লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
ঢালাই রাতের কবিতা
প্রহর
বেজে যাচ্ছে ন'টা দশটা ; ছাপ ছাপ আঁকিবুঁকি কাটা
ঢালাই রাস্তার ধারে খিস্তি দিচ্ছে তেলেভাজা দোকানদার
গুঁড়ো গুঁড়ো মসলার টুকরো গুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে রাস্তায়
কোথায় যে হারিয়ে যাচ্ছে নিদ্রাভাঙা ঝিঁঝিঁ গানের সুর -
বাতাসে আর্দ্রতার কারনে ঘামের ছাপ ফুটে উঠছে
টিশার্টের গায়ে , ভেজা রাতের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে -
বিউটি পার্লারের মাথায় চাঁদটা মেঘে ঢাকতেই ছনছন শব্দ
সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে
যৌনতার প্রলেপ দেওয়া মুখ
কতদূর মাঠ ,
কতদূর ফুল ,
অফুরান আবছা শরীর
কি দেব রাত্রিকে -
নির্জনের পথটাই স্রোত নেয়
জ্বালাময় বিশ্বের দু-চোখ
!
প্রতিষ্ঠা
জল ভেসে যায় বাল্বের ভাঙা ভাঙা ইলেকট্রিক নিয়ে
দাদু বলতেন - এর নাম শিয়াল তাড়ানো বৃষ্টি
যদিও প্রচন্ড অন্ধকার থাকে মেঘ ঢাকা সন্ধে
আর আমাকে অনুসরণ করে খোকনদার লিকার চা
ছিঁচ কাটা বেঞ্চি থেকে
পিঠে পড়া গুড়োঁ বৃষ্টি ঝাড়তে ঝাড়তে
হাত ভিজোচ্ছি , ভেজা
মতবাদগুলি মনে আসছে কিছুতেই -
কোন পায়ের ছাপ নেই - গড়িয়ে যাওয়া ঘোলা জলে কংক্রিট ভাইরাস
অথবা আমি কীই বা ধারণ করতে পারি নিজের নগ্ন শরীরে , তবে কি
গড়িয়ে যাবার কাল এসে দাঁড়িয়েছ ইলেকট্রিক পোস্টের নিচে
এসব এগিয়ে যাবার কাল -
সমস্ত নোংরামো নিয়ে কাদা মুছে দিতে
চুমুক দিতে থাকি সুতীব্র আত্মহননের !
বসবাস
একটি নিবিড়
সম্পর্কের কাছে অপেক্ষা করছে চৌমাথার রাত
সদ্য উৎকোচ দিয়ে যে কয়েকটা বাড়ি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে
তাদের মাথায় কালো মেঘ , দুরান্তের
কলঙ্কবাহ বাদুড়েরা উৎসুক ,
ঝাপটাচ্ছে অাবছা ডানায় ছুঁয়ে থাকা বাতাসের কান্নাকাটি
আমি তার নাইট বাল্বের দিকে তাকাই , সেখানে নীল
স্বপ্নেরা
বিছিয়ে দিয়েছে শিরা উপশিরার কেবল্ লাইন -
পার্টি অফিসে পৌঁছে যায় নেশাখোর কাঁপনের অবাধ্য প্রলাপ
কোথায় পৌঁছবে মৃত্যুঞ্জয় ; কোন বীজের ভিতর স্থায়ী যন্ত্রণার হাত
সীমিত জীবনের সঠিক
দৃষ্টিপথে তৈরি থাকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি
মিলনের নির্জন কালো পিচরাস্তাটি নির্বাক নদী হয়ে যায় -
একা জেগে থাকা গাছটা আমায় চেনে না - আমি তারই নামে
শিমুল হয়ে যাই
যন্ত্রণা
চলো হে , এবার না হয় ফেরা যাক
সাটার বন্ধ মায়াবী আলো পেরিয়ে
এই রাস্তা শেষে
নাবালের ব্যাপক কাদা চটকে চটকে গান গাই জাজ্ ,
ফেরা যাক রাতের ডেরায়
- বাস এসে থামলে ভাড়া করা রমনীরা
হাঁটতে থাকুক কামুক রাস্তায় ; ঝটপট করা
রাতের পাখিরা প্রচণ্ড ধ্রুপদ,
বিষাক্ত জোনাকির
সাথে ফিরে আসছে শান্ত আঁধার, ভূমিকার পাতা খুলে
শারীরিক হওয়ার আর্তিটুকু
জলজ মাঠের ধানগাছে মিশে যাক -
বুনোফুল হত্যাকারীদের সামগ্রিকতায় হয়তো এ হণ্যমান শরীর
আর দেরী নয় , আমরা তো এখনো
বিপন্ন হই নি মৃত্যুঞ্জয় ;
চেতনার ভিতরে জ্বলন্ত আগুন
দখল ,
খসে পড়ে অকাল ফুটন্তফুল -
হাতের আঙুলগুলোয় অচেনা হাওয়ার ভিড়ে অবিশ্বাসের ডানা -
বৃষ্টি পড়তে থাকে নীরব রাতের বুকে - এত সব পার হতে গিয়ে
দেখি
লুপ্তপ্রায় কাঙালদের হাতে কয়েক কিলোমিটার ক্ষতিপূরণ , নাকি ঢালাই রাস্তা ।
নিরাময়
অবসর নেই , তবুও মেঘলা দুপুরের ভিতর দিয়ে
চলে যায় বিষন্নতা ।
অথচ শুকনো বাঁশপাতায়
তখনও লেগে আছে শিশির, ঝাড়ু দিতে
চেয়ে
দহনের এক পর্বে চিবুক ছুঁয়ে দেয় রোদ –
অনিবার্য এই বেড়ে ওঠা পথের ধারে অপাপ সুর,
কোন নিশ্চয়তা নেই -
কেবল মুঠো ভর্তি পার্থিব ঘাম
সারাদিন এক ঝলক
আগুনের জন্য বিহ্বল , অতীত থেকে
ভাসতে ভাসতে সীমানা ছিঁড়তে থাকে অপরাজিতার তরঙ্গ --