শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

সুরজিৎ পোদ্দার


সুরজিৎ পোদ্দার

বিষণ্ণ শূকরের দল

শান্ত হও হৃদয়-ঈশ্বর

স্তব্ধ কর এ পাহাড়ি বৃষ্টি

আলোকিত পাহাড়ি খাতে

যেমন ফুলেরা

তেমনই আজ মেয়েদের ভিড় |

যেন পৃথিবীতে শুধুই সন্ধ্যাবেলা হয়

যেন বিষণ্ণ শূকরের দল,

ইতিহাসে লেখা কিছু বিস্মৃত পল,

যেন অদ্ভুত ব্যকরণ

মানুষের থেকে দূরে

কোনো বিশেষ্য, বিশেষণ|

#

শান্ত হও হে হলুদের আয়োজন

এখানে প্রবৃত্তি রেখে যাও|

রাজার মত পাহাড়ের ফুল নিয়ে

শূকরের কাছে দাঁড়াও

যাবতীয় প্রেমের অবশেষে

হাজার শূকর মিটিং করে

শ্যামবাজারে এসে

তাদের আর্তনাদ..আর্ত করেছে

কবিকে সারারাত

বড় বড় বাড়ি আর মশারির ভিতর

ক্ষুদ্র মানুষ আর মানুষের স্বর

গিলে খায় ,চতুর ইঁদুর আর

খাবারের খুঁদ

পাহাড়ি মেয়ে তোমার ভিতর

এখনও বৃষ্টি হয় নাকি

বিষণ্ণ শূকরের ঘর?







পশ্চিমের নদীতে

তুমি আসবে, এইটুকু মাত্র আবেশে

রোজ পশ্চিমের নদীতে যাওয়া -

সারাদিনের কাজের পরে স্নিগ্ধ যে আলো

তার কাছে শান্তির সংস্থানটুকু খোঁজা

কার কাছে? কার কাছে আর যাই বলো-

প্রতিটি পথ ফিরিয়ে দিয়েছে আমায়,

প্রত্যন্ত আগুনটুকু নিভিয়ে নিয়েছে আলো

যে রাস্তায় একদিন ট্রামে টুকরো টুকরো হয়েছে মহীনের ঘোড়া -

সেই রঙিন কলকাতায়, পৃথিবীর শেষ স্নিগ্ধতা ছাড়িয়ে নিয়েছে হাত

আমি অসীম স্তব্ধতায়

#

অসীম ব্যস্ততায়

পেরিয়ে যাই

একের পর এক ইন্টারভিউ  আর

ঢপের মিছিল, পুলিশ, সব-

শেষমেশ বিপ্লবের লাল চিহ্নটুকু দেখব বলে

পৃথিবীতে এখনও কোমল কিছু ছোঁব বলে

পশ্চিমের এই নদীতে-

রোজ এই প্রাচীন নারীর কাছে আসা

তার লাল সন্ধ্যা টুকু মেখে নিয়ে

একটু একটু করে সন্ধ্যা হওয়া

অশথের ঝুড়িতে, বটের ঝুড়িতে

বাদুড়ের গতিতে হারিয়ে যাওয়া |

সন্ধ্যার শেষ কাক, শালিক আর

মানুষের কালো কালো গল্পে

ধারাল হওয়া|

পশ্চিমের এই নদীতে...







