রাহুল ঘোষ
উল্লাসের বাইরে
তোমাকে কী করে যে বলি, আমি যেন
জানতাম, একদিন সরে যেতে হবে!
সান্ধ্য-চলাচল থেকে একদিন তুমি
ফিরিয়ে নেবে নিরালায় ধরে রাখা হাত।
এই নিভৃতি থেকে তারপর
অনায়াসে মিশে যাবে অনেক হুল্লোড়ে।
হেমন্তের ডালপালা কোথাও রাখবে না আর
শিশিরের টুপটাপ ডেকে নেওয়া রাত।
এখানে নিপুণ সমাপ্তি লিখে, বহিরঙ্গে
ফিরে যাবে তুমি, ঠিক যেন শুরুর আবহে।
অথবা নতুন ঠিকানা নেবে
গোপন পাপের মতো; তবুও কি পুড়বে না
উল্লাসের বাইরে কোথাও, গভীরে, অন্তর্দাহে!
অক্ষয় কথকতা
তবুও তোমার ঠোঁট থেকে শুষে নেওয়া পদ্মের রঙ
অথবা নিবিড় দুপুরে ওখানে লেগে থাকা ভাতের গন্ধ
আমাকে এখনও করে রাখে আশ্চর্য নরম ভূমি।
এমন অজস্র দুপুর, দুনিয়াদারি থেকে চুরি করা রাতের
অসংখ্য প্রহর, অক্ষয় করে রাখে আমাদের কথকতা।
তোমার গলার ভাঁজটিতে মুখ রেখে মরে যাওয়া সুখ
প্রার্থিত ছিল, মহেঞ্জোদারোর নিরালা দুপুরেরও আগে।
সেই ভাঁজ অধুনাবিলুপ্ত, অমন মায়ামাখা রহস্যটি মৃত,
ইথার-তরঙ্গে দেখে আক্রান্ত হই অতিরিক্ত বিষাদে।
তারপরে প্রত্যাখ্যান লিখেছ কিনা, সেটাই শেষ কথা নয়।
যতটুকু পেয়ে সরে আসতে হলো, আমাকে অমরত্ব দেবে
সেইসব অমৃতসেবন; অথবা দিয়ে যাবে পুনর্জন্ম একবার।
যতটুকু দিয়ে আসতে পেরেছিলাম, ততটুকু কিছুই তো নয়!
স্মৃতির অধিক
যে-তুমি নিশিকথা, সে-তুমিই আড়ালের দিন
আরশিনগর জানে, কোথায় জমে আছে ঋণ।
যে-তুমি গোপন সূত্র, যে-তুমি ভুল বোঝা আলো
আমার বিষাদজরি, বাজের আগুনে পুড়ে গেল।
যে-তুমি ফেরারি হাওয়া, যে-তুমি নিয়ে গেছ ঘুম
হারানো পাখিরালয়, তোমার সে-চোখে আজও ধুম!
যে-তুমি বরফের ছুরি, যে-তুমি ভুলে যাওয়া গান
লিখেছি অশ্রুকথন, ঝলসানো সব অভিমান।
যে-তুমি স্মৃতির অধিক, যে-তুমি আমার কাছে দাবি
হাঙরের মুখে নিজে ফেলে এলে সে-ঘরের চাবি।
বিরহ চেনোনি তুমি, বিরহকে পিষে দেওয়া ভাবো
কোনোদিন জ্বলে গেলে আমাকেই ডেকো, আমি যাবো।
যে-তুমি সিপিয়া রঙ, সে-তুমিই প্রতিশোধ লেখো
আমার অকালশ্রাবণ, কোনোদিন পারলে তা দেখো।