সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯

রমা সিমলাই


রমা সিমলাই

নিয়মমতে কবিতা নয়

মাসে মাত্র একদিন নির্দিষ্ট মাপে সুখ কিনে ফিরি,
যাপনের নির্ধারিত মশলাপাতি।                           
ওইটুকু বাদ দিলে, বাদবাকি সারামাসের না পাওয়া
তো তোমাকেই দিই।
তবু এতো অভিমান, অক্ষর –
বিলাসে কেন এতো কৃপণতা করো, কবিতা! 
আমি না তোমার প্রেমিকা!!!

হঠাৎ ই এক একদিন আঁচলে নক্সিকাঁথা শাড়ি,
অনেকখানি ভালো লাগা - উৎসব
বাকী টুকু তো সেই সাবেকী না হলেও
সাবলীল  জিন্স আর অফিসব্যাগ।
শাড়িতে মুখোমুখি দাঁড়ালে,
রূপসী বানাতে এতো কার্পণ্য কেন করো, আয়না!!!!
আমি না তোমার দোসর!!!

জানি তুমি চরিত্রটুকু কদম্বের ডালে
আর রাধাছুড়ির আঁচলেই বাঁধা রেখেছো
জন্মে জন্মে,
অবিরল পাল্টে নিয়েছো কল্পসহচরী
তবু  অপমানে অনাদরে
আশ্চর্য অন্দরে রাখো নি কোনো দাগ।
রাখো নি কোনো অন্ধকার,
 লালসার লালা আর আমিও ডুবেছি
নিজে অমেয় আঁধারে,
অমলিন পারিজাত আমিই গেঁথেছি।

অন্ততঃ অবলা মানবী নই পৌরাণিক ধাঁচে।
মানবিক ছাঁচে তবুও মা হই
তোমাকে সন্তান ভেবে সহোদরা হই
তোমাকে ভ্রাতৃত্বে বেঁধে প্রেমিকা হই
মধ্যরাতে বাঁশির টানে কলঙ্কিত হই
পরাগমিলন জানে ও শ্যামরায়,
কেমন নাগর তুমি !
পথ চিনে আসতে পারো না!
                      
আমি না তোমার রাই কমলিনী!!!







সমান সন্ন্যাস

জতুগৃহ থেকে চাঁদ
               হামাগুড়ি দিয়ে
                            উঠে আসে কালোমুখ
                                                   উত্তর আকাশে

জলদেবতার হাতে সোনার কুঠার দেখে
             ঈর্ষা রোদে তীক্ষ্ণ হয়
                                         ফসলের নাভি

অর্থহীন অনুরাগে দেঁতো হাসি নিয়ে
অভিসার থেকে ফেরে বাদুড়-রমণী

..................... এইসব টুকিটাকি রোজনামচায়
অসহিষ্ণু হয়ে
                    পরাগ মিথুন ঠোঁটে উড়ে যায় আন্তরিক
বিপ্র প্রজাপতি!

মেঘদূত দূতীমেঘ উড়ো চিঠি নিয়ে তার
                   যত দোলাচল
আকাঙ্ক্ষার তেলচিত্রে ঘষা কাঁচ আলো
     মুগ্ধতার চাবিকাঠি নিজেই হারালে
    অসমাপ্ত পান্ডুলিপি পাশ ফিরে শোয়

      দিনে আর রাতে তার সমান সন্ন্যাস !!!






ঘৃণা

আস্তাবল থেকে সুরক্ষিত সুখ
                   বেরিয়ে এসে ছুটতে শুরু করলো।

                                                 চতুর্দশীর চাঁদ গর্ভবতী হবে বলে,
                             গোবরজলে স্নিগ্ধ স্নান সেরে, পবিত্র সঙ্গমে উপনীত।

ভ্রূণ হত্যার ভ্রুকুটি এড়িয়ে, আদম লিলিথের প্রথম
সন্তান সন্তর্পণে সন্ত্রাসী মাটিতে পা রাখবে –
আয়োজনে কবি আর ভোগবাদী দেবতাদের
দ্বৈত কর্মসূচি নিয়ে কিছুটা দ্বিধায় রয়েছেন স্বয়ং বিধাতা

                               তাতে কি !

আরও একটি প্রলয় আটকাতে চলো আমরা
                          মিছিল করি

নির্বিকার নির্লজ্জতা আমাদের ওটুকুই শিখিয়েছে

দ্রৌপদী থেকে ঊর্মিমালা - শেষ বস্ত্রখন্ডটি জমা হোক,
দুঃশাসনের কায়েমী সিন্দুকে ...

        মিছিল আমাদের জন্মগত অধিকার

আস্তাবল খুলে বেরিয়ে আসা সুখ সুচীমুখে ঘৃণা
      রেখেছে । রেখেছে না ফেরার অঙ্গীকার!

         ও সময়, তুমি কি ঘৃণা বোঝো!