জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
ডুব
ডুবের জন্য কমপক্ষে একটা ডোবা চাই
চাই জল অথবা হাওয়া একরাশ সবুজ
বা কিছুটা স্মৃতি খানিকটা অবসাদ
ব্যথা
মেঘের আকাশ বিস্তৃত বালুরাশি
.......
আমাদের মননগুলি দিনযাপনে গাঁথা
যতকিছু অভিনয় শেষ হয় ক্লান্ত
বিকেলে
দিগন্তের কোল আসলে সূর্যডোবার ঘাট
মগ্ন গোধূলির আলো মেখে পশ্চিমে
হাঁটা
প্রতিটি দিন নির্ধারিত ডুবের জন্য
পথ খুঁজে নেয় ........
আমরা ডুবতে থাকি ডুবতেই থাকি
আমাদের অস্পষ্ট ধ্রুবত্ব এক একটি
অণু সূর্য হয়ে আবার ভেসে ওঠে
......
বিড়ালের মতো
ক্ষুধার্ত বিড়ালেরা বারবার ডিঙিয়ে
যায় একমাত্র পথ
বিড়াল ডিঙানো পথ কাটতে কাটতে আমরা
গন্তব্যে যাই
অপ্রিয় চাকায় জড়াতে জড়াতে প্রতিদিন
প্রিয় ঠিকানা আসে
ব্যর্থ বিড়ালের প্রতিবাদের ভাষা
বুঝি পথ কেটে দেওয়া?
কুটিল চোখের ভিতর কোনও জটিল মন ছিল
না তো!
ভিক্ষার ঝনঝনায় যাদের প্রতিবেলা
কাটে অথবা উঞ্ছবৃত্তি
প্রচণ্ড মেঘের ভয়ে লুকোচুরি গর্ত
খুঁজে ফেরা .........
এই আমাদের বিড়াল জীবন।
রাত
কোমর পর্যন্ত ছুঁয়েছে জলপাই রং
ও নদী, রাত কত
হলো ?
রাতের বয়েস বুঝতে বুঝতে তিনটে সাপ
পাকে পাকে বেঁধেছে আমাকে
শরীর বিছানো আছে ঝাঁপ দেওয়া বাকি
হাত বন্ধ,পা বন্ধ,গলাতে
জড়ানো বেশ ঠাণ্ডা রুমাল
অচিন পাখিটি জানে নবোঢ়ার জন্য কত
রাগ
উৎসুক হয়েছে দু চোখ মুখের ভেতর মুখ
বড়োই মুখর
সচল শব্দে বুঝি তুমি জেগে নদী
রাত কত হলো ?
মাপার ইচ্ছাও জাগে
কখন খুলবে সব সর্পিল টান, কখন
ডাকবে সেই পাখি,
কখন পাঁজর দিয়ে বয়ে যাবে স্রোত,মনে হবে,
আর একটু ঘুমোও আকাশ সন্ধ্যাতারা
জাগো ......
বেহিসেবি রাত ........
জীর্ণ শব্দগুলি নিয়ে
শব্দগুলো ক্লিশে হয়ে যায়
বলতে বলতে বা শুনতে শুনতে
তার মাধুর্য মোহ উৎকর্ষ বা
চমৎকারিত্ব
পুরো বিবর্ণ হয়ে যায়
শব্দের বর্ণ খুঁজতে খুঁজতে হয়তো বা
কবিরাও বর্ণান্ধ হয়ে যান
তখন চিত্রকল্পে শুধুই ধূসর আকাশ।
দানবকৃচ্ছতায় পাওয়া মহাজাগতিক বরে
কবিও কি দাম্ভিক হন ?
একপদ একহস্ত একাঙ্গুলি বা এককেশ
দানবসাধনায় দৈবিক বা মানবিক বোধ
জাগানো
কোনও বর কি বরাদ্দ হয়েছে কখনও --
আমি জানি না
কোন পুরাণে সে কাহিনি আছে কে জানে ?
তবে এটা জানতে কবি হতে হয় না যে
সিংহাসনে বসলে পশুজয়ের শৌর্য
খুব কম রাজাই লাভ করেন
সপ্তরিপু টানা রথে বাকিরা সবুজ আর
সজীব ধ্বংসে মদমত্তমহিষ মহাদম্ভে
অন্ধ
ইতিহাস আর সাহিত্যে তাদের কথাও
লেখা
সময়ের কালিতে অবহেলার মালিন্য
মাখা।
তবু কোনও ধর্ষকামী মন
সেইসব সিংহ আর মহিষের খেলা দেখার
জন্য
উৎসুক হয় না --
আপনি কলমের দিব্যি করে বলতে পারবেন
?
অবগাহন
এখনও অস্থিরভাব জমলো না মেঘ
পাতায় মাকড়সা ঘর প্যাপিরাস পাতার
মতো ওড়ে
মুখোশে ঢাকে সূর্যের মুখ
এই যে অতলান্ত আকাশবিষাদ
বুনোফুলের গন্ধ মেখে জাদুকরি আঙুল
বন্ধ্যা মেঘের থেকে তড়বড়ে বৃষ্টি
নিয়ে আসে
উড়ন্ত দূষণটুকু নর্দমায় গেলে জড়ানো
ওড়না
ঝরা জল অতৃপ্ত প্রেম উপজাত কয়েকটি
ফুল
শঙ্খিনী নদীও জানি রিঠাজলে চুল
ধুয়ে কেমন পীবরা
দিকচিহ্নহীন মাঠে উদ্দাম বালকঝাঁপ
বিপ্রতীপ সুখে
হেলানো জামের ডাল ডোবে কাদাজল,ঘূর্ণি
আর
ঘোলানো লাবণ্যে কোশ - কলা - যন্ত্রময়.......
শ্রাবণ ঘরনি.........