বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

গায়ত্রী ভাদুড়ী


গায়ত্রী ভাদুড়ী

যাত্রা

মাথার ওপর দিয়ে প্রসারিত নীলের ছাউনি।
হেঁটে চলেছে রাস্তা, ঘরবাড়ি, স্বপ্ন,....
মাঝেমধ্যে থামছে কয়েক সেকেন্ড!
একটু হাত দিয়ে সেই সময়েই দেখে নেওয়া
ফাটা ভাঙা ছবি কিংবা পেরিয়ে আসা বৃষ্টির পর
রোদ ঝলমলে সকাল....
এক একটা যুগ....
পেলবতায় পড়ছে আঁচড়, নামহীন ক্ষত-
প্রকোষ্টের অভ্যন্তরে নিয়ে
হেঁটে চলেছে সভ্যতা.....!
নরম মন একটু একটু করে শক্ত হয়ে উঠেছে।
পেরিয়ে যাচ্ছে নদী, ঝরনা, শহর।
আঁচড়ে পড়েছে শরীরে বেদনার ঝড়,
দু একমুঠো সুখও এসেছে,
গভীর অসুখেও কেঁপেছে সর্বাঙ্গ।
বৃত্তাকার পথে কত কী.......
হঠাত হঠাত চোখ বেয়ে জল নামে,
কোটরে জন্মায় বিষাদ।
রাত হয় দিন হয় .....
কোন প্রান্তে ক্ষোভের নিভু আঁচ এখনও...
কখোনো ভেঙে পড়েছে রোদ ঘাসের বুকে
সভ্যতা ছুঁয়ে দেখেছে রঙ
বুকে আগলে রেখেছে প্রেম;
কিছু অপ্রকাশিত ইচ্ছে......
আরশি হয়না দ্যাখা কবেই ভেঙেছে
ভাঙা আরশিতে মুখ দেখতে নেই যে!
তবে এখন একটা চশমার খুব দরকার ....।
অকালেই দৃষ্টি হয়েছে ঝাপসা,
আনাচ কানাচ যে চোখেই পড়ে না
হোঁচট খেতে হয় মাঝে সাঝেই.....!
এত ভাবার সময় নেই হাতে আর,
ঘুনধরা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ে কষ্ট হয় চলতে,
থামলে হবে না,যেতে হবে...।
গাইতে হবে অন্তত জয়ের গান শেষ বেলায়....
সভ্যতা সময়ের হাত ধরে চলেছে
ক্রমশ অন্তিম কালের টানে....
জন্ম দিতে হবে আবার এক নতুন পৃথিবী!
বুকের অভ্যন্তরে,কোনো এক সূর্যস্নাতা ভোরে......।

                                   




কাহিনী

আজ আর একবার
বৃষ্টি নামতে দেখলাম
লাল নীল সবুজ
কত রঙের চোখ ধাঁধানো!
উড়ন্ত ভিজে গাঙচিলের মুখে
একটা মৃত সরু সাপ।
চোখ ঠিকরিয়ে বেরিয়ে আসছে
পদানত করবার উল্লাস!
কয়েকটা রঙহীন বৃষ্টিও গোচর হল,
ওরা গা বাঁচিয়ে আশ্রয় নিয়েছে
অনতিদূরে ঝাপসা কার্নিশে।
হয়তো রঙে বিতৃষ্ণা, কোনো কারণেই...
দিগন্ত ছেয়েছে অনামী গুল্মের বাড়বারন্ত।
বাতাসী ধূসর নির্জনতায়
শোনা যায় সময়ের বহমান শব্দ।
দিনের আলোয় যে অবয়ব গুলো ঘুমিয়ে থাকে
রাত বাড়তেই জেগে ওঠে।
রঙীন বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে!
আমার গায়ে লাগে রঙহীন বৃষ্টিছাঁট।
চার দেওয়ালে কসমিক শূন্যতা!
কাগজের ভাঁজে বৃত্তান্তে লেখা ইতিহাস থেকে
উঠে আসে মুঠো ভর্তি পরাজয়ের কাহিনী।
চিক চিক করে ওঠে চোখ....
অন্য প্রান্তের আকাশে হয়তো জয়ের রৌদ্রজ্বল দিন...।







বিষন্নতা

মনবাষ্পের অসুখ
আধাঁর জ্বরে ভুগছে।
শিরার বিষণ্ণতা হাত রাখে...
নীলের গোলাঘরে।
আয়তকার তুলোর কাছে
বন্দী একাকীত্বরা ক্লু রাখে,
মন গহীন জুড়ে প্রেমের কল্পগাথা
ক্লান্তির পাথেয় নীরবতা।
স্মৃতি বিস্মৃতির তল ছেড়ে.....
ক্ষণ বিপ্রলম্ভের মদিরতা।
ঘুম মেখে চেয়েছি.............
আজীবন ঘুমের আস্বাদ।
রাত্রিগুলো দিনপঞ্জিতে বেধে.....
বিতৃষ্ণা ঘৃণার পাহাড় হৃদয়ে রেখে,
লিখছি আত্মহারানোর নোট।







ফসিল

একরাশ ক্লান্তি জড়ো হতে থাকে পল্বলে।
স্তব্ধতা জমা কাঁচে বৃষ্টি নামে অবেলায়,
গতজন্মের ঝাপসা ছবির মতো...
ফুটে উঠতে উঠতে স্পষ্ট হয় জলছাপ।

পাঁজরের খাঁজে আশ্রিত সদ্যোজাত রোদ,
বসন্ত রঙ, দীঘল পথের টুকিটাকিতে
বিষাদী নীলচে রঙের আস্তরণ!
ঝকঝকে দৃষ্টি ফ্যাকাশে হয়,
মসৃনতায় কালের গতিতে জরা ধরে,
তার ভাঁজে সঞ্চিত অভিজ্ঞতাও শিথিলতায় ডোবে।
উদাসী হাওয়ায় ঘোলাটে হয় প্রেমিক আদল!

ডুঁকরে কেঁদে ওঠে মন,অজানা অমোঘ টানে!
তাক থেকে ধূলো ঝেড়ে হিসাবের খাতাটা
দেখে নেবার পালা!
অমিল অঙ্কের পাতায় আঙুল হাতরে
উঠে আসে একমুঠো ছাই।
শূন্য বক্ষে বেলাগাম সময় ছুটেই চলেছে!
ঝরছে মুহূর্ত সবুজবৃন্ত থেকে,
গতিপথে ম্লান একলা চাঁদ চেপে ধরে হাত।
প্রেমের মরশুম শেষ হয় অগোচরেই
পেরিয়ে যায় বাতাসে বাসন্তী আঘ্রাণ,
সময়ের গর্ভে সঞ্চিত থাকে ঝরাপাতার  বিদগ্ধ ফসিল।