সমরেন্দ্র বিশ্বাস
সূর্যাস্তের ম্লান আলো, প্রত্ন পান্ডুলিপি
সমুদ্রের
পাড়ে এখন সূর্যাস্তের ম্লান আলো ।
যে
মানুষটা একা একা ঘুরে বেড়ায় নির্জনে
তার
দুচোখে আজ ধোঁয়াটে কুয়াশা ।
বহুদিন
সামুদ্রিক
হাওয়ারা আগ্নিবান ছোঁড়ে নি বিদ্যুতের দিকে
ঘূর্ণিঝড়েরা
লুকিয়েছে
স্মৃতির আড়ালে
পদশব্দে
নেই মার্চ-পাষ্টের কুচকাওয়াজ !
ভেসে
আসছে যুদ্ধ শেষের শোকার্ত আভা, সময়ের নৈশ সঙ্গীত
শিবিরের
বিশ্রাম কথা, মৃত সক্রেটিসের চোখ ।
সূর্যাস্তের
ম্লান আলোয়
সমুদ্র
সৈকতে একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে মানুষটা
তার
দুচোখের গভীরে আজ অনন্ত জিজ্ঞাসা, প্রত্ন পান্ডুলিপি !
তোমাকে সাজাবো জলে
তোমাকে
পরাবো জলের কামিজ ,
তোমাকে
সাজাবো জলে ।
এই
দেখো ভিজে হাতে আজো লেগে আছে গন্ধ কস্তুরীর ,
বল্কলের
মতো প্রাচীন
পোষাকের ভার যদি নিজে খুলে দাও ,
তোমাকে
সাজাবো জলে ।
বর্বর পুরুষ
আদিম
নগ্নতাকে
ছিঁড়ে
তোমার
পোষাক রুকস্যাকে চুরি করে
ফিরে
গেছে মধ্যযুগীয় কোনো বর্বর পুরুষ !
অহল্যা
ইরাণী, কেন দিলে -
এ
তুমি কেমন রমণী ?
পরবাসে
সবার অজান্তে
আয়নায়
মুখ
নিজেকেই
নিজে প্রশ্ন করি
আমিই
কি সেই ছদ্মবেশী লোক,
মধ্যযুগের
বর্বর পুরুষ ?
হঠাৎ দেখা, পশ্চিমঘাটে
পশ্চিমঘাটের
পাহাড় টিলা চোখে মুখে গ্রীবায়,
আরব
সাগরের হাওয়া ভেসে আসে চুলের অন্ধকারে শরীরে স্তনে
সে
যখন হাঁটে পায়ের শব্দে ছুটে যায় হ্রেষা,
সমস্ত
শরীরে আগামী অরণ্যের অদ্ভুত গন্ধ
দৃষ্টিতে
ঝরে পড়ে কৌমজীবনের প্রেমময় ইতিকথা।
আমি
জানি, আদিম যুগে সে আমাকে চিনিয়েছিল গুহা অন্ধকার
স্বাভাবিক
যৌনতা, নিঃসঙ্গ আর্তস্বর!
তার
কাছেই বহুযুগ আগে আমি শিখেছিলাম
পাথর
খোঁজার পদ্ধতি, সহজপাঠ, বর্ণমালা, চক্রব্যূহ নির্মানের কৌশল ।
আজকে
এই পাহাড়ি পথে হঠাৎই দেখলাম
হেঁটে
যাচ্ছে অরুন্ধতী, রোজা, কিংবা ভেনাসের সমস্ত সৌন্দর্য,
কোনকালে
সে আমার চেনা ছিল, এখন যে তাকে দেখছি, শ্রীদেবী তা কি জানে?
নক্ষত্রের
সমস্ত মনীষা তার মাথায়, সিঁড়ি ভেংগে উঠে আসছে মানবী।
তাকেই
দিলাম আমার আবহমানকাল, দুচোখ ভরা দৃষ্টি
সহস্র
বছর সময়,
অনন্ত
অপেক্ষা
তাকেই
দিলাম যুদ্ধ-পোষাক
শিরস্ত্রাণ
অন্তর্বাস
একাকী
আকাশ, এই
পশ্চিমঘাট
আর
আমার এই মুহূর্তের স্মৃতি !
শকুন
খর
রৌদ্র চারদিকে ।
ডানার
বিস্তারে
ভ্রাম্যমান
শকুনেরা
ছায়াটোপে
এঁকে রাখে
ভারতের
ম্যাপ ।
কেউ
নেই ঘরে ।
গ্রাম
শুদ্ধু গেছে সব
শকুন
শিকারে ।
ফাঁকা
উঠানের ধারে
শুধু
এক শিশু
ঝাঁঝরিতে
জল ঢালে
ঝলসানো
গোলাপের ঝাড়ে ।