শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল


ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল

রোজ

সিটবেল্ট বেঁধে ওপর থেকে তোমাকে দেখলাম
তুমি আলোয় সেজেছো কথামালা
তোমায় ধরতে গেলে বর্ণ বিছোতে হয়
আর হল না পূর্ণ ষোলোকলা।

আকাশ থেকে আকাশ দেখেছি রোজ
ওপর থেকে তোমার জলের স্রোত
সবই আমি হেলায় করেছি পার
ওড়ার পথে স্বপ্ন আসে আবার।

মেঘের রঙে তোমার মুখ ভার।

এসেছি তাই তোমায় নিতে খোঁজ
সাইবেরিয়া-ইরাক-ইরাণ বেয়ে
মেঘের ভাঁজে আলোয় চেয়ে চেয়ে
আর হবে না, তোমায় দেখবো রোজ।







বর্ণিল

গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে নামে সংশয়
সোনালি বিকেল ভেজে শরতে
কংক্রিটে ঝরে পড়ে শিউলি
কানে ভাসে বানভাসি মহালয়।

উঠোনে নিকোনো আলপনা
ময়দানে ঘোরে ছেঁড়া জামা
খিদের মুখেও ফোটে কাশ
জলে গুলে রাখি কল্পনা।

নিথর আলাপ জমে জমে
কালও ছিল দিন ফুলে ফুলে
আজও উমা আসে প্রতি ঘরে
জীবন পড়েনা তবু সমে।

শিশিরের জলে লেগে পঙ্কিল
ব্যথাগুলো হোমানলে জ্বলছে
সুখদাং বরদাং বরাভয়
পটুয়ার টানে হোক বর্ণিল।






উত্তর দেবার আগে

সুগন্ধ ভরা তুলসীমঞ্জরীর অপরাহ্ন
     রূপকথার জগতে সুদূরের ইশারা
        ছাতার পাখির কলরব
            ক্লান্ত মাঠের শেষে
                একটু বসে নাও।

বন ঝোপের শুকনো পাতার ওপর
     ঝাঁ ঝাঁ করছে রোদ্দুর
        অবকাশের মধ্যে স্থান নেই
              মুক্তির।

ভাঙা কার্নিশে বেড়ে ওঠে আগাছা
     নামহীন স্টেশন সন্ধ্যা মাখে
         বিষ্ময় জড়ানো মনসাতলা
             শুধু খোঁজে
         তেলে জলে মাখানো কথা।

         উত্তর দেবার আগে
               একটু বসে নাও।






স্বতন্ত্র

কোল ভরা ধান
তটভূমিতে আছড়ে পড়া ঢেউ
      ঠিকরে পড়া আলো
           ফোঁটা ফোঁটা শিশির
             আর ছিল কপতাক্ষ নদ।

সরু সুতোর মতো জল
      কালিঝুলি মাখা পা
            উড়িয়ে দেওয়া ধুলো
              শামুক তোলা ডুব
কাছে পেয়েও হারিয়ে যাওয়া
                সুখ।

        কাক পরিত্রাহী
     বন্দেমাতরম্ গান
হাততালি দেওয়া শিশু
           ফেনিয়ে ওঠা মিছিল
               তবু সবাই জেনো
                   হয়না
                       প্রতিবাদী।






জেলখানা

ফণা তুলে ঘুরে যায় বিষধর
      সারারাত ঠকঠক্ কাঁপুনি
          হিমে হিমে ভরে থাকে জলধর
              হারা পথে খুঁজে চলে একা মন।

সীমানায় বুক চেরে কাঁটাতার
      স্বাধীনতা পেতে মন হারেনি
          শিশিরের গায়ে লেগে রক্ত
              পরাভবে হার তারা মানেনি।

চাঁদহীন দিন যায় নিশিদিন
      উদ্যত বর্ষায় আসে দুখ
            শত্রুর দিন নেই বেশিদিন
                চোখে ভাসে প্রিয়জন, প্রিয়মুখ।