শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

শর্মিষ্ঠা ঘোষ



শর্মিষ্ঠা ঘোষ 

ঝাঁপ 

মেনেইছি তো , হার্দিক এই দলিলনামা স্বাক্ষরিত একার দায়ে
ভাগ করবো চিনচিনে সুখ , নাবুঝ কষ্ট , পাগল নাকি !
খুব করেছ ! আকাল খুঁজে মই দিয়েছি নিজের ধানেই !
মাঝের সময় আমার ছিলে? খোঁজ নিই নি তেমন কোন
খরার সময় যা পাওয়া যায়, কাঙ্গাল বাঙাল মনের খোরাক
বৃষ্টি না হোক , স্নানঘরে আজ তোমার সাথেই রাত কাটাবো
হায় দূরাশা ! চোখে তোমার ফ্যালফ্যালে এক দুঃখ টাঙ্গাও 
অন্তরঙ্গ আদান প্রদান চারিয়ে গ্যাছে সুখ বরাবর 
পরাভূত শুরুর পরে আর বেশি কি চাইতে পারি !
একটু ভরাট একটু ফাঁকা হাত কেটেছে মাঞ্জা সুতো
পথ কেটেছি পথের দাবী কলার তুলে ঝাঁপ দিয়েছি
মুদ্রাদোষে টানাছাড়া তোমার এতে ক্রেডিট শূন্য







শীত

উঠোন কমছে ক্রমে শীতের বেলায়
আসি যাই চোখ রাখি সোজা
গিয়ে ঠেকে নিষেধ বেড়ায়
এইখানে গান নেই প্রাণে
এইখানে ফলেছে বিষাদ কমলা বাগানে






ঢং পর্ব

মনের পাশে গ্রীষ্ম বর্ষা ইত্যাদি ঢং পর্ব লেগে থাকে
আদতে এমন কিছু না শীত ছেয়ে থাকে আশিরনখ
লাল নীল মানুষদের জন্য আলাদা ভৌগলিক অবস্হান
লালের প্রতি করুণায় নীলের দুহাত ভরে দেওয়া যায়
কৃপা বর্ষণ তাবড় দুনিয়ার পলিটিক্যাল করেক্টনেস
লাল শিবির বেইমান বলেই নিন্দেমন্দ করে থাকে
নীলেদের রক্ত চিরন্তন সফি ক্লাস ভিন্ন ট্রিটমেন্ট
উদ্গান্ডু না হলে এভাবে কেউ অভিযোগ করে না
ছোট বড় গল্পের পাশে অবিভক্ত তুমি
বড় ছোট মানুষের ছায়া যে যার মত একলা
সব উচাটন তুলে রেখে সব নাগরিক টিকে থাকা
বেলা শেষ হলে তোমাকেই দিতে যাই এখনো
জলুস ঝরে গেছে মেদ বর্ণ গন্ধ এবং চিৎকার
কাঠামোয় লেগে আছে যৎসামান্য আমির প্যারডি
কিভাবে  দীর্ঘশ্বাস বলি কিভাবে ফেরাই চোখ 
যাবতীয় আপনপর লেগে আছে অজানা মুখোশে








