শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

তন্ময় ধর


তন্ময় ধর

নাগদেবতার মন্দিরে

পথের রঙ অন্যরকম
বিষদাঁতের ছায়ায় শুকিয়ে উঠছে মানুষের ছায়া, খাদ্য ও ঈশ্বরমূল
মৃত সন্তানের ভিতর দিয়ে আমরা হাঁটছি
গাইডের আঙুল তুলে দেখাচ্ছেন, দূরে বরফ মাখা নাগলোক, ব্রহ্মলোক

আমি জানি, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছিল সেই সন্তান
যার পাশ থেকে বিষাক্ত আমি সরে এসেছিলাম।
সেই পূর্বমাতৃকা, সেই শিশু- যাদের মুখের দুধের গন্ধে
আমি বিষক্রিয়া শুরু করেছিলাম

ছোবলের আগে রক্তবর্ণ কুয়াশার মতো দুলতে থাকে বহুদূর সংসার-গোধূলি
বিষের ওষুধ নেই
গাঙুরের জল ঘোলা হচ্ছে তোমার পায়ে







নৈরাত্মা দেবীর মন্দিরে

অন্ধ কুয়াশার ভিতরে গাছের মতো দাঁড়িয়ে আছি আমরা দুজন
তিব্বতী শ্রমণের রক্তবস্ত্র থেকে ছড়িয়ে পড়ছে বৃহৎ চক্র
অতিজগৎ ও স্তর

আমাদের মুখ নেই, সুখ নেই
পুড়তে থাকা এক ঈশ্বরের সামনে
আমরা হারিয়ে যাচ্ছি

পথের চিহ্ন নেই
অভিশাপ কামড়ে ধরছে আয়ু ও তৃষিত স্বর্গকে
আর একটু, আর একটু

ধ্যানের আলো থেকে শব্দ ও দৃশ্য খসে পড়ছে
আমরা চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি
কাপের ছায়া থেকে উড়ে যাচ্ছে পাখি
সংহতাস্তু হরন্ত্যেতে মম জালং বিহঙ্গমাঃ
নৃসিংহ দেবতার মন্দিরে

অধিক রক্তক্ষরণের পর
হিমালয়ের শান্ত একটি গান ভেসে আসে
ভূস্খলন থেকে দ্যাখো তুমি
মহাকালের সংসারও একটি নদী

আস্তে আস্তে রক্তপাত বন্ধ হয়
আমরা পরস্পরকে চিনতে পারি না
ব্যাস-আশ্রম থেকে উড়ে যায় শুকপাখি
মায়াতরুর পাতা ছিঁড়ে রোদ পড়ে

আমরা ওষুধ নিই
প্রশ্নগর্ভ জল নীচে নামতে থাকে
অকালমৃত ফুল-পাতা সমেত







রক্তদন্তা দেবীর মন্দিরে

শুধু একটা ভুল পায়ের ছাপ
নিটোল অন্ধকারে পড়ে রইল
নুন-মাংস-অস্থিমজ্জায় চুপরঙ আলোর অডিশন থেকে
মুছে যাচ্ছে পাখিশাবকের নখ
নখের সামান্য রুবাই থেকে
আর্দ্রতা বেয়ে উঠে আসা শীতল শস্যকাল

আঙুলের প্রতিশব্দ থেকে জন্মান্ধ উঁচুনীচু
মাংসাশী ফিলে ও সস
আমি জানি, পণ্যসভ্যতায় এত ডিস্কাউন্ট নেই

ভুল পায়ের শীত ঢুকে পড়ে
লাল পাথরের খেলায়







অষ্টভুজা দেবীর মন্দিরে

আমাদের অভিনয়ের ভেতরে একটা শব্দের মৃত্যু বাস করে
এক নীহারিকা থেকে অন্য নীহারিকা পর্যন্ত একটি শিশুর অন্ধকার
বোবা ঈশ্বরের আঙুলে কামড়ে ধরে বিষাক্ত একটা সাপ
আমার ঘুমের পেছন থেকে বেরিয়ে আসেন সার্জন ও অ্যানাস্থেসিস্ট

আমার স্বপ্নের পেছনে তেমন কোন হাস্যকর পর্দা নেই
তুমিই ম্যাজিক শিখছো। শিশু নেই
গর্ভদুয়ারের আলো ঠান্ডা করে এক একটা খেলনা ভেঙে ফেলছো তুমি
মৌনতা থেকে অসুখ ছড়িয়ে যাচ্ছে ঈশ্বরের কণ্ঠস্বরে

আমি ভোরের স্বপ্নের চোখে চোখ রাখি
দীর্ঘ ট্রাঙ্কুইলিজার থেকে তোমার রঙ চুঁইয়ে পড়ে আমার অষ্টধাতুরূপে
কষ্ট হয়