শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

গৌতম দত্ত


গৌতম দত্ত

শ্যামা

শ্যামা কি শুধুই রবীন্দ্রনাথের – !
রামপ্রসাদের সুরে শ্রীরামকৃষ্ণ যখন
খোলা গলায় গেয়ে উঠতেন
শ্যামা মা উড়াচ্ছ ঘুড়ি (ভবসংসার বাজার মাঝে)
তখন রবিঠাকুর, রামপ্রসাদ, রামকৃষ্ণ সব যেন
তুবড়ি আলোর ঝর্ণায় এক হয়ে যান

আমারও তো শ্যামা ছিল
ছিল খঞ্জনা, চিল, নীলকন্ঠ, মুনিয়ারা
শহরের উত্তাপে হারিয়ে গিয়েছে তারা
এখন তারা শুধু রিও টেবিলে আলোচনায় !

আমার জ্যান্ত শ্যামা আজ
দুধের সরের বদলে রঙ ফর্সাকারি ক্রিমে
কেমন যেন পাংশুটে, রক্তশূন্য

পোকারা কিন্তু ঠিক সময়ে আলো দেখতে আসে
এখনো







ফুল ফুটবেই

আরও গভীরে যাও আরো— ; এই কথা বলে গান থেমে গেল অকস্মাৎ
বল্মীক গভীর খোঁজে জীবনের উপাচারে শিকড় গভীরে গিয়ে আরো
নিরুপায় রাস্তা খোঁজে সবুজের তাগাদায় আমরা ব্যতিক্রম তাই
পদ্মযোনি খুঁজে চলি সাপের মতন মৃত ছকে শিকারের অপেক্ষায়
একটি সুন্দর মুখ সঙ্গোপনে কতোবার নিরুচ্চার রয়ে গেছে জানি !
কারন আমিই সেই আদিমতা, বন্য, হিংস্র, ধর্ষণ করেছি বারবার
কল্পনার বোধিবৃত্তে লয়হীন অবয়ব দোলা দেয় মিনসে চিত্তে
সংবেদী আচারেই এই কথা জেনে বুঝে চারদিকে ঘেরাটোপ তুলি
রোদের তাপেতে পোড়ে লজ্জামাখা জলছাপ, মনের ভেতরে অন্ধকার
শব হয়ে পড়ে থাকা—, তার চেয়ে ভাল তবু মনে মনে রূপক প্রয়াস

গভীরতা বাঙ্ময় হয়ে যদি ফুটে ওঠে কোনো এক উজ্জ্বল সকালে
তবে জেনো সেই দিন তুমি হবে বকফুল, ঘেঁটুফুল আমার ঠিকানা







অজ্ঞানতা

অজান্তে রেখেছি হাত ; কোরকের নাভিমূলে বে-খেয়ালে পিঁপড়েরা
অতিক্রম করে চলেতাদের চলার পথে সোজা বাঁকা সবকিছু !
অজ্ঞানতা অপরাধ নয়, আপেলের সবটুকু খেয়ে নিয়ে যদি কিছু
জ্ঞানহীন তির্যকতা ; চালাকির দ্বারা কাজ হয়ে যায় অকস্মাৎ
অশিক্ষিত মূর্খ জানে চলাফেরা গতিবিধি শিক্ষিত চালাক মন
ধুরন্ধর তৎসম সত্যি জানে সত্যি শুধু বিশ্বাসে মিলিয়ে বস্তু !
অজানিত রাখা হাত যদি আরো নীচে নামে ; যদি খুঁজে চলে ফের
গোপন সুড়ঙ্গ পথ, পাখীদের বাসা বোনাকিম্বা পাকা আতা ফল ;
তখনো কিঅজ্ঞানতাবিশেষণ ? অথবা সুর্যের আলো নিরপেক্ষ, পৃথিবীতে ?
তার চেয়ে ভাল তবু চুপ করে শুয়ে শুয়ে কল্পনায় স্বমেহন

নাভিপদ্মে হাত রেখে যদি ফোটে পদ্মফুল তোমারি সে আবাহনে
তবে জেনো তুমি, কালচক্র ঘুরবেই  অনুধেয় উত্তরণে






পুড়েই পোড়াবো

আজকে নাহয় আগুন হয়েই জ্বলে উঠি
চৈত্রের দুপুরের গনগনে আগুন নয় ;
বর্ষার শ্মশানে টায়ারে পোড়ানো শবের আগুন নয় ;
তারও চেয়ে বেশী
বৈদ্যুতিক চুল্লীর অন্তরের মতো আজ আমি
জ্বলে উঠতে চাই

আপনারা কারণটা জানতে চাইছেন তো ?
যাতে করে বেশ একটা
সময় কাটানো খিল্লি গন্ধ ভেসে আসে
অকারণ একটা চিয়ার্স করা যাবে ভেবে
সময় পাবেন তো ?

