েছ
দেখনা বুঝি সন্তানের কাছে তুমি ও আপন মা রয়েছ
পর ও কি হয়েছে তারা একেবারে? নাকি বেশটাই বদলেছে
তোমার পরনে সেই ছেড়া কাপড় একাত্তর থেকে একই আছে
তাই তুমি ভেবে অবাক হও বুঝি মা, এরা কারা
আদর্শের বুলি তুমি যত শিখিয়েছ ভুলে গেছে আজ সব তারা
তবু ও দেখ মা আজ বাংলার ছেলেরা কেমন খেলেছে মাঠে
দোদন্ড শক্তি নিয়ে প্রবল প্রতাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে
আবার তারা নেবে হাতে অস্ত্র হাতিয়ার খুন্তি কুড়াল যা কিছু
পায় সামনে
লড়ে যাবে সমান তালে একাত্তরকে মনে রেখে বীর মহা বিক্রমে।
শুধু তুমি জেগে থেকো সেইদিন দু'চোখ ভরে দেখতে
মুক্ত- প্রাণ খুলে সোনার বাংলায় আবার মানুষ হাসবে।
ও আমার বাংলা মা, তুমি ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না
এমনি করে বিয়াল্লিশ গেলেও চুয়াল্লিশ তো পার হবে না।
বাংলার গৌরবোজ্জ্বল বিজয় ফিরিয়ে আনবেই তোমার সন্তানেরা
এইটুকু বিশ্বাস রাখো
চেতনায় শহিদদের রক্ত কোনদিন বৃথা যাবেনা।
না না না, না না
না, পার হবে না।
জলে অগ্নিদাহ
রাতভর জেগে থাকি;
আমি একা একা
রাত ভোর হলে লিখি,
ধ্রুপদ কবিতা
মনে পুরে যন্ত্রদানব,
আঁকি সেই ছবিটা।।
কিছু লোক কথা বলে, কিছু লোক গান করে
চারিদিকে জংলার ডালার মত বিচ্ছ্যুত অভিমান গলে পড়ে,
মাইনাস চল্লিশেও
তা জমাট বাঁধে না
পুরানো বন্ধুত্ব ক্রমশ দুরত্ব বাড়ে ঘ্রাণ আর পায় না
অথচ অন্তরকে পাঠ করতে পারে যতই বড়াই করে
কালির অন্ধকারের মাঝে তাদের রূপসাখালি
খেয়ালে জেগে ওঠে; নিভে যায় দমকা অহংকারে
আমাকেই বারে বারে হার মানা হার পরিয়ে
বিজেতার আসনে চিহ্নিত করে; দুর্লভ এক
অভিজ্ঞতা নিয়ে মহাসিন্ধুর দিকে তাকিয়ে থাকি,
বিহবল। বিশ্বাসের লোহগড়ায় শ্যামা পদ কেরানি
লিখে যায় তার দিন পঞ্জিকা। আমরা কেউ কেউ পড়ি;
কেউ বা এড়িয়ে যাই দম্ভ ভরে। অজানারা এখন
শ্যামের পাল হয়ে কবিতার পৌষ সংক্রান্তি করে।
তাই অচেনা জমিনে আগুন জ্বলে খড়ের জ্বালা নেভাতে
উন্মুখ ময়ুখ বাসনা। পুড়িয়ে খা খেতের কাচা ছোলা
দিন এলেই আমি খুলে
দেব তোদের মুখোশ
উজ্জ্বল আলোর প্রশংসায়।