বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০২০

পিয়া ব্যানার্জী


পিয়া ব্যানার্জী

আড়াল

আমি চুপ করে আছি,
যতটা বৃষ্টি চোখে নামছে ততটাই চুপ করে আছি।
শুধু কালির প্রতিটি ফোঁটায় মিশে যাচ্ছে মৃত কান্নারা।
ওরা ক্রমশ যেন কালো হয়ে উঠছে।
গড়িয়ে পড়ছে খাতার পাতা বেয়ে।
ওরা স্যাঁতসেঁতে করে তুলছে পাতাগুলোকে।
তবু আমি চুপ করে আছি।
শুধু একটা গল্প আড়াল করে চলেছি।
যতটা আড়াল করলে বলা - না বলার মাঝে
একটা দীর্ঘ হাইফেন থেকে যায় ঠিক ততটা।
যতটা আড়াল করলে ছায়ার ভিতরের অভিমানটাকে
আড়াল করা যায় ঠিক ততটা।
শুধু মলাটের নীচে জমাট হচ্ছে কিছু কৈফিয়ত।
কিছু নীলচে স্বপ্নের শ্বাসমূল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে।
চামড়ার নীচের ক্ষতটা যতই প্রকট হয়ে উঠছে
আমি ততই চুপ করে আছি।
জানি না কবে নুন ছালটা উঠে গিয়ে
ওরা বেরিয়ে আসবে।
কিছু ভাঙা কল্পনার ডিঙায়
পাড়ি জমাতে চাইছে ভাঙাচোরা শব্দেরা।
আমার রাত ঘুম কলমের তলায়
ফসিল হতে চাইছে নির্ঘুম রাতেরা।
ওদের জাগতে দেওয়া বারণ।
শুধুই দুহাতে নোনতা জল আড়াল করে,
আর ঠোঁটের উপর তর্জনী তুলে চুপ করে আছি।






চলো মিশে যাই

পুবের জানালাটা খুলে দাও,
কিছুটা মনখারাপকে ছুঁড়ে দিই,
ওরাও ধোঁয়া হয়ে মিশে যাক দলছুট মেঘেদের সাথে।
কিছু গুঁড়ো অভিমানকে উড়িয়ে দিই,
ওরাও মিশে যাক আমার,
তোমার চলার পথে ধুলোর সাথে।
কিছু চাপা কান্নাকে বইতে দাও নিজের মতো করে,
ওরা  ভাঙা পাঁজরের সাথে মিশে
নরম পলি গড়ে তুলুক,
সৃষ্টি হোক শব্দের চারণভূমি।
তুমি সেখানে একের পর এক বিরহ গেঁথে
তৈরি করো এমন এক গীতিকাব্য
যেখানে কান্নারা আড়াল হোক
ভালোবাসার শক্ত খোলসের নীচে।
আঙুলের ফাঁকে আর দূরত্ব নয়,
মুঠোটা শক্ত হয়ে উঠুক নিবিড় বন্ধনে।
আর কান্না ঢাকা নয়,
চিবুক আলগা হোক প্রেমের চুম্বনে।
বুকের ভিতর নিম্নচাপের অবসান হোক
ভালোবাসার গভীর উষ্ণতায়।
আস্ত একটা আমি মিশে যাই
তোমার নিঃশ্বাসে, তোমার ব্যস্ততায়।






অব্যক্ত

আমি নির্জনতা খুঁজছি,
অন্ধকারের বুক চিরে খু
বলে নিচ্ছি একদলা নিস্তব্ধতা।
করোটি ভেদ করে বেরিয়ে আসছে
কিছু এবড়োখেবড়ো ভাবনা,
ব্লটিং কাগজের মতো শুষে নিচ্ছে
নিস্তেজ অনুভূতিগুলোকে।
একবার বুকের বাঁদিকটা
ডানহাতের তালুটা দিয়ে চেপে ধরি।
আজকাল জায়গাটা বড্ড চিনচিন করে ওঠে।
প্রকোষ্ঠের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে চায়
কুন্ডলী পাকানো যন্ত্রণাগুলো।
টেবিলের সামনের জানালাটা খুলে দিই।
ঝিঁঝিঁ ডাকা রাতটাকে বড্ড আপন লাগে।
টেবিল ল্যাম্পের নীচে রাখা খাতা কলমটা টেনে নিই।
হাতড়াতে থাকি শব্দের বেড়াজাল।
মাথার ভিতর চলতে থাকে শব্দের জাগলারি।
আঙুলের ডগায় নেমে আসে অসারতা।
চরম অস্থিরতায় পাতাগুলো
মুঠোর মধ্যে দুমড়ে মুচড়ে
মুখ থুবড়ে পড়ে মেঝের উপর,
অনেকটা ব্যর্থ প্রেমের মতো।
এবার স্পট লাইট পড়ে
টেবিলে নুইয়ে পড়া আমার মাথার উপর
দুইহাত দিয়ে খামচে ধরা এলোমেলো চুলের উপর
যেন অন্ধকারটা জমাট বাঁধছে,
ভীষণ ভাবে জমাট বাঁধছে,
আর জমাট বাঁধছে আমার মাথার ভিতর
দমবন্ধ হয়ে থাকা কবিতাগুলোর উপর।