শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

অরুণিমা চৌধুরী


অরুণিমা চৌধুরী

জলছাপ

যেকোনো উৎসব  শব্দময়
ছোটছোট  ভীড় নি:স্ব করে

জলের ভিতরে কোন রেখাপাত নেই
আমিও কি গা ভাসিয়ে দেব! এইসব পথ
পড়ে আছে প্রাচীন অভ্যাসে

কেউ কেউ  বিলিয়ে দিয়েছে আলো 
উদযাপিত রাত, মৃদু গন্ধে ভরে রাখো স্নায়ুজাল
আমি ঝুলি খুলে বসি, কোথাও
সরপড়া অন্ধকার নেই।  আমি তবে  অক্ষর
পুঁজি করে কোথায় এগোব!

আমার অক্ষরে বিষ পাঠকের রন্ধ্র জ্বলে যায়

আমি শুধু ক্ষতের কথা বলেছি
প্রতারক ছবি এঁকে ভীতি সৃষ্টি করেছি

প্রেম খুঁজে যে বিষ ছেঁচেছি
তুমি তার কিছুমাত্র নেবে না পাঠক!

মস্তিষ্ক বেয়ারা বড়
বিতর্কিত যাকিছু, সামনে সাজিয়ে রাখে
যাকিছু অসংলগ্ন  যাকিছু হতে হতে
থমকে গিয়েছে  আমি তার ধারে খণ্ডিত হই
বয়ে চলি আমৃত্যু ভার, জলছাপ
পাকেচক্রে পাকেচক্রে লেখারা  হারিয়ে যায়.. 







ডিপ্রেশনের পরবর্তী সকাল

প্লাস্টিক সম্বন্ধীয় যাবতীয় নিষেধাজ্ঞার আগে কোথাও একটা  উৎসব লেগেছিল। বাপ ছেলেকে বলছিল "শুয়োরের বাচ্চা"। রান্নাঘরের দরজায় তখনো উজ্জ্বল "মাছের মাথা দিয়ে বাঁধাকপি কোরো বউ। মোচা তে ঘি দিও। "প্লাস্টিক ব্যাগ ছিঁড়ে গড়িয়ে গিয়েছিল নিষিদ্ধ আচার। কেউ কেউ ম্যারাপ বেঁধে প্লাস্টিকের ভয়াবহ আঙুল বিষয়ে গুরুগম্ভীর বক্তব্য রাখছিল, অথচ  উৎপাদন বন্ধ হয়নি বলে কিছু কিছু বাপ সেই যে বেমালুম প্লাস্টিক বনে গেল...

একটা বেআক্কেল দৃশ্যে কোনো খাম চুপিসারে খুলে গেল।   নীল প্লাস্টিক,  গলানো মিথ্যে, যুগল কৃষ্ণরূপ..আহা!বারান্দা ভর্তি পচা পালকের ঢিবি।মৃত প্লাস্টিকের অপাপবিদ্ধ ঘ্রাণে তখনো তাজা হাতের ছাপ মোছেনি।

ডিপ্রেশনের শেষ বিকেলে যারা বাঁ হাতে ছিঁড়েছিল যৌনকেশর, তাদের মরা চামড়া ও রক্তে কোনো দোষ লাগেনি।






বিবাহ

সমস্ত সম্পন্ন হবার পর  বারান্দা
জুড়ে ঝুলে পড়ে রোদ

চলন্ত দৃশ্যে  মা আর মুখর  মিক্সি
মুখ ঢেকে ঘোরে ..

দৃশ্য থেকে তিলমাত্র নখের ডগায় তুলে
মিশিয়ে দেওয়া দধিমঙ্গল..গলা দিয়ে
তখনো ভোর নামেনি মা

কালীমাস্টার দমে বাজিয়ে দিলো তেরেকেটে তাক

এই তো নাচন ফুলদিদা! রমণীর গুণ
সব মেয়েই বিষহরি!এই যেমন আমি
পেরিয়ে যাই অবাধ চৌকাঠ

এইযে এবম্বিধ আয়োজন!
হলুদ কোটা কস্তাপাড় তাঁতের শাড়িটি..
জল সইতে দুপুর গড়িয়ে নামে পারঘাট..
কারা দেওয়াল ভরে লিখে রাখে সংসার
আমার আর খাওয়া হয় না,
আমার নেয়ে নেয়ে বেলা গড়ায়

আয়নায় রমণীর সুস্বাদু ছবি
মা যেন কেমন দূরের মানুষটি.... ছেঁচে ছেঁচে
পিষে ফেলে এযাবতকালের খুনসুটি ....

সানাইয়ের শব্দ নাকি বশীকরণ কান বন্ধ হয়ে আসে
একবার কোল পাতো মা গোঁসাই!
যাবার আগে কোলজুড়ে বসি!
দুয়ারের বাইরে এই দিলাম পা,
এই ঘট উলটে গেলো ..
তেমাথার মোড়ে গোবরের ঢিপিটি ভাঙা কুলো বিদায় দিলে!
ফিরেও  ডাকলে না আর!

একটা আঁচল জুড়ে চোখের পিছনে
 দুলে গেল  চাল ধান কড়ি, গতজন্মের ঋণ..






প্রত্যাবর্তন

তখনো সকাল ফোটেনি
সেভাবে জানতে পারোনি আমার একটা পা
কখন কীভাবে ঘরের দিকে ঘুরে গেছে

একটা ঘর ছেড়ে আরেকটা ঘরের দিকে
অদ্ভুত  অন্ধকার,

আয়নায় মুখের ছবিও স্পষ্ট নয় অথচ
তুমি ঘুমিয়েছিলে সাদা ক্যানভাসে আঁকা
রোদের মতো উজ্জ্বল
 .......... তাকাতে ভয় করে।

সরু বারান্দায় ছেড়ে রাখা প্যান্টি
বাসি আদরের দাগ, তখনো রোদ পড়েনি।

বৈধ অবৈধ রমণের ধুয়ে ফেলা জল
বাথরুম জানে গত রাতে তোমার প্রেমিক
তুমুল ছুঁয়েছিল ।

বান্ধবীঘর, সকাল ফোটার আগে টলতে টলতে
এবারেও ঠিক  কেমন  ফিরে এসেছি
নিজস্ব পৃথিবীর জটিল আবর্তে, একা!






খনন

...অথচ বিবাহফুল তেমনই সাজানো ছিল
ধোঁকার টাটেই
বেলের পাতা তিল তুলসী
অভুক্ত পেট, দানের বাটিও...অটুট .

চরিত্র এমন এক পাখি, উড়ে যায়,
'সে যাহা বলিবে তাহাই সত্য তাহার বাহিরে কিছু নাই "

ক্ষতবিক্ষত রাতপায়ু ,
ধারালো ফলার মতো দাঁত ময়লাটে নখ গন্ধলিঙ্গ উপুড়..
দমন করো শেকলে বেঁধে রাখো জিভ, 
নাহলে উপড়ে নাও জরায়ু তন্তুটি

চরিত্র এমন এক ফুস! ফস করে উবে যায়,
সে বলেছে পাপিয়সী সে বলেছে বাড় বেশি হলে
ছেঁটে দিতে হয় স্পন্দনশীল স্নায়ু
সে বলেছে এসমস্ত যৌন বিধান-  স্বাভাবিক।