শ্যামশ্রী
রায় কর্মকার
কি মেদুর সর্বনাশ
এই যে বিরাট বাড়ি,আঙিনা উঠান
হু হু করে পড়ে থাকে বাঁধভাঙা
রাতে
নির্জন কুয়োপাড়ে পূর্ণিমা ঝরে
যায় বৃষ্টির স্বরে
তোমার কুয়াশাটুকু লেগে থাকে
আয়নায়,
আর একটা টিপ
টেবিলে লেখার খাতা, কাঠের
কলমদানি
অসমাপ্ত থিওরেম চুপ করে থাকে
শ্রাবণে অঝোর ভেজে তোমার চেয়ার
ভিজে যায় সাইকেলে সিট ও হাতল
শব্দের ভিতর এই শব্দহীনতা শুধু
সাঁতার কাটতে থাকে
তোমার এমন ঘুম,
ঘুমের ভিতর এই এত অন্ধকার
একবার দেখে যাও
কি মেদুর সর্বনাশ ছুঁয়েছে আমাকে
যখন শরীরে জ্যোৎস্না
রাত্রি গভীর বলে অন্ধকার এসে হাত
ধরছে
অবিরত বয়ে যাচ্ছে জোনাকিনদীটি
আকাশ ফাটিয়ে ডেকে চলেছে ঝিঁঝিঁ
দূরে ওই বসতবাড়িটার চালে একটা
দুধসাদা প্যাঁচা উড়ে এল
শিকারি ঠোঁটের চালে তুলে নিল
ধূসর ইঁদুর
আগামী পূর্ণিমায় মায়াময় নদীটির
ধারে
ব্রতকামনায় এসে ডুব দেবে হরিণীর
দল
সাজোসাজো রব তাই
কচি কুর্চির ফুলে সেজে উঠছে
দুপাশের অরণ্যবাথান
মৃদুপায়ে বাতাস হাঁটছে
কুশল জেনে নিচ্ছে গাছেরা
অপরূপ ধ্বংস চোখে নিয়ে এগিয়ে
আসছে শঙ্খচূড় সাপ
স্তব্ধপ্রতিম এই মুহূর্তে
জ্যোৎস্না বয়ে যাচ্ছে আমার শিরায় শিরায়
ছায়াপুরুষের ডাক শুনছি বুকের
ভিতরে
মেলানকোলিয়া
রেলিং ভেঙে মৃদু পায়ে এগিয়ে আসছে
সন্ধ্যে
ধূসর জলে পা ডুবিয়ে বসে আছে কলেজ
স্কোয়ার
মেঘের গা বেয়ে দুটি শান্ত ডলফিন নেমে এল
তোমার চোখের স্রোত বরাবর হাঁটব
ভাবতেই
পথ আটকে দাঁড়াল ঝাউবন
বিনম্র কাজুগাছে টুপটুপ করে উড়ে
এল পানকৌড়ি
মাঠেঘাটে ছই ছপ করে উঠল বিষাদের গাঢ়তর নীল
চিঠির অক্ষরগুলো ভেসে গেলো
পদাবলি হয়ে
সেই লোকটি
ঝনাৎ করে সর্বস্ব ছড়িয়ে দেবে বলে
ভেবেছিল সেই লোক
পকেটের মধ্যে হাত ঢোকাতেই
সমস্ত শরীর মন ডুবে গেল সংসারের
জলে
কী অবিশ্রান্ত মায়া জমে টলটল
করছে সেখানে
তাতে চইচই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে
গেরস্তের হাঁস
হাত বাঁধা অবস্থায় প্রাণপণ
সাঁতার কাটল লোকটা
বাতাস এসে ছুঁয়ে গেলো তার সন্ন্যাসকামী চোখ
চোখের চারপাশে ঘিরে এলো অতৃপ্ত অতীত
ঠোঁটের উপর পিঁপড়ের মতো বেয়ে
গেলো অভাবী বর্তমান
নদীর দিকে ঝুঁকে পড়ল তার নির্বাক
শূন্যতা
আমার মেঘবিষাদ
আমার কাব্যকথা ফুল্লরার বারোমাস ছুঁয়ে
নদীর বুকের নীচে মৃদু বয়ে যায়
কতকাল
ও আমার অশ্বত্থ তমাল!
উতল চিঠির গায়ে ঝুঁকে আসা মেঘের
তাপস!
ক্লান্ত ডাকের মত ধূসর লিখেছ
প্রতিদিন
বুকে ধরে আছি সেই জারুল বিষাদ
আমাকে একার হাতে রেখে গেলে
কুহকের বনে
গভীর ডুবের মত আকাঙ্ক্ষায় দু
একটা ছায়া
দেরাজে গুছিয়ে রাখি অফুরান রাতে
পাতার গন্ধ ঝরে ভরে আসে চোখ
অবসন্ন দিনের আদল
আমাকে পেরিয়ে যায় দীর্ঘ অজুহাতে