কাকলি
ঘোষ
ছেঁড়া বোতাম
আজও হয়নি বলা
যা বলিনি সেদিন
হঠাৎ বৃষ্টিতে
তোর বুকের আশ্রয়ে
চকিতে।
বলা হয়নি
চেনা ভিড়ের আবডালে
তোর হাতের ঝটতি
ছোঁয়ায়।
মেঘ থামলে
কথা ভিজেছিল বৃষ্টির
নেশায়।
হাত ধরে ছুট রাস্তায়
পারাপার অকারণ
থমকে মাঝপথে
আরো একফালি সময় নষ্ট
পার হয়ে যাওয়ার
কষ্ট।
উর্দ্ধশ্বাসে দৌড়
হাঁফ ছেড়ে
ট্রাম রাস্তা
হাঁপালো হাত ধরে
মাঝ দুপুরে,
অবুঝ প্রার্থনার
সবুজ নিরবতা চার্চে।
ঘনিষ্ট উষ্ণতার আঁচে
বৃষ্টির রঙ
খোলে -
ফোঁটার আস্কারায়
শরীর ফুটিয়ে তোলে।
বৃষ্টি ভেজা ঘুড়ির
সুতো
পায়ে জড়াল
বন্যা-আকাশে ধোঁয়াশা
ধরালো
জলরঙে।
তোর জামার ছেঁড়া
বোতাম
ডেকেছে আমার
কত না ডাকনাম,
পরানো হয়নি সুতো
অধিকারের সুঁচে।
বলতে পারিনি
আরো একটু থাক কাছে
আজও বলা হল না যে
এমনি এমনি কথায়
লুকিয়ে লাজ
দূর যাস না আজ।
সেদিন বিকেলের
পাটভাঙা ভাঁজে
রেশমি সুতোর
কারুকাজে
এঁকে নিয়েছিলাম
বর্ষা সাজ।
শেষ রাতের আঙুল
পারেনি ছুঁতে
ঘুমন্ত ভোরের এলো
চুল।
হয়নি বলা কোনদিন
তোকে দিইনি যেতে
সেদিন।
রেল লাইন এঁকেবেঁকে
দূরে চলে গেছে, স্বাধীন,
আঁধার ডুবেছে
ট্রেনের শেষ আলোর
রেশে,
যতদূর নজর গেছে
চোখের আলো
যেখানে মেশে
সব শেষে।
উড়নচন্ডী
অনেকদিন হল, -
গানের সুরে আর বলা
হয়নি
মন খারাপের কথা।
ফেরারী মেঘ
জড়িয়ে ধরেছে যখন
আলগা আবেশে,
অভিমানের কাজল ধোয়া
জলে
হঠাৎ ভেঙে পড়েনি
আকাশ -
সকল ব্যস্ততা ফেলে।
অনেক দিন হল, -
তুলি ডুবিয়ে রঙে
ভেজানো হয়নি সাদা
অবকাশ ।
উড়নচন্ডি আঁচল সারা
অঙ্গে
পিনের শাসনে
হাঁসফাঁস।
বাউন্ডুলে হাওয়ার
ভুল
যখন মাতায় এলোচুল -
মহুয়ার বুঁদ নেশায়
ঝিম ধরেনি গেরুয়া
নিঃশ্বাস।
বহুদিন হল
জোনাকির ছলে নামেনি
তারারা
চাঁদের ভেলায় পার
হয়নি রাত।
মন-কেমনের নিশিভোরের
একতারা
যখন শিউলির সুরে
মাতোয়ারা,
-
ভুল ঠিকানার
ছন্নছাড়া সাথ
খুঁজেছে আরো একটা
রাত,
কলঙ্কিনী রাধার
নীলাম্বরী সাজে।
এই তো সেদিনের কথা
এই তো সেদিনের কথা, -
হাত ধরাধরি করে
রেললাইন ধরে হাঁটা,
তোমার ওড়নায় ঢেউ
তুলে
ধানক্ষেত দোল খেত
পাশে পাশে
আমাদের হাসির তরঙ্গ
উল্লাসে।
মহামারীর ধারাপাত
সেদিন
দূরত্ব মাপেনি কাছে
থাকার সাহসের।
এক শালিক, দুই শালিক দেখে
আর তো মনে হয়না কিছু
কি জানি বিপদ নিলো
নাকি পিছু!
নেই তিন শালিকের
দর্শনে মন চিকচিক
চিঠির প্রত্যাশে।
ভূতের ভয়ে রাম রাম
বলে অজানা ত্রাসে
তেপান্তরের মাঠ তো
আর পেরোয় না কেউ।
বারুদের নীল গন্ধে
আজ শৈশব ভাসে
সন্ত্রাসের উদাসীন
গ্রাসে
মহামারীর অবাঞ্ছিত
ভ্রূণ
বেড়ে ওঠে অচেনা
পরিহাসে
অবাধ্য অনাথ যেমন
বাড়ে নির্লজ্জ
ফুটপাতে,
গল্পহীন কাহিনীর
চুপকথায়।
এই তো সেদিনও রাতভর
আছড়ে আছড়ে কেঁদেছিলো
ঢেউ
তোমার রূপ শহরের
বালিরেখায়।
আর্তনাদ তার আজ
হাহাকার
জীবন-মরণ প্লাবিত
একই স্রোতে,
- হয়ে
একাকার
আরো ধোঁয়ার বিষ, আরো কালি
জিতে নিয়েছে সভ্যতার
তালি।
পায়ে পায়ে ঠিকানা
খুঁজেছে শহর
অলিতে গলিতে রাজপথে।
জানি থাকবে না কিছুই
একদিন -
এই থমকে যাওয়া
ব্যস্ততা,
মৃত্যুভয়ে বন্দি
ঈশ্বর।
স্নেহের ছোপমাখা আঁচল ধরে
উলঙ্গ রাজা পার হবে
তেপান্তর।
পৃথিবীর শেষ তরণীতে
তুমি, আমি, মুখোমুখি দুজন
ভয়হীন, বিষাদহীন, ভূ-ভারহীন
থাকবো ভেসে নোনা
ঢেউয়ে
সৃষ্টির স্রোতে, - আদিম
জীবনের চেয়েও পুরানো
সে জল
সূর্যের কারুকাজে
ছলছল।