শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০১৮

সমীরন চক্রবর্ত্তী


সমীরন চক্রবর্ত্তী

সেই মেয়েটিকে
      
কোথাও একটা মন খারাপের মেঘ
দু'এক পশলা বৃষ্টিমাখা রাত,
কোথাও একটা খোলা জানালায়
জাগছে একটা কাঁকন পরা হাত।

কোথাও একটা সাদা বকের সারি
ঝাপটে ডানা আপন নীড়ে ফেরা,
সন্ধ্যে হলেই মন খারাপের ভীড়ে
স্মৃতির-ঘুনে পোকার নড়াচড়া।

কোথাও একটা চপলমতি নদী
কলকলিয়ে আপন কথাই বলে,
চলার পথে গাঁথছে শুধু মালা
সুখ দুঃখের নানান রঙের ফুলে।

কোথাও একটা অবুঝ ছেলেবেলা
সবুজ ফ্রক আর সাদা রিবন চুলে,
স্মৃতির পাতায় ঝুলের পরিপাটি
চেনা মুখটাই আজ গিয়েছি ভুলে।







জলছবি

এখন আর ভেবে কি হবে বলো,
একটাইতো উঠোন ছিল আমাদের...।

মনে আছে তোমার?
গেল বছর পয়লা বৈশাখে
ভিজে ছিলাম হাপু্স বৃষ্টিতে,
বুক ভরে গন্ধ নিয়েছিলাম,
তুমি, তোমার ভেজা চুল,
আর মাটির গন্ধ মেখে ছিল
বকুল ফুল।

তুমি হ্য়তো ভুলে গেছ সব,
উঠোনতো আর ভুলতে পারে না...

জানোতো, আগের মত কোন কিছুই আর নেই!
না আমি, না তুমি,... না আমাদের মাটি, না বকুল ফুল।

বৃষ্টির ঝাপটায় সব রঙ ধুয়ে যায়
চশমার কাঁচ ঝাপসা মনে হয়,
রামধনু রঙে আঁকা সেদিনের ছবিগুলো
আজ, জলছবি ছাড়া আর কিছু নয়...।








পথের কোনো ঘর থাকে না

কাল সারারাত মেঘেদের শ্বাসকষ্ট দেখেছি
নাগরিক আকাশে,
চাঁদে ওঠার সিঁড়িটাও ফেলে এসেছি
রাহুর বাস্তু-ভিটেয়।
হেঁটে আশা সমস্ত রাস্তাই
সাপের চেয়েও শীতল মনে হয়।

আজ যেখানে দাঁঁড়িয়ে আছি
তার ঠিক এক পা পেছনেই হীরের হাতছানি
আর সামনে সাপের ভয়াল জ্বালামুখ!
তবুও, আর একটি পাও পেছনে ফেলবো না।

রাস্তার কোনো ঘর থাকে না
সামনে আনেক পথ বাকি,
তাই আবারো বলছি,
হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো-
আর একটি পা ও পেছনে নয়...।








পলিথিন সভ্যতা

হেঁটে যাই বিষণ্ন প্রান্তরে
আমাদের বিগত জন্মের স্মৃতিরাও ফিরে গ্যাছে এ পথ ধরেই।
সমুদ্রগামী ট্রলার আর ভাগাড় থেকে ফ্রীজার
সব...,  সবই সয়ে যায় পাতে আর পথে,
মাইথন থেকে  থাইল্যান্ড হেঁটে
কালো চামড়ার রূকস্যাক মর্টগেজ রাখি ভিন দেশি মর্গে।
ওদিকে তখন মৃত তিমির পোস্টমর্টেম শেষ হয়েছে সবে,
ডিসেকসান টেবিলে রূটমার্চে মত্ত আশিটি পলিথিন ব্যাগ।

এ সভ্যতা শূন্যে হাত ছুঁড়ে জানিয়ে দিয়েছে আগেই,
তাদের আর পলিথিন ছাড়া হারাবার কিছু নেই।


এবার তাহলে ফেরা যাক শুরুর দিনের সেই পর্ণকুটীরে
আমাদের বিগত জন্মের সব স্মৃতিরা ফিরে গেছে যে পথ ধরে।







এক থালা ভাত

শেষ পাতে চাটনি, পায়েস, পাঁপড়
এ আমার চাওয়া নয়,
চাইতেও আজকাল বেশ ভয় হয়,
বরং ক্লান্ত দিনের শেষে
উঁচু কানার থালা ভরা ভাতই যথেষ্ট আমার জন্য।

চাইলেই ফিরে যেতে পারি না
চার ভাই-বোনের বনিবনাহীন শৈশবে,
একবার যদি ওখানেই ফিরে যেতে পারি
তাহলে বাটি ভর্তি ঝোল থেকে
আধখানা ডিম তুলে নিয়ে
ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে
আবার রেখে দেবো বাটির ঝোলে।

তবে কি জানো!
ক্ষিদে আমার চোখে নয়, মুখেও নয়,
ওটা শুধুই পেটের...।