মোহাম্মদ আনওয়ারুল কবীর
দোহাই মেয়ে, ডিনামিক্স মেনো না
সময়ের বেহুদা ক্যাচাল -
গ্রামগুলো শহর হয়ে যায়, উধাও দূর্বাঘাস
কালের সাক্ষী হয়ে পড়ে থাকে হঠাৎ বৃক্ষ
পাখপাখালীও কি ভুলে গেছে আনমনা গান!
কংক্রিট জঙ্গলে আছি বসে -
আহা,
কতোদিন দেখিনি শালিখের মুখ!
পাহাড় বেয়ে নেমে আসে বেনীদোলা কিশোরী
স্বপ্নকাজলে পড়ে যায় ‘ডেভেলোপমেন্ট'ডিনামিক্স -
শহর কতোদূর?
দোহাই মেয়ে,
ডিনামিক্স মেনো না -
স্ট্যাটিক ফ্রেমেই খেয়ে যাও দোল স্বপ্নদেয়ালে।
একাত্তরের গল্প
অযোনীজাত বৃক্ষের শরীরে
প্রবাহিত হয় না দেবাসুরের সংকর রক্ত
বৃক্ষেরা করে না কখনো মিথ্যের বেসাতি
ভূমিপুত্র ওরা,
শান্তসৌম্য সত্যের অবতার।
ইতিহাস সাক্ষী শতবর্ষী বটবৃক্ষকে বলেছিলাম,
'মুক্তিযুদ্ধে
যাইনি আমি, মুক্তিযুদ্ধ
আমি দেখিনিও;
তুমি একাত্তরের গল্প বলো-'
বাঙ্ময় হয় মৌনঋষি। ফিসফিসিয়ে বলে আমায়
'একাত্তরের
গল্প? সে
তো মহাভারত গাথা!
আমি শুধু এতোটুকুই বলবো-
মুখোশে মুখোশময় অভাগা এ দেশ
বেনিয়া লুটেরা বড়ই ঘড়েল
তিলেতিলে খাচ্ছে চিবিয়ে মুক্তির সনদ
একাত্তর কি হয়েছে এখনো শেষ!'
সহসা দমকা হাওয়া,
ঝরে পরে কিছু সবুজপাতা
সংবেদী বৃক্ষও কি ফেলে গেল দীর্ঘ্যশ্বাস।
তার ছিঁড়ে গেলেও
ভুল সংকেতে বালিকার মতিভ্রম
পান্ডুলিপি থেকে ঝরে গেছে অক্ষরগুলো
শুধু রয়ে গেছে ঘ্রাণ -
কে করে কার শূন্যস্থান পূরণ!
দেয়ালে হেঁটে চলা বিষণ্ণ টিকটিকি
সশব্দে আওয়াজ দ্যায় –
তার ছিঁড়ে গেলেও রেশ থেকে যায়।
মেঘের ফাটলে
অতঃপর তিনি বললেন,
‘দৃষ্টি প্রসারিত করো’
দিগন্তরেখা ছুঁয়ে গেলো রেটিনা
চাপ চাপ অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া ক্বলব
আমরা পাঠ করতে শুরু করি -
রিখটার স্কেল ছাড়িয়ে হঠাৎ ভূকম্পন
জলদকন্ঠে এবার প্রশ্ন,
‘বৎস, বুঝলে
কি কিছু?’
মৌনতায় আমরা স্মিত হাসি -
মেঘের ফাটলে উঁকি মারে রাজা ঈদিপাসের মুখ।
সময়ের প্রতিভূ
জীবনানন্দ,
তুমি আমায় ক্ষমা করো
সজ্ঞানেই তোমায় অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছি
পাছে আমার সৃজনে বনলতার ছবি ভেসে ওঠে
শতাব্দী পেরিয়ে ক্লান্ত সময় হেঁটে গেছে বহুদূর
এখন কার্তিকেও ঝুমবৃষ্টি নামায় আষাঢ়ের ঢল
বেগুনী রশ্মি ঢুকে পড়ছে আকাশের ফাটল চুইয়ে
ক্ষয়িষ্ণু সূর্যও জেনে গেছে ভবিতব্য
বদলে গেছে সবকিছু,
চেতনায় জেগে ওঠা নতুন দাহ -
জীবনানন্দ ক্ষমা করো,
তুমি নও,
বরং আমিই আমার সময়ের প্রতিভূ।