বিশ্বজিৎ রায়
স্বপ্নগুলি
কোনো এক
জাদুবাক্সে আমাদের স্বপ্নগুলি জন্মেছিল ---
চোখের দৃষ্টি
যত বেড়েছে
স্বপ্নগুলিও
তত একটু একটু করে বড়ো হয়েছে ;
লাটাইয়ের
সুতো ছেড়ে ইচ্ছামত ওদের উড়িয়েছি আকাশে,
অন্ধকার ঘরে
ভাসতে ভাসতে
ওঁরা এখন
আমাকে দেখে হাসে ...
জল-কাদা
পেরিয়ে,পাথরে বুক ঘষে ঘষে,
বহু
চড়াই-উতরাই পেরিয়ে খুঁজে পেয়েছি
দুমুঠো
ডাল-ভাত খাওয়ার জীবন --
স্বপ্নগুলি
যে কখন সুতো কেটে ভেসে গেছে হাওয়ায়
খেয়ালই করিনি, যখন দেখলাম, দেখি
তারা ভেসে যাচ্ছে অন্য দরিয়ায় ...
জীবন-নাট্য
সকাল
হলেই মুখে দুমুঠো গুঁজে
বেরিয়ে পড়ি
বেঁচে ওঠার
তাগিদে,
শুয়ে থাকা
রাতের অসুস্থ ছায়াগুলিকে মাড়িয়ে
নেমে পড়ি
ছুটন্ত রাস্তায়,
তারপর দৌড়, দৌড়,
আর দৌড়, দশ দিকে ...
দু-একটা
উসখুস পাতা ও ঘুমভাঙা চোখ
অবাক
দৃষ্টিতে দ্যাখে,
হাত নাড়ে --
রঙিন চশমা আর
ভাটিয়ালি টুপি মাথায়
ততক্ষনে আমি পৌঁছে যাই
স্যানেটোরিয়ামের দ্বারে –
সেখানে দেখা
হয়,
বেঁচে ওঠার
তাগিদে বেরিয়ে পড়া
আমার মতো আরো
অনেকের ,
তারা আমাকে
বুকে জড়িয়ে স্বাগত জানায় --
সবাই মিলে
কমিউন তৈরি করে
এক ছাদের
নিচে বসে মহড়া দিই
জীবন্ত সংলাপের –
ধীরে ধীরে
তৈরি হয় চিত্রনাট্য
নতুন
জীবনের ...
অনন্তব্রতে
মাঝে
মাঝে ক্লান্তি এসে জড়িয়ে ধরে !
মনে জোর
এনে আবার
উঠে দাঁড়াই,
আমাকে যে
অনেক দূরে যেতে হবে
পেরোতে হবে
অনেক চড়াই-উতরাই ...
ছায়ামূর্তিরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে
তারাও দেখি
বন্দী ক্লান্তির নাগপাশে,
আমাকে
দেখে যাদের শক্তি জেগে ওঠে
তারাও হাঁটতে
থাকে আমার দুই পাশে ...
যেতে যেতে
মনে হয় হাঁপিয়ে উঠছে বুক
মন বলে, আর নয় -আর নয়, এ'টুকুই থাক --
কারা
যেন কিছু দিয়েছিল হাতে
তা-ই সম্বল
করে পেরোই ঘূর্নিপাক ...
রূক্ষমাটি, খরনদী, মেহুলবন পেরিয়ে
হাঁটতে
হাঁটতে ক্লান্তি হেরে যায় খর স্রোতে,
বিশ্বাসের
অমিমাংসিত দোলাচলে
তরুন-যুবার
মতো চলি অনন্তব্রতে ...
উড়োজাহাজ
একটা জীবন
উড়োজাহাজ দেখতে দেখতে কেটে গেল---
ছোটবেলা , মেজবেলা, বড়বেলা, সবসময়ই
উড়োজাহাজে
বিভোর আমি,
আমার যত কিছু
ভাবনা,
ঐ
উড়োজাহাজে চেপে পারাপার করে ...
ছোটবেলায় যা ভাবতাম
মেজবেলায় তা
ভাবিনি,
আবার
মেজবেলায় যা
ভেবেছিলাম
বড়বেলায় এসে
তা বদলে গেছে ,
কিন্তু
একটা
বিষয় ধ্রুবক --- উড়োজাহাজ ,
আমার সব
ভাবনাগুলি ওই উড়োজাহাজের পেটে রয়ে গেছে ...
ছোটবেলার
গুলি-লাটাই
মেজবেলার প্রেমিকার চিঠি, কবিতাখাতা
বড়বেলার হা-হুতাশ, ডাক্তারের
প্রেসক্রিপশন,
সব উড়োজাহাজে
চাপিয়ে আমি নির্বিকার থাকি,
যেমন
চোখের সামনে
প্রতিদিন অন্যায় দেখেও
নির্বিকার
থাকেন সুভদ্র জনগন ...
সংগ্রহশালা
দ্যাখো, ভালো করে ঘুরে ঘুরে দ্যাখো
আমার নিজের
হাতে গড়া সংগ্রহশালা --
শুধু আমার নয়, তোমার, তোমাদের সকলের
মূল্যবান
টুকরো টুকরো,
সুখ-দুঃখ-স্মৃতির সংগ্রহ,
সব সজত্নে
সাজিয়ে রেখেছি
তোমরা একদিন
দেখতে আসবে বলে ...
পূর্ব দিকের
ঘরগুলিতে আমার নিজস্ব সবকিছু
সাজিয়ে
রেখেছি,
যেগুলি
কোনদিন কাউকে দেখাতে পারিনি,
ডেকে বলতে
পারিনি -'এগুলি নিয়েই বেঁচে আছি'।
পশ্চিমের
ঘরগুলিতে রেখেছি
তোমাদের থেকে
পাওয়া নানান সামগ্রী--
আমন্ত্রণপত্র, প্রশংসাপত্র থেকে শুরু করে
অকথা-কুকথা, হিংসা-ঘৃণা-বিদ্বেষের সব দলিল,
প্রমাণপত্র, ছবি,
ইত্যাদি --
উত্তরের
ঘরগুলিতে রয়েছে প্রাচীন পুঁথির মতো
আমার অনেক
অপ্রকাশিত লেখার পাণ্ডুলিপি,
যা তোমাদের
চমকিত করলেও করতে পারে।
দক্ষিনের
ঘরগুলিতে রয়েছে
কিছু ভাল
লাগা গান ও ছবির সম্ভার--
যদি কোনদিন
এই সংগ্রহশালায় আসো,
তাহলে
ভালো করে
দেখে যেও সব
আমার এ'জন্মের উপহারগুলি, তোমার জন্য, তোমাদের জন্য ...