শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

সুমনা পাল ভট্টাচার্য


সুমনা পাল ভট্টাচার্য

এসে গেছে....

(১)

শ্রী পঞ্চমীর সকাল, আকাশের 'গায়ে হলুদ' আজ..
নীল পাঁজরের  ঘরে থোকা থোকা সূর্যমুখী..
গাঢ় চুমুক দিয়ে পান করা যায় এতো গভীর নাব্য কাজল
সেই কালো দিঘির বুকে টলটলে স্থির জল
:
শুধু বাঁশি তোমার ছুঁয়ে দেওয়ার অপেক্ষা...
তাহলেই বাহারের কোকিল ওই কণ্ঠপথ পেরিয়ে
সারা জীবন জুড়ে এঁকে যাবে চর্চিত আলপনা।
তারপর এক দিগন্ত চন্দন ঘ্রাণ,
 সোচ্চার হুলুধ্বনি, শাঁখের করতালি...
:
দু'হাতের তালু জুড়ে প্রেমের অঞ্জলি।
বুকের ভেতর ফুটন্ত প্রার্থনা-
'বসন্ত এসো, চৌকাঠ পেরিয়ে ঘরে এসো'....








(২)

ঠোঁটের ভেতর বারবার ডুবুরির হাঁকপাঁক
তলিয়ে যাবার গল্প।
সারারাত এতো জ্বালানিয়া আলো, যে ভোরও এখন আলেয়া।
:
পথিক, তোমার বিশ্রাম ফুরোলো?
পথ হাহাকার করে ডাকছে তোমায়,
আর তুমি আঁচলের তাঁবুতে নিজের ঘর বেঁধেছো!
:
চেয়ে দ্যাখো পশ্চিমের আকাশ কালো করে ঝড় আসছে..
এক নিমেষে উড়ে যাবে ছাদ, পায়ের নীচের মাটি উঠবে কেঁপে..
আমার বুকের আঁচল পড়বে খসে, তুমি বাঁচবে কেমন করে!
:
তারপর মৌনতা..
বাইরে পূবের স্নান, আর ভিতরঘরে তখনও গভীর রাত্রি।
পথিক তুমি তলিয়ে গেলে যে, তাই অতলে ভাসালাম ভেলা...







(৩)

মধ্যমার ঠিক বাঁপাশ ঘেঁসে তিলটা আজও খুব স্পষ্ট
চশমার কাচ আরো খানিক ঝাপসা,
চুলের ভেতর সাদা পালকের উত্থান...
কপালের ইতিউতি বয়সের কলমকারি,
:
তবু, কফি মাগে ঠোঁট দুটো আটকে রেখে
চোখ তুলতেই আমার বয়স আজও তোমার তিল-গন্ধে তন্বী...
বিছানার একপাশে বেবাক চেয়ে আছে তোলপাড় ঢেউ।
ভিজে যাওয়া বালিশের গায়ে চেনা মাটির সোঁদা গন্ধ..
:
তুমি কৃষ্ণচূড়া মেখে আমার সারা শরীর বেয়ে জাগো...
আমার গালের টোল পড়া গোধূলি
আরো কিছু রক্তিমতা দেখার অপেক্ষায়...
সূর্যাস্তের আগে ফিরে এসো, আলো মৃদু হয়ে এলো।
আলতার গোড়ালি জুড়ে বেহাগী তরঙ্গ..
:
শুধু তুমি আর এ বসন্ত।।