ইউথ্যানাসিয়া

বিপণন ভালো যদি তা আমাকেও ইনভল্ভ করে , সে ততক্ষণ খারাপ যতক্ষণ একা একা খাচ্ছে,  মাংসের হাটে শিল্পের বাটে নিত্য বিকিয়ে যাচ্ছি স্বেচ্ছায় , গণ্ডূষ ভরছে , খালি রয়ে যাচ্ছে পিপাসার ব্ল্যাকহোল...এখন লজ্জার তলানিটুকুও নেই , ট্রিপটিজ হচ্ছে অহম সোহম আবরণ আভরণ , নাঙ্গা পাবলিক ভেবে খুশি , কেউ দেখছে না , দেখলেও বুঝছে না কিছু ... আত্মপক্ষ সমর্থনে ক্রমশ আক্রমণাত্মক তেড়েফুঁড়ে উঠছে আঙুল চোখমুখ হিংস্র হাত পা বিলীন হয়ে ফুটে উঠছে উদ্যত ফণার সাপ , ওর মুখে ছায়া পড়েছে বিষাদের , স্তব্ধ হয়ে গেছে আদরের গুনগুন...
উৎকণ্ঠিত এমন ইউথ্যানাসিয়া যমরাজ আগে দেখেন নি , এমন বর বেশে কেউ শবযাত্রা করে নি নিজের, এমন ইচ্ছে পূরণের অবাক গল্প হয়ে থাকে নি অন্তিম ,  এমন ভি আই পি ট্রিটমেনট পায় নি তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক... জনতা জনার্দন পয়েন্ট গুছিয়ে বসে পড়ে নি টি ভি র সামনে ডিবেটে , দেশজোড়া বেটিং হয় নি ,  প্রতিবেশি দেশ আলোড়িত হয় নি অভিযোগের তিরে ...
সবকিছুই এত পাবলিক হয়নি কোন প্রাইভেট মরণের , হলফ করে বলা যায় ও নিজেও এতটা আশা করে নি...








প্রেম মানে বিউটিস্পট

যাকে পটানোর জন্য বিনা নিষেকেই প্রথম পদ্যপ্রসব তার তখন বয়েস তেরো । আমার তার থেকে একবছর কম । ফোটন স্পিডে তিনবছর টপকে সে প্রেম ক্রাশল্যান্ডিং করলো নিমতলায় ... কাঁচা বাঁশে আছোলা ধোঁয়াও বেশ ভালোই দিলো , দূরদৃষ্টি আমার এমনিতেই একটু নাব্য টাইপ , তো সেই তূরীয় আনন্দ মনের সুখে আমায় ডুবাইল রেএএএএ আমায় ভাসাইল রেএএএএ  ...  কি আশ্চর্য এই সমস্ত শোচনীয় গর্ভপাতের পরও পদ্য লেখা ছাড়ার বদলে আমি আর একটা সফট টার্গেট আই মিন আর একটা যেনতেন প্রেম জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম... হ্যাঁ , মশাই , ভুল দেখছেন না, প্রেমিক নয় ,দাঁড়ি কমা হীন প্রেমটাই মুখ্য ছিল ... মানে ঐ আর কি , জাহাজ মাস্তুল উলুখাগ্রা ম্যাটার করে না, জলটাই যা ভেজায় অশ্লীল, ভেজায় আর ভিজে যেতে দ্যায় উন্মুখ শিহরণ ... তো সেই থেকে আমার কাছে প্রেম মানে দাঁড়ালো বিউটিস্পট । থাকলে ভালোলাগে , না থাকলে কাজল দিয়ে মাপমতো এঁকে নি পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্স এর জন্য , কখনো ডান গালে তো কখনো বাঁ ,অন্যের চোখের আড় চাহনিতে ঈর্ষা আছে ভেবে নিজেনিজেই পুলকিত হই । ব্যাপারটা আবার খানিকটা ব্রনের মতো , গোদা বাংলায় বয়সগোটা। প্রেম মানে ঝিঞ্ছ্যাক বোঝা মাত্র যিনি হৃদয় প্রদেশে হরমোনাল ডিসব্যাল্যান্সের কারণে উদিত হন , পুনঃপুনঃ অস্ত গ্যালেও তার উচ্ছিষ্ট দাগ থুরি আভা রয়ে যায় ... আহারে , জীবন কুসুমকুঞ্জ মাঝে , তখন কি বা শোভে প্রেমের অরোরা বোরিয়ালিস । সে মরলেও গুজগুজ ফুস্ফুস রয়ে যায় পরিচিত মহলে । পোষ্ট মরটেমের জন্য হাতুরের ছড়াছড়ি ।  তো এহেন প্রেম লাগি দিল্লাগি আমার হ্যাংলা হয়ে দাঁড়িয়ে  রইলো বিশ্বপ্রেমের নিবিড় বন্ধনীতে , তার আর পর নেই , নেই কোন এমন পাগলা দিবানা ...