সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শাহরিয়ার রুবাইয়াত


শাহরিয়ার রুবাইয়াত

নুমেলার স্যানাটোরিয়াম

বুকপকেটে জমিয়ে রাখা নোয়েলের গন্ধ এখনো টের পাই

যে অবয়বের আগমনী
মঞ্চস্থ হয়েছিল নিগূঢ় অন্ধকারে
ঝিঁঝিঁর কোরাসে চাপা পড়ে গিয়েছিল সে চিৎকার
পরমাত্মার স্পন্দন অচেনাই রয়ে গেল আজীবন
এখন সব শব্দই সুতীব্র মূর্ছার মত
শ্মশানের প্রণয়গন্ধী আলোড়ন

দূর নক্ষত্রের সাথে
যে নিঃসঙ্গ প্রেম বাসা বেঁধেছিল নুমেলার স্যানাটোরিয়ামে
শরতের স্নানবিলের সেই একাকীত্বের ভারী স্বপ্নগুলো
ঘোরের মধ্যে আমিও দেখেছি
সোডেরগ্রানের সাথে
সে চলে গিয়েছে আর আমি এখনো রয়েছি
জন্মদ এর অনুদানকৃত অবয়বে

শ্রীপঞ্চমীর রাতে
চেনা চাঁদ লুকিয়েছিল নরম অন্ধকারে
জলস্রোতের মত করে
অপেক্ষারা ছুটতে ছুটতে আজঅবধি পালিয়ে বেড়ায়
জ্যোৎস্নার সঙ্ঘে
ক্রমশঃ পিছিয়েছে জীবন
হয়ে আছি পরগাছা
প্রতীক্ষার গাঢ় আকাঙ্খারা কেবলই মিলিয়ে গিয়েছে
দূর থেকে দূরে

বুকপকেটে জমিয়ে রাখা নোয়েলের গন্ধ এখনো টের পাই
শুধু হৃৎপিন্ডটাকে ঢেকে রাখা বুকপকেটটা
এখন আর সেখানে থাকেনা







প্যারাসাইট

নিকষ রাত্রির অনঙ্গ ছুঁয়ে
যে কুয়াশা পেয়েছিল অশুভ প্রভাত
আমি সেই ভূমিষ্ঠ অচ্ছুত পরগাছা
উদাসী রোদ্দুরের অলখে বেড়েওঠা জঞ্জাল
কালের দোলাচলে ছিন্নভিন্ন খণ্ডিত সমাচার
যথার্থই জোটেনি যার কাঙ্খিত অধিকার

সময়ের সিঁড়ি ভেঙে সামনে এগুতে গেলে
যে আগন্তক পথরোধ করেছে ক্রমাগত
তাকে চেনা হয়নি কখনো
মুখোশের অন্তরালে জনাকীর্ণ প্রান্তরের মত
সে শুধুই দেখিয়ে গেছে পতনের দৃশ্যাবলী
আনমনে রেখে গেছে জন্মদার কদর্য অভিজ্ঞান

দিগন্তের রেখা ধরে গাড়ওয়ানের শকট
ছুটে চলছে অনন্ত থেকে অন্তে আমিত্বের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে
অচেনার মত করে ন্যুব্জ হয়ে আছি
গোক্ষুরের গর্তে
পৈশাচিক কোরাসে মাদল বাজছে
আপন সায়াহ্নের

শৃঙ্খলিত সময়ের চোখে বাসা বেঁধেছিল প্যারাসাইট
জন্ম হয়েছিল যে অনাহুতের
অন্ধকারের গর্জনে তার রক্তকণিকারা কেবল ছুটে বেড়িয়েছে
স্বপ্নলোকের পথে
যেখানে জ্যোৎস্না আর বিতৃষ্ণা বিষণ্ণতার হাত ধরে ঘুরে বেড়ায়
কনভেন্ট্রির লারকিনের সাথে নিরন্তর







সুড়ঙ্গ

এমন কি কথা ছিল
যে আলাপনে ফিরে গেছে উৎসর্গের মৃদুগন্ধা জ্যোৎস্না
উদাস দুপুরের আরক্তিম নির্জনতায়
অথবা ভ্রমরের মত নোনা শব্দ তুলে
মায়াময়ী উচ্চাঙ্গ প্রেমে
যোজিত সমাধির চোখে মর্মভেদী মনস্তাপে
নিঃসঙ্গ সাঁওতালীর যন্ত্রণাকর সুদূর গানে
শোকার্ত হেমের বুকে একটা আলোআঁধারি ঘোর
যেমন করে ঝুলে থাকে
স্ফীত হাস্যে অথচ ভেতরে ভেতরে নির্মম আততায়ীর মত
জাগতিক সুড়ঙ্গের বুকে অন্ধকারের হাত ধরে
চেনা কবির চিরচেনা অবয়বে
প্রথম নিঃশ্বাসের সাথে সাথেই যে যাত্রা শুরু হয়ে গেছে অন্তিমে
মঞ্চস্থ করতে অ্যাটোন ফর রিডেম্পশন অব লায়াবিলিটি