পাঁচ-পাঁচখানা জ্ঞানেন্দ্রিয় আজ আউট-অফ-অর্ডার
চোখে দেখার মত অন্ধকার নেই
কানে শোনার মত নিস্তব্ধতা নেই
নাকে নেবার মত গন্ধ নেই
জিভে স্বাদ নেবার মত জিনিষ নেই
আর ত্বকের যত্ন নিতে বলার মত মানুষ নেই

পাখী তাড়ানোর মত এলইডি আছে
কানের জন্য ডিজে আছে
নাকের জন্য ভরদুপুরে জঞ্জালের লরী আছে
জিভের জন্য পাড়ার মোড়ে মোড়ে দিশীবিলিতি সুরার দোকান আছে
আর ত্বকের জন্য অপর্যাপ্ত কাটাতেলের ধোঁয়া

আগুন হয়েই জ্বলব তাই !
আগুনে পোড়াব আমার প্রেম পোড়া শহরে
আমার ভালবাসা
দাবানলের মতো পোড়াব শহর—,
সেই আঁচে ধিকিধিকি জ্বলতে জ্বলতে
যদি ভালবাসা ফিরে আসে !







অভিমানে তুই

কেন এত রাগ তোর ?
এত অভিমান
বুকের ভেতরে কেন জমে আছে -
ঘুম পাড়ানোর গান
শ্রাবনের এই বর্ষাবেলায়
আকাশ যখন ভিজে
অভিমানের ব্যাথায় কেন
মরিস নিজে নিজে
তোর যে আকাশ অনেক বড়,
যদিও মেঘে ভরা
তাই বলে তুই এমন করে
নিজের মনে একলা ঘরে
অলস বাতাস জাপটে ধরে
মন কেমনের শুকনো বুকে
করবি এমন ধারা ?
রিন রিন রিন চূড়ীর আওয়াজ,
কেমন যেন লাগছে যে আজ,
উদাস উদাস ভাবখানা ওই
আমার কানে বাজে
দুপুর বেলায় শূন্য সোফায়
বৃষ্টি যখন
গান গেয়ে যায়-
কাঁঠাল গাছের গায়ে
রিম ঝিম ঝিম
সেই আওয়াজে,
মন কেন তোর সাজিয়ে চলে
ভায়োলিনের সুর
আমায় নিয়ে ভাবনা যে তোর-
নয় যে অলীক,
নয় যে পাথর,
যায় না তাকে ফেলা
তবু কেন, এমন করে
হাল্কা রাগে
ঠেলিস দূরে
তোর সে লালন-গান
মনের ভেতর টান -
যতই বাড়ে -
পুকুর পারে
সন্ধ্যে নামার পর
ঘরের আলো আরশিজলে
কেঁপে কেঁপে ঘুরে ঘুরে
পাড়ের দিকেই যায়
পুকুর পাড়ের সেই সে ধারে
আলো মেশে অন্ধকারে
সেই খানেতেই তোর আমি যে
অবাক চোখে চায়
সে কোন ঈশারায় ?
তোর সে ডাকে আকাশ ভাঙে
শ্রাবণ রাতের মধ্যযামে
আমি তো কোন ছার !
তোর সে অভিমানের বেড়া
অবাক রাতে দূরের তারা -
বিঁধছে এসে আমার বুকে
আধফোঁটা যুঁই হয়ে
তখন আমার বুকের তাপে
ফুটছে যে যুঁই, অনুতাপের -
গন্ধ মেখে -
সারা পুকুর পাড়ে
আমি তখন দু হাত ভরে -
খুঁজছি তোকে, চাইছি কাছে
আরো অনেক রে
সব অভিমান শুষে নিতে
এক নিমেষের তরে
আমার মনের ভাঁড়ার ঘরে
চারদিকে জল খেলা করে -
আকাশ উজাড় করে
একবার তুই আয়না কাছে,
বৃষ্টিপড়া জলের নাচে
সারা শরীর ভিজিয়ে নিয়ে
আমার বাহুডোরে
দেখব কত অভিমানে -
থাকতে পারিস অন্যমনে,
আমায় দূরে ঠেলে
আবার আমি মাতাল হব
রাতের শেষে মিলিয়ে যাব
তোর অভিমানের জলে