আমার কৃষকপনা মহাকাব্যিক

অন্ধকারে রাস্তা টেনে নিয়ে গাড্ডায় ফেলেছে নাবিক |

এইবার কবিতা লেখা হবে

সিগারেটের আগুন নিভিয়ে আড্ডা হবে

আসন্ন চায়ের দোকানে

#

কোথা থেকে হাওয়া এসে ডেকে যায় আলেয়ার মাঠ

স্মৃতি থেকে সুতো হয় সমুদ্রের স্বর

আমি এই মুহূর্তে বিশ্বাসী|

অবিশ্বাস্য একটা সন্ধ্যা পেড়িয়ে অবশেষে

এইবার হইচই হবে

এইবার আজান, এইবার

#

সূর্যটাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে ক্রেনের মুখে

একে একে দূর্বা, কাশ, আকাশ জেগে উঠবে

যুদ্ধের মাঠে মাঠে সূর্যের শস্য হবে

শস্য হবে তোমার বুকে, কোমরে, জানুতে

আমি উন্মত্ত কৃষকের মতো,শরীরের প্রকৃতিতে

ডাকব ঝড়, ডাকব বৃষ্টিকে

আলেয়ার মাঠ, স্মৃতির সমুদ্র ডেকে আনবে

একটা ঝাঁকড়া গাছের মত অন্ধকার

অন্ধকার           আর চাঁদ,

চালচুলোহীন নাবিক

তোমার মাটিতে আমার কৃষকপনা মহাকাব্যিক







সঙ্গীতা

বিশ্বাসে নিঃস্ব হয়ে পড়ি মাঝে মাঝে সঙ্গীতা

মাঝে  মাঝে আলো থেকে সন্ধ্যার দিকে

নিঝুম নিঃস্ব এক একটা হলদেটে চায়ের দোকানে

পৃথিবীর সমস্ত ধর্মগ্রন্থ, বাণীর ফুরিয়ে যাওয়ার

আড্ডা হয়|আড্ডা হয় মৃত ইস্তাহার

আর হাজারো মূর্তির

স্মৃতি থেকে নিভে আসে নতুন বইয়ের গন্ধ

নিভে আসে ভাগ করে খাওয়া সিগারেটের বিকেল;

কয়েক হাজার বছর আগে যে হাতে জড়িয়েছিলাম সোনালী সমুদ্র

সেই হাতে আজ শুধু হাত আছে ভিন্নতার

টুকে রাখি সেইসব সাদাকালো জেব্রার কথা

আমরা শুধু আমাদের ডোরাকাটা ভিন্নতায় রক্ত-বারুদ-অপদার্থতা

একটা প্রজন্ম শুধু অপদার্থতা

তবু আমাদেরও তো প্রস্তুতি ছিল ভোরের মতো,

শিশির ভেজা দুর্বার মতো দৃঢ়

আমাদের প্রস্তুতি ছিল....

আগুনের আলোটুকু মাত্র ছিল বিশ্বাসে

বিশ্বাসে বিদ্ধ এক একটা দুপুর

সমস্ত চরাচর জুড়ে কি যেন

খুঁজে যায় বৃদ্ধ একটা কাক ,

কালো হয়ে আসে ক্লান্ত নদী পার

অসাড় আমাদের বারান্দা, রোয়াক

ছড়িয়ে মহাপুরুষের ছাই, ভস্ম, চিতা

আমরা আর আমরা নই

মহাপুরুষদের অস্মিতা

আমরা আর আমরা নই

সেলিব্রিটি সমাজ

মৃত মূর্তির পদতলে দিবারাত্রির কাজ

ক্লান্ত তবু ক্ষান্ত নেই, দিবারাত্রির সাজ







ফুলের মত ক্ষয়

কালো হয়ে গেছে আকাশের প্রতিটি কোণা ।

ভালো যে নেই সে কথা বলতেও পারিনা ।

#

অজস্র ধুলোর মাঝেও যে মাথা উঁচু করে থাকে

সেই বিস্তৃত অশথের নিচে

একটা ভেঙে পড়া সময়ের হসন্ত

বিসর্গ হয়ে বিন্দু বিন্দু রক্তের দাগ

কোথায় জমাট বেঁধে আছে?

#

সমস্ত জাল টেনে হিচড়ে ক্লান্ত

ক্লান্ত কোনো স্টেশন আসেনা আর ।

বিকেলের রোদ আসেনা রঙিন ঘুড়ির ছাদে ।

তবু বুনো গন্ধ ঘনিয়ে শীত আসে

#

সব নিয়মই কি রাজার কাছে টানে?

সব নিখোঁজই কি ফিরিয়ে দেয় সাগর?

#

আকাশ থেকেই আকাশ তারা নামে ।

আকাশ থেকেই সময় আসে যায় ।

আর একটা সময় রক্ত রক্ত গন্ধ

একটা সময় ফুলের মত ক্ষয়!