দিশারী মুখোপাধ্যায়
কিঞ্চিৎ অকিঞ্চিৎ
সব্জিওয়ালার দোকান আর মাছের আড়ত
থেকে
গোয়ালা পাড়ার গোবরের ডাঁই থেকে
মুচির টুকরো টুকরো চামড়ার গায়ে
লেগে থাকা অভিমান থেকে
দুএকটা বাক্য কুড়িয়ে আনি
নিজস্ব কথাতো আর কিছু নেই
খুন করে গেছে এক সুপারিকিলার
সেই বাক্যগুলোর কয়েকটাকে খুঁটি করে
পুঁতে
কয়েকটাকে আড়ে বহরে বেঁধে
পাতাচোতার আড়াল দিয়ে ঝুপড়ি বানাই
আমার অত শুদ্ধি অশুদ্ধি মানলে চলে
না
চাইও না
পুরসভার ভ্যাট থেকে যা কুড়িয়ে আনি
তা দিয়ে কি মহাকাব্য হয়
দলিল
জিভ দিয়ে লেহন করছে অহংকারের নগ্ন
শরীর
ব্যক্তিগত নামপদগুলি
তারা নিজেদের বসার জায়গা
কোনো সর্বনামকে দিতে চায় না
আমার আর চোখের কোনো দরকার নেই
কিছু্ই দেখতে চাই না
উপড়ে নিতে পারো যে কেউ
আমার বলার মত নিজস্ব কোনো বাক্য
নেই
অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে বাগযন্ত্র
ঘ্রাণে কিংবা কানে কিছু পাওয়ারও
আর নেই
সুজাতা বিষয়ক যত গল্প আছে তোমাদের
কিংবা লক্ষ্যহীরা
রাবিশের প্রতিশব্দ সব
একটি মাত্র নামপদ আছে নগ্নিকাদের
কাছে
তাকেই লেহন তারা অবিরাম
ঢেউ
খবর চারপাশে বিদেহী আত্মা।
ঘোরাফেরা করছে। ভেতরে ঢোকার সুযোগ পাচ্ছে না। ছুঁয়ে
যাচ্ছে ঠোঁটে নাকে কানে। চুল মনে করে
দুপাশে সরিয়ে দিচ্ছে নিবেদিতা। গ্রহণ
সংক্রান্ত নিষেধে সে উপবাসী। স্বাদু বা রঙিন সব জলই ত্যাজ্য। খুস্কি
দমনকারী তেল দিয়ে মাথা বাঁধা আছে। চুলই বা আসে কোথা থেকে।
খবরও নাছোড়বান্দা। ঠোঁট দেখে সে ঘোষিকা নির্বাচন করেছে।
বাতাসও ভারবাহী হতে সম্মত। গ্রহীতানির্মাণ
বিষয়ক টেন্ডার জারি হয়েছে। হাট উঠে
যাবার পরও ফাঁকা মাঠে বিকিকিনির অনুরণন চলে। সে খবরও
সংক্ষিপ্ত সংবাদে
গুলমোহর
যে যেতে চায় তাকে বাদ দিয়ে সবাইকেই
আমন্ত্রণ করে গেল গুলমোহর। এরপরের
লাইনটি কী যে পেতে চায় তাকে বলতে হবে। যে
কর্পূর হতে চায় সে বাতাসকে আলিঙ্গন । জল নিজেকে পায় না । ঘাসও নিজেকে। নিজেকে পায়
না গাঁথনির মশলা। গুলমোহরের শিকড়ে কত মোহর লুকানো আছে। তোমাকে গুল বললে মান হবে নাকি অপমান। যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল সে বুঝেছি। আকাশের আমন্ত্রণ ছাপাতে হয় না।
কণাকণা করে পৃথিবীটাকে সরিয়ে ফেলছে
পিঁপড়েরা। কিছু সংবাদ ফেলে যাচ্ছে। সাংবাদিকরা
গল্পেই মশগুল
ফেসবুকের
নর্মদা
সেদিন ফেসবুক থেকে এক তরুণ কবির
একটি কবিতা হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কপি করি । ঠিক সেইসময়েই পুরসভার আবর্জনা
সংগ্রহের গাড়ি এসে দুয়ারে হুইশেল । আগের চব্বিশ ঘন্টায় বাড়িতে যাকিছু ভ্রষ্ট ও
নষ্ট করেছি দুহাতে জড়ো করতে গিয়ে গা ঘিনঘিন, মটকার
সদন্ত,
দৃষ্টির
পিচুটি আর সততার পুঁজরক্তে একাকার
কুয়ো থেকে জলকে ডেকে তুলি। বলি আমাকে তোমাতে ডুবিয়ে কোমর বেঁকিয়ে
বেঁকিয়ে রজকের মত বাসো। ফলত মান-সম্মান, রক্ত-রস, মেদ-মাংস, অভিমান-অভিনয়, চাকরি-স্যালারি, প্রেম-ন্যাকামি
সব ধুয়ে চলে গেল শরীরের পোশাক সহ নর্দমা বেয়ে
আজ সকালে হঠাৎ সেই নর্দমার দিকে
চোখ যেতে দেখি সেদিনের কপি করা সেই কবিতাটি। বুড়ো
আঙ্গুল থেকে জলে ধুয়ে ওই নর্দমায় গিয়েছিল নিশ্চয়। খেয়াল করিনি। আর সে জন্যই তো নর্দমাটি এখন নর্মদা।