শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

পৃথা রায় চৌধুরী


পৃথা রায় চৌধুরী

অনেকটা ঈশ্বরের মতো

ভেতরে ভেতরে বন্যা ছড়িয়ে পড়ছে।

বন্যা ঘোমটায় ঢাকা।

বন্যা, তার নিরুপায় তরল গঠন,

নির্ভেজাল কলঙ্কিত ভয়াল সৌন্দর্যে মত্ত।

তুমি তাকে বাঁধতে পারছো না আর।

বাঁধ দিয়েছিলে যতো, উন্মত্ততায় সব বাঁধনকুচি ভেসে যাচ্ছে

এ ওর গায়ে মাখামাখি হতে হতে।

তোমার কটা সিঁড়ি ডুবলো? জানো না, তুমি বানভাসি ঈশ্বর!




ডুবে যাচ্ছে পদক্ষেপ;

বন্যা এসেছে জানাতে,

তুমি আমার সম্মানের মতো।

তুমি আমার কেউ হও না বুঝতে বুঝতে

পেরিয়ে এসেছি প্রিয় দরদালান;

সেই যেখানে নিষ্পাপ স্বপ্নদেরও ঠোঁট থাকে,

আর সেখানে তুমি আমার গান হয়ে বেঁচে থাকো।

ক্রমাগত সুরের ওঠাপড়ায়

বুঝি বিরক্ত হয়ে তুমি আমার আর্তনাদ হয়ে গেলে!




এই শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্মস্থানে বসে আছো বিস্ময়ে।

তুমি নিয়ন্ত্রণ করবে কাকে?

এসো আমার হাতের কাঠপুতলি,

সুতোয় আঙ্গুলে জড়ামড়ি,

তোমাকে আমার কথা বানাই...

আমার হাভাতেপনার সাক্ষী হবে এসো।

তোমার হাজার-কোটি-...

আরো অনেক লোকদেখানো ক্রিয়াকে

পবিত্র শ্মশানে প্রবেশাধিকার দিয়েছি।




একদৃষ্টির অদৃষ্টে

তোমার সন্ধানে ক্লান্ত ঘুমে বুঝেছি,

তুমি আমার আয়নায় ফাটল হয়ে বসেছো।







নিপুণ অলৌকিক

তোমাকে নিয়ে লেখার কথা সেই হিসেবে

আমি তোমার কথা বলবো কাকে?

চাঁদের ঝালর, আশ্বিন মেঘ, পবিত্র পাঁক

তাদের এতো ধৈর্য আছে, শুনবে বসে?


সাধ করেছি খুলবো আবার সেই জানলা

যেখান থেকে তোমার অবাক মানুষখেলা।


নির্মম বিকিয়ে গেছি, তোমার কাছে দেনায়

একে একে ফিরে গেছে বেহাল ছেড়ে একেবারেই

সুদের খামার... আসল বজায়।


এবার আমি ঈশ্বর হবো, ঈশ্বর

এবার আমি অকেজো বিশল্যকরণী

এবার আমি বন্ধ্যা ফুলের ফল হবো

পোস্টমর্টেমে বলে দেবে, শব নয়

শব নয় এখনো... মরেনি!








পুনশ্চ

তারিখ ছিঁড়তে শিখেছি,

উড়িয়ে দিচ্ছি নরম মানবিক জঞ্জাল

পাথরজন্ম দিতে পারো বেশ

চিনিয়ে দিচ্ছি রক্তক্ষরণহীন আঘাত।


বিলক্ষণ সন্ধ্যায় বিনোদন করে নিচ্ছি

তামাদি ধর্ষণ, রাজনৈতিক চাপানউতোর

তুমি নাস্তিক থেকে আস্তিক হবার কারণ, প্রভৃতি!


ইনফিনিটি জানা নেই বলে জানি না তার পূর্বসংখ্যা

শূন্যে নেমে হিসেব কষে চলেছি

অবতরণের প্রথম ধাপ...

ফালিফালি পল, কিছু আলটপকা


পশলারা ভিড় করে এলে

নিভে যেতে থাকে চেনা ব্যস্ততা

চলমান ভাসমান হয়,

"চলতে চলতে ইয়ুঁহি কোই মিল গয়া থা..."








যাবজ্জীবন

ইচ্ছের কথা বলতে বলতে

শুধু থেকে গেছে একটা শব্দতুমি।

তোমার ইচ্ছের কথা বলতে বলতে


বহুজন্ম পর বিকেল দেখাতে গিয়ে বললে,

দেখো বড়ো কার্পগুলো,

এখানেই দাঁড়াতাম, এই সেই জল;

দেখে মনেমনে তোমায় প্রশ্ন করলাম

ওরা আমাদের চিনেছে এতোকাল পর?


পুরনো চাওয়ালা ভোলে নি আমায়

তোমার পছন্দ মনে রেখেও

সে এগিয়ে দিয়েছে আমার হাতে প্রিয় লিকার;

ব্যবসা...

ভোলার মতো নই, বলো?


শুধু থেকে গেছে একটা শব্দতুমি

তোমার ইচ্ছের কথা বলতে বলতে কাঠগড়ায় বাস করি

হররোজ শুনানি।







অ-ঘোরময়ীর পশ্চাৎমুখী বিবর্তন

পাতা খুলে খুলে আলগা হয়েছে বাঁধন

কিছু ছেঁড়া ঠিকানাহীন নিরুদ্দেশ...

খুঁজি না;


ঘুমোতে লাগে নেশা ধূপগন্ধী... ভুল হয় না

কুৎসিত মন চাই একবার, ঘোর কুচক্রী

ভণ্ডামির চরমে অট্টহাস করতে চাই...

এই গো মানুষেরা, তোমাদের মতো হয়েছি,

হয়েছি এবার?


নাড়ির হাতছানি আসুক, ফিরে আয়...

আয় বেঁধে ফেলি ফিরে শেকড়, রক্তনালী জুড়ে জুড়ে

বহু অন্ধকার পার হয়ে ফিরে যাই বয়েসের ফিরতি ছুটে

আলো আলো ভেজা উৎসে


এগিয়ে আসুক অ-প্রাণ দিনরাত।