শাহরিয়ার রুবাইয়াত
নিপীত প্রণয়
সেই কবেকার কথা-
এক প্রভাতে হলুদ
শাড়ির আঁচল
ডালপালা মেলে ধরে
ছড়িয়ে পড়লো বাতাসে।
এক বিকেলে কথা হলো
আর দেখতে দেখতে
পেরিয়ে গেল কতটা পথ,
তারপর দিঘির জলে উড়ে
এলো পানকৌড়ি
চুপিচুপি ডুবসাঁতার
গোলাপি পালক, অলস স্ট্র
ভালবাসা মেলে ধরা
আকাশী নীল চোখ।
জনান্তিকে-
তাকানো শব্দের চোখে
আগুন লাগিয়েছে চেনা রোদ্দুর।
এত প্রাণ কোত্থেকে
পায় বলাকারা উড়ন্ত স্বপ্নের পথ পেরোতে পেরোতে
তেমন করে জানা হয়ে
ওঠেনি কখনোই।
ক্ষণিক সন্ধ্যার শেষ
আলোটুকু মিশে যায় গঙ্গায়
তারপর ভেসে ওঠে প্রভাতে;
যেমন করে চেনা পথে
হেটে যেতে যেতে
আঙুলে আঙুল মেশে
ঘেমে ওঠে পরিচিত হাত;
আর ডুবে যেতে যেতে
তাকিয়ে থাকে চোখের পাতা
ম্লান মোহের নিবিড়
বেদন বোধে।
সন্ধ্যার শাঁখ
বাজতেই
সাঁওতালি বক ডানা
মেললো পূর্বাকাশে।
ভেতরে বুদ্বুদ, নীল হয়ে ওঠা ঝাপটানো
পাঁজর
আরক্তিম প্রেমের মত।
গোধূলি নামতেই
সমুদ্র নেমেছে জোয়ারে
স্বপ্নের সীমা ছেড়ে
আশ্রয় করেছে অস্থিতে,
গোপন জলের মত
শীত, গ্রীষ্ম আর বর্ষায়
পূর্ব থেকে পশ্চিমে
কাজলপাতার প্রেমে।
পৌনঃপুনিক স্বপ্ন
আলো-আঁধারির বিম্বিত
জানালায়
কেবল একজোড়া কাজল
চোখ,
কোন বিভ্রম নেই-
সমুদ্র বোঝাতে কিংবা আকাশ
সাদা-কালো কেশে
গঙ্গার ধার
পদ্মকাশ, কাঙ্গুল, হংসপক্ষ অথবা
তাম্রচুড়
গোধূলিলগ্নে ভেসে
আসে দূরান্তের সবুজ পাহাড়।
কুয়াশার জ্যোৎস্নায়
উড়ে আসে নীল কালিম
বৈকুন্ঠের কন্ঠে
বাজে অষ্টমী সঙ্গীত,
পদ্মের কটি ধরে
দিঘীর জলে কাজলপাতা
বাতাবির ঝোপে লিখে
চলে পান্ডুলিপি;
ভালবাসার স্পর্শে
ফুটে ওঠে স্নিগ্ধ জলাশয়
পূর্ণ পূর্ণিমার
অনন্ত রাত্রির বুকে।
আকাঙ্খার স্বপ্নেরা
জ্যোৎস্না বুনছে বুনন সূঁচে
আর কিছুটা বছর আগেই
যদি পাওয়া হতো!
প্রগাঢ় চুম্বন, বুকের গন্ধ আরো কত
কি!
আঁচলে বিছানো
মায়াভরা নিঁখুত সংসার!
অংশুমান অদ্রিজা
ছুটে যেত এ ঘর সে ঘর!
যুগল পানকৌড়ির নিত্য
জীবন আনন্দে।
অবশেষে ঝুলন্ত
বিলম্বীর কাঁচাপাকা মোহে
আটপৌরে আলোটুকু
অন্তে গেল;
মদনবাবুদের
শ্যাওলাধরা ঘাটলার জলে।
শেষ অগ্রহায়নের
শরীরে তীব্র হয়েছে কুয়াশার রাত
প্যাপীরাসের হলদে
শরীরে পুঞ্জীভুত শব্দেরা করছে চিৎকার
শীতকাতুরে প্রেম
মাস্তুলের অনঙ্গে দুলছে পৌনঃপুনিক।
অনুরতি
বুকের মাঝে জমে আছে
প্রবল জলের ধারায় এক সমুদ্র
এক আকাশভরা রাত্রির
বুক চিরে অযুত নক্ষত্র!
লাল-হলুদে পুঞ্জীভুত
হয়েছে হৃদয়ের পরোয়ানা
আহার নিদ্রা তুচ্ছ
করে পড়ে আছে কতশত অভিমানী ভাবনা,
ঢেউয়ের দোলায়
মাস্তুলে জমা হওয়া যত আলোড়ন
বুকের চৌকাঠে এসে ঘর
বাধে বকুল বসন্ত মিলন।
দেয়ালের গায়ে কান
পেতে আছে উড়ন্ত মেঘমালা
শ্যাওলার গন্ধে বয়ে
যাচ্ছে বসন্তের স্রোতধারা
সহসা স্নানে রক্তিম
হয়ে আছে সন্ধ্যার উঠোন।
ক্রমাগত স্বত্তায়
তরঙ্গায়িত হচ্ছে সুনীল জ্যোৎস্না
মর্মরিত অরণ্যের
কাছে আছড়ে পড়ছে ধূসরা মগ্ন ঘুম
জানালার গরাদে চোখ
রেখে চেয়ে আছে তাত্ত্বিক বোধিদ্রæম।
ভালবাসা উড়ে চলে
অনন্ত আকাশে বৃষ্টির হাত ধরে
সারিবদ্ধ কবিতায়
রাশি রাশি শব্দেরা ঝড় তুলে ছুটে যায়!
হৃদয়ের চোরাগলিতে
পেরেক ঠুকে তৈরী হয় রেলওয়ে জংশন
শীতার্ত সকাল শেষে
নিঃশব্দ শিউলীফুল ডানা ঝাপটায় মন্দিরে
পথের ধূলোরা উড়ে
যাচ্ছে পশ্চিমে কার্তিকের সীমানায়
হঠাৎ বাতাসে ফানুসের
হাত ধরে নীলাঞ্জন উড়ে যায় জ্যোৎস্নায়।
কতশত মধ্যরাত কেটে
গেছে পাতাঝরা ব্যালকনিতে
দুঃখ পুড়িয়ে
জলপ্রপাতের সাথে হেটে গেছে সবুজ অন্ধকার
দত্তদের বাড়ির পথে
রক্তজবারা সমস্বরে করেছে চিৎকার।
একান্নবর্তী আলোয়
দিঘীর জলেরা ছুটে গিয়েছে বেলাভূমিতে
সীমান্তের একলপ্ত
কাঁটাঝোপে প্রহরীরা গেয়ে গেছে বেদনার সুর
আষাঢ় চলে গেছে ফিরে
গেছে শ্রাবন রাঙানো হয়নি সিঁথির সিঁদুর।