বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়


সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়

ন্তব্য

প্রতিটি স্টেশনে রেখে যাচ্ছি চলাচলের ইতিহাস
ডাঁই করা সোলার থালা আর শালপাতার মধ্যে
সূর্যমুখীর অস্তিত্ব নিয়ে ডানা ঝাপটাচ্ছে শব্দরা।
তাদের গায়ের পচা আঁশটে গন্ধ সাফ সুতরো করে
হুইসেল দিচ্ছে গার্ড, ঝিকিয়ে উঠছে ট্রেন ।
পড়ে থাকছে সুদীর্ঘ ছায়া মাখা জীর্ণ অভিশাপ,
কত রকমের লোক! কত চেনা অচেনা মুখ,
মুখোশ, খুচরো পয়সার মতো ঝনঝন করছে সম্পর্কগুলো!

একটি স্টেশন অন্য স্টেশনের দিকে কাতর চিত্তে
তাকিয়ে থাকে, মানুষের সাহচর্য চায়।
পৌঁছে বুঝতে পারি জীবনের গতিমুখে
অবিরাম আলেয়ার ডাক!
আলো নয় আলো নয়, আলোর মতো ভ্রম খেলে,
সেইই ভ্রমণে নামিয়ে অলক্ষ্যে হাততালি দেয়।

সরীসৃপের মতো আঁকাবাঁকা গন্তব্য সবার
কে কোথায় পৌঁছে যায়,সে যে নিজেও জানে না,
কেবল পথের পাশে মাইলস্টোনে উৎকীর্ণ থাকে
সংখ্যার বিচিত্র হরফ!
আমরা গুনতে গুনতে পৌঁছে যাই যে যার উদ্দেশে... 








দুধসাদা মেঘের পা

বৃষ্টির সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসে দুধসাদা মেঘের পা,
পায়ে বাঁধা বিদ্যুতের নূপুর,
ঘরে কিচেনে চিকেন ফোটে,
চৌকাঠ ডোবা জলে জোঁক ও কই মাছের সাঁতার !
তোমার পাঁজর ফাটিয়ে
জিরাফের মতো লম্বা গলা বারিয়ে
ছুটে যেতে চাইছে জরিবুটি,
সমস্ত অযাচিত মৃতদেহ রঙ করছে বনমানুষের দল,
টিভিতে নাচছে অলৌকিক নিরাময়।
তুমি নিশ্চিন্তে গ্রাস তুলছ মুখে,
গন্ধে ম ম করছে ঘর,
ঈশান কোনে কার্নিশে নূপুরের শব্দ থিকথিক করছে,
যত শুনছি মনে হয় কোনো চেনা সুর !

পাখির মতো পাখা মেলে ভিজে যাচ্ছে হার্দ্য কবিতা,
শব্দের শরীর জল টুপটুপ,
যত দেখছি তত মনে হচ্ছে মহাকালের মঙ্গল কাব্য !

পাতারা বুক পেতে ধারণ করে আদিম শোকগাথা
জালিকায় অরন্ধন কাল,
তাকালে আমি বুঝতে পারি ভাত ফোটার গূঢ় শব্দ!

বৃষ্টির সিঁড়ি, মেঘের পা, বিদ্যুতের নূপুর ও কবিতা,
উদ্বৃত্ত চিকেন মাখা গোধূলিবোতল
উপুর করে ভরে নিচ্ছে পেগের পরে পেগ !

যত ভাবি তত ভাবনা-বাউল রক্তে দোতারা বাজায়,
চাটের সাথে চিকেন পকোরা হাসে
আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে চাপা আলোচনা, বিশ্লেষণ !

বৃষ্টির সিঁড়ি ভেঙে নামা দুধ সাদা মেঘের পা
কেমন রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে,
বলেই নেশার ঘোরে চৈতন্য হয়ে কাঁদতে লাগল!

নূপুরের চেনা সুর মিলন কালের ধ্যান মাতিয়ে তুলে
শরীরময় খাজুরাহ জাগরণ,
চলতি হাওয়া পন্থি আদিরসও মাস্ক পরে নিরাপদ!








জামা

আমার জামাটি যখন কাঁটা তারের বেড়ায়
আটকে যায়, তখন মাথায় আকাশ,পায়ে মাটি,
মাত্র দু'টি বোতাম শেষ পর্যন্ত অক্ষত ছিল!
তাদের নাম দিলাম-ভারত আর বাংলাদেশ,
বোতাম দুটি হাসলো।
তারপর মধ্যবিত্ত মানুষের মতো সর্বংসহা রূপে
খুঁজতে লাগলো নিরাপদ বোতাম ঘর।
ছেচল্লিশের মন্বন্তর বা সাতচল্লিশের রায়ট নিয়ে
কোনো গল্প তাদের শোনাইনি,পাছে অবসাদ নামে!

এই সময়ে জামার ভিতরে মানুষ ছিল না
ফাঁকা শূন্যে একটা সময় ঘড়ি টিকটিক
টিকটিক করতে করতে হৃদয়ে কান পাতে।
জীর্ণ লালচে ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে
তারা নিজেরা তখন ভুলভুলাইয়াতে ঢুকে পড়ে,
জামার মধ্যে অখণ্ড পৃথিবীর মানুষ দেখতে পায়।
আনন্দে আত্মহারা চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে...

চিৎকার শুনে চরিত্রহীন প্রহর ভেঙে
দুই দেশের মানুষ ভেদাভেদ ভুলে ছুটে আসে,
চেঁচিয়ে ওঠে- লাশ লাশ বলে।
উল্লাসে দু দেশের পতাকা বুকে নিয়ে জামাটি
উড়তে থাক...উড়তে থাকে...উড়তে থাকে!

সবাই দেখলো একটা জামা
দুটো হাতা ডানার মতো ঝাপটাচ্ছে আকাশে,
নিচে গঙ্গা আর পদ্মার জলবন্টন চুক্তি,
চুক্তি পত্রের উপর দিয়ে বইছে জলস্রোত
জামাটা ডুব দিয়ে ভিজিয়ে নিচ্ছে শুকনো ঠোঁট,
এবার সে কিছু বলবে!