শুভদীপ চক্রবর্তী
তোমাকে চাই
এ এক শ্রাবণস্নাত দিন,
এ এক বেদনাশুকনো জীবন,
হঠাৎ করে পালিয়ে গিয়ে যদি,
তোমার সঙ্গ পাই কিছুক্ষণ।
তখন কি দিনে নামবে চাঁদ,
আর অন্ধকার অন্ধ হয়ে যাবে?
জীবনে আসুক এক স্বপ্নের ঢেউ,
সূর্য উঠুক নতুন কোন উৎসবে!
গভীর রাতের চুপকথার
মতন,
বলবে কী কেউ এক শতাব্দী ধরে?
এক-জীবন সুখ থাকলেও,
মনের পাশে চাই ই চাই তারে!
ফেরা
নদী, আকাশ ও মৃত্যুর পথে
কোনো ফিরে আসা নেই
একবার বিলীন হয়ে গেলে
স্মৃতি ছাড়া কিছুই থাকে না
নদীর জলে আকাশের দিকে চেয়ে
মৃত্যুর শেষ চিহ্নটুকু নিক্ষেপ করে
নিয়মমাফিক ফিরে আসে অনেকেই...
সেই শেষ চিহ্নও সময়ের অতলে
হারিয়ে গেলে থিতিয়ে যায় সবকিছুই
নদী, আকাশ ও মৃত্যুর পথে
কোনো ফিরে আসা নেই
তবুও, নদী, আকাশ ও মৃত্যুর থেকে
ফিরে আসার সিঁড়ি খুঁজতে থাকি,
আমরা সবাই।
জেগে থাকা
মধ্যরাতের গভীর ঘুমে যখন হাত,
পা, চোখ, নাক, মুখ আচ্ছন্ন থাকে তখনও
এই মনটা ড্যাবড্যাব করে জেগে থাকে।
জেগে থাকে আর সিনেমা দেখায়,
সিনেমায় দেখা যায় –
দূরের কদবেলতলার মাঠ,
দোস্তিদারের আমবাগান,
মন্দিরের ভাঙা প্রাঙ্গণ কিংবা
বাবলাদের বাড়ির রান্নাঘর।
এই সিনেমায় কোনো বিরতি নেই,
বছরের পর বছর নিরন্তর চলেছে...
সিনেমায় ছেলেটা খাঁকি হাফপ্যান্ট পরে
রোজ রোজ কাঁধে ভার চাপিয়ে স্কুলে যায়,
স্কুল থেকে ফিরেই নেতাজি সঙ্ঘের মাঠে বল পেটাতে যায়।
আবার গরমের রাতে চাঁদের সাথে গল্প করবে বলে
ছাদে শীতলপাটি বিছিয়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখে।
পরীক্ষার আগে রাত জাগা,
রেজাল্টের আগের রাতে উত্তেজনায়
নখের শেষ অংশটা পরিপাটি করে উপ্রে নেওয়া
কিংবা কলেজ পালিয়ে সিনেমা দেখা,
সবই এক এক করে ভেসে ওঠে সিনেমার মুখে।
রবিবারের দুপুরে রোদ লেগে গাছপালা থৈ থৈ করে,
শনশন করে শুকনো একটা হাওয়া ওঠে বুকের ভিতর।
তারপর সারাটা দিন গড়াতে গড়াতে
সেই হাওয়ার ঝাপট বুকে জড়িয়ে
রাতে এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সিনেমায় ভেসে ওঠে কচি পেয়ারার গন্ধমাখা দিন,
নীচু হয়ে থাকা ভেজা
ফুলগাছের ডাল।
রেডিওতে মৃদু অনুরোধের অাসর বাজে।
এভাবেই চলতে থাকে ছেলেটার সিনেমা দেখার পালা।
মধ্যরাতের গভীর ঘুমে
যখন হাত, পা, চোখ, নাক, মুখ আচ্ছন্ন থাকে তখনও
এই মনটা ড্যাবড্যাব করে জেগে থাকে।
সবার চোখে ঘুম নামে...
ঘুম নামে মাটিতে,
ঘুম নামে গাছের সবুজ পাতায়,
ঘুম নামে শিশু থেকে বৃদ্ধের চোখের পাতায়,
শুধু এই মনটা ড্যাবড্যাব করে জেগে থাকে আর সিনেমা দেখায়।