অমৃতা
মুখার্জি
ন হন্যতে
কোথায় যেন
পড়েছিলাম
অনেক দিন আগে,
ভালোবাসা যখন মরে,
হেমন্তের হলুদ বনে
শুকনো রঙীন পাতার মত
চুপচাপ ঝরে পড়ে
শব্দ হয়না কোনো!
আমিও কিছু শুনিনি,
বোকারা যেমন নির্বোধ
হয়
তেমনি কানেও নিশ্চই
কম শোনে,
আমি আবার অংকেও ভাল
ছিলাম না।
দেনা, পাওনা, চাওয়া, পাওয়ার ক্যালকুলাস
না কষেই, আদেখলার মত প্রেম!
ভাগ্যিস তুমি সেই
মাটিতে দাগ কেটে
ন্যাপলাকে যেমন অংক
শেখাতে
ক্লাস এইটে,
আমাকেও সেদিন বোঝালে
যে হেমন্তের বনে
পাতা গুলো ঝরে গিয়ে
এখন কয়েকটা ন্যাড়া
গাছ।
আমি কিছু খেয়াল ই
করিনি!
হেমন্তের শেষে একটা
বিচ্ছিরি শীত পড়েছে,
গাছে পাতা নেই, রাস্তায় বরফ, ঠান্ডায় কাঁপছি? না
সর্দি হয়ে চোখ লাল, ন্যাপলাই জানে!
আমি কেটে পড়ছি।
তুমি বাবু সাবধানে
থেক, ভাল থেক!
আপদ বিদায় হলে যেমন
লোকে নিশ্চিন্তে থাকে।
সেই বাড়িটা
বাড়িটার নাম ছিল
নীলাচল,
শ্বেতপাথরের দালানে
একচালা দুর্গা,
আরতির ধুনোর গন্ধ,
পালক পরা গুমগুমে
ঢাক,
আর সবুজ রঙের অসুর
দেখতে গিয়ে
ঘ্যাঁচ করে আমার
একটা বেণী কেটে
বজ্জাত বুবুল
একদৌড়ে ছাদে।
তারপর সে কি হইচই
ভ্যাঁ কান্না, নালিশ,
পিতলের হাতা দিয়ে
প্রভা পিসি বুবুলের পিঠে
আসল ঢাক বাজালেন।
পরের বছর সেই
বাড়িতেই দাদার বিয়ে,
রঙ্গীলা কাঁচ, ঝাড়বাতি, সানাই
বৌদি তো নয়, যেন ডাকের সাজ পরা
মোমের মা দুগগা,
বাসন্তী বেনারসি, খেজুর ছড়ি হার,
তত্ত্বের হাঙর মুখ
ওয়ালা সন্দেশ আর
সীতাভোগের ব্যঙ্গমা
খেতে গিয়ে
বেশ হয়েছে হাড়
বজ্জাত বুবুল
ধরা পড়ে বেদম
ধোলাই!
আমার তো গোলাপি
ম্যাক্সি
মাথায় সরি ম্যাডাম!
আমি ওদিকেই যাইনি
কিচ্ছু দেখিনি তো!
বৌদির তেল মাখা হলুদ
পিঠে
দাদাকে সিঁদুর দিয়ে
পুতুল আঁকতে বলায়
দাদা রেগে আগুন,
ডিসগাস্টিং
প্রেজুডিস
বলে যেই না উঠতে
গেছে
অমনি ইডিয়ট বুবুল
প্যাঁ প্যাঁ করে
হার্মোনিয়াম নিয়ে গাইছে
না না এমন ঘরে মেয়ে
দেব না
পাঁচ হাজারের কমে
আমি কথাই কব না!
পরের বছর সেই বাড়ি
তেই দোল
আবিরের সঙ্গে কি
জানি বাঁদুরে
পাউডার বুবুল
মিশিয়েছিল
ঝুনু কাকি, বুড়ো দা, বলু কাকা
সক্কলে একটু পরে
বেগুনি হয়ে গেল ।
আর কুটকুট করে কি
জ্বালা গায়ে!
কাল মাঝরাতে, সেই বাড়িটার পুরনো
শেওলা ধরা ছাতে
দাঁড়িয়ে
বুবুল ফোন করল
বৌদিরানী আজ চলে গেল
রে ঝুমঝুমি
ভেন্টিলেটরে ছিল।
আমি আটলান্টিকের
ওপার থেকেও
চোখ বুজে দেখলাম
বাড়িটা হাপুস নয়নে
একা বৃষ্টিতে ভিজছে
শেষ বৌঠান কাল এ
বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন।
বাসস্টপে একা
শহরে বড় শীত আজ !
অঝোরে বৃষ্টি,
বরফে, জলে,কাদায়
হু,হু উত্তরের হাওয়ায়,
কে যেন দাঁত বসায়!
হিংস্র কামড় দেয়
কান আর নাকের ডগায়
।
টিমটিমে বাতি জ্বলা
অন্ধকার বাসস্টপে,
মেয়েটি দাঁড়িয়ে
আছে একা।
শস্তা ওভারকোট এর
তলায়
থরথর করে কাঁপছে
শরীর।
পায়ে ছেঁড়া বুটের
নীচে,
নির্দয় বরফ ছুরি
দিয়ে কাটে
পায়ের আঙুল।
এখনি হয়ত বাস এসে
পড়বে!
ঘনঘন ঘড়ি দেখে সে।
উল্টো দিকের ফুটে,
ভয়াবহ লম্বা, কারা যেন মারামারি
করে,
আছড়ে ভাঙে কাঁচের
বোতল।
ফস করে বার করে
রিভলবার
সামান্য কথায় কথায় ।
এসবে ভয় লাগে না আর
তার।
রোজ দেখে, সয়ে গেছে,
ভয় শুধু বাস মিস
করার।
পেটের আগুন খিদে,
শীতের অবাধ্য কামড়,
অনায়াসে সহ্য করে
সে।
আজ তার বড় আনন্দের
দিন!
প্রথম মাইনের টাকা
পাঠিয়েছে মাকে!
আর যেটুকু আছে
চলে যাবে বাকি কটা
দিন।
লাঞ্চ এর পয়সা
বাঁচিয়ে,
বোকা মেয়ে কিনেছে
একটা কবিতার বই।
পুরনো বইয়ের দোকান
চষে!
বুকে আঁকড়ে সেই বই,
জেদী মেয়ে
দাঁড়িয়ে একা বাস স্টপে
শীতের রাত
মিটমিট করে দেখে
তার অবুঝ বেয়াদপি !
বইটাতে নাম লেখা আছে
"শীতের বাগান"
লেখক পাবলো নেরুদা