সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯

কাকলি দাশ ব্যানার্জী


কাকলি দাশ ব্যানার্জী

আমার রিক্ত কলকাতা

"আহা তুমি সুন্দরী কত কলকাতা"
ঊষাদির সেই সুন্দরী কলকাতার বুকে
আজ নীল ক্ষতর ঘেরাটোপ,
মননে বাসা বেঁধেছে ক্ষয়রোগ -
বিমর্ষ ঠাকুরদা তাই স্মৃতি খুঁড়ে
সেই  মোহনবাঁশি বাজানো শহরের
নিবিড়তার কথা বলেন প্রায়,

তরুণ প্রজন্মের আজ কলকাতায় অনীহা -
সুদূরের হাতছানিতে যতোই মেঘ গন্ধ থাকুক,
যতই বেপরোয়া কুয়াশা নকশা তুলুক নীরবতার,
বিচ্ছেদের নোটিশ টাঙিয়ে সে অন্য কোথাও খুঁজে পায়
স্বস্তির ঠিকানা ।

আজ তুমি সত্যি রিক্ত কলকাতা,
শরীরে খরা,
তোমার ঋতুকে আর দোসর হিসাবে পাও না,
সত্যজিতের হীরক রাজ্য আর নেই,
মায়ের নির্মল হৃদয়ের সান্দ্রতা ছিল তোমার অহমিকা
কিন্তু গাছটার মৃত্যুযাপনে
কালো সেলোটেপ লাগানো হয়েছে সেই বিস্তারেও,

তোমার ঈশ্বর আজ ভূলুণ্ঠিত,
তোমার রবির প্রাপ্তির আজ হদিশ নেই,
তোমার শরতের স্রোতে নাকি বড় লবণ স্বাদ
তোমার বিভূতি, বঙ্কিমরা আজ সত্যিই না ফেরার দেশে

আজ শহরের উন্মুক্ত রাস্তায় পণ্য হয় নারী,
বনসাই হওয়া মেধারা আজ শীর্ষে,
নেই, কিছুই নেই, শূন্য গর্ভ তুমি আজ,

শুধু আজও যখন দেখি
উদ্বাস্তু হওয়া বিপন্ন কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার হাত ধরে
এসে দাঁড়িয়েছে শহরের একটা মানুষ,
যখন শুনি
পুজো উদ্যোক্তারা
বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের জন্য নিয়ে এসেছে়
আলোর ভাষা,
যখন খবর পাই
রওশন মিঞার অসুস্থ ছেলেটাকে
রক্ত দিয়ে বাঁচালো বখাটে পাঁচু,

তখন তোমার দিকে তাকিয়ে দেখি আর একবার

দেখি, তোমার বিষাদ মাখা রুদ্রপলাশ ঠোঁটে
গর্ভবতী মেঘেরা সন্ধ্যে দিচ্ছে,




বেপরোয়া মা

কোল পাতার আগে গর্ভ পাতার সময় ...,

একটা দোহারা সবজেটে অন্ধকারের সাথে
ওম জমিয়েছিলাম তলপেটে,
লোহিতকণিকা দিয়ে গড়েছিলাম পান্থ পাদপ,

বিলি করা সব বিধি নিষেধ কে মান্যতা দিয়েছিলাম
যাতে তোর কুঞ্জ ছলকে না ওঠে,

তোর পরিপাটি টার্মিনাসে হৃদয় সংবেদ পাঠাতাম সুশ্রাব্য মেলোডিতে,
একটা অ্যান্টিক সাঁকো গড়ে তোলার চেষ্টা ছিল তবে থেকেই
যাতে পারাপার হতো বিরতি চিহ্নরা,

আজ বিদায়বেলায় -
আমার গর্ভের উপহার গর্বের শূন্যতা,

আমার  কোলপাতার উৎসবে তো কোন কার্পণ্য ছিল না
কার্পণ্য ছিল স্বপ্নকে খর্ব করার শিক্ষায়,

সে কুশিক্ষা আমার দান,
তুই আমার ইচ্ছের মর্যাদা দিতে গিয়ে
কলঙ্ক মেখেছিস ।

ওকে দোষারোপ করার আগে আমি ঘোষণা করছি
ওটা ওর কলঙ্ক নয় -
মা স্বপ্নে রঙ দেবার সময় বড্ড বেপরোয়া ছিল
তাই তার সুখের অপর পিঠে ভোগের বাস
তোমরা যার নাম দাও -- সর্বনাশ ।

তুমি সত্যিই  সুন্দরী কলকাতা ।






আর একবার যদি

একটা অবুঝ সকালের জমানো মেঘকে টেনে ধরে
কুরুশ কাঁটায় ভোরের ডানাটাকে লং স্টিচে বুনে
রেনকোটের মত বানালাম একটা দুখকোট

আমার আজ বড্ড আনন্দবাজারে যাবার সখ,
ছিয়াশি হাজার চারশো সেকেণ্ড হাতে আছে আমার
অঢেল সময়
সর পড়া জীবন থেকে দু আঙ্গুলে
আলতো করে টেনে তুলছি অসুখ
 --- ওটাকে ফেলে দিতে হবে ,
ওটা নিয়ে যাওয়া যায় না ।

দড়িটা এখন আমার সুখশ্বাস
ওটাকে অনেক আদর করলাম,
একা ঘর, আমি আর দড়ি
ও আমাকে কথা দিয়েছে
আমাকে একটা টর্চ দেবে,

ভিজে যাচ্ছে শরীর অতীতের বমিতে
আমি উঠলাম, হাতে পারানি,
ভাল্লাগে না-রা হঠাৎ পা চেপে ধরলো
তারপর একটা হ্যাঁচকা টান।

তাল মিলিয়ে এসে দাঁড়িয়েছে - নদী
বলল, দুখ কোটটা খুলে ফেল ভিজিয়ে নে দেহ,

ভালো না-লাগারা মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়াতেই দেখি
ওদের পিছনে দিগন্ত জোড়া গোধূলির কনে দেখা আলো

জীবনটাকে কেমন কচি মনে হলো হঠাৎ,
আর একবার যদি....