শর্মিলা মাজী
প্রেম
কোনো প্রেম কখনই বিফলে যায়না,
একটার পর একটা প্রেম
আর ক্রমশ আরো গভীর বোধে উত্তরণ।
এশুধু মেঘের ওড়নায় মুখঢেকে রাখা
আবার আলোকিত উন্মোচন।
নিজেকে গভীর বিশ্বাসে পাওয়া
আর হারিয়ে ফেলা বেদনার তীব্রতায়
অনুচ্চারিত,
কোনো অজানা আনন্দবোধ।
আহা কি আনন্দ,
সবুজের মাঝখান চিরে পথচলা, আঁকাবাঁকা
পথ।
বাঁদিকে উপত্যকার হাতছানী,
দুপাশে বর্শার মতো উদ্যত বা
চোঙের মতো টুপি পরা,
অনুগত সৈনিকের মতো
পাইন গাছ সেলাম ঠোকে বা গার্ড
অফ অনার দেয়।
পাইনের ঘনবনের ঘুলঘুলি,
আকাশের অজস্র টুকরো আয়নার মতো ঝকঝকে।
আকাশের ছাদে হেলান দিয়ে,
থামের মতো দাঁড়িয়ে গাছেরা,
লম্বা লম্বা সরুসরু কাঁচের
জাফরি দিয়ে
আকাশের আলো আসছে।
এসো না হাত ধরো,
দুদন্ড বসতে দাও তোমাদের কাছে,
বড় ক্লান্ত আমি,
সমাজ সভ্যতার সাথে লড়তে লড়তে,
তোমাদের দীর্ঘ শরীরের অন্তরালে
ঢেকে রাখো আমাকে হে পাইন অরণ্য!
ভেলভেটের মতো নরম ঠোঁটে চুম্বন
করো আমায়,
দুহাতে জড়িয়ে শান্ত করো যত
উত্তাপ।
কোনো প্রেম কখনও বিফলে যায়না।
মানবতার সূত্রগুলি একটা-একটা
করে
প্রেমের গ্রন্থি দিয়ে বাঁধা
থাকে,
সেগুলি খুলতে পারলে
পাইন অরন্যের মতো উদবাহু
তুমি নৃত্য করো অনন্তবাসনায়।।
পরিক্রমা
এখনকার পরিক্রমা
শুধুই নিজেকে খুঁড়ে দেখার, অতলস্পর্শী
অবগাহন,
সবকিছু ক্ষমাসুন্দর, স্নেহসুন্দর
চোখে দেখা,
বহুপথ না হাঁটলে এ
দৃষ্টিউন্মোচন হয় না,
এ পরিক্রমায় প্রাচীন প্রপিতামহ
গাছ
নিজের ঘরে বসতে দেয়,
জলবাতাসা গ্রীস্মে আর শীতে
চতুর্দিকে নামানো ঝুরির ভিতরের
ওম
আলিঙ্গণে ঘন ক্ষীরের মতো জমাটি
ঠান্ডা নিয়ে
সকলে রোদ প্রত্যাশী দাঁড়িয়ে
ইতস্ততঃ,
সে এসবেরর আঁচ নিতে নিতে
গাছেদের প্রশয়ে হেঁটে যায়,
চারদিকে ছড়ানো বোধের আঁচলে
কুড়িয়ে নেয় অনেক না দেখা
প্রত্যয়,
এক একটা পথ পেরোয় আর
পিছনে ফেলে আসা পথে দেখে
মন্দিরের প্রশস্ত চত্বর পেরিয়ে এসেছে,
ঘন্টাধ্বণি, বাতাসে
চন্দনসুবাস।
যেতে যেতে এক বাগান,
মালীরা মাটি তৈরী করছে যত্ন করে
গাছেদের জন্য,
এমন সময় দেখা হয়ে যায়
দুজন প্রেমিকের সাথে যারা মাথা উঁচু করে খোঁজে
সবুজআশ্রয় ঠিক পাখিদের মতো,
আর একজন মালীর সঙ্গে যে মাটির
সাথে থেকে
অর্জন করেছে সমাজ রাজনীতি আর
ফসলের ইতিকথা,
শৈত্য কেটে যায় কথায় কথায়,
যেন কাঠকয়লার আঁচে সেঁকে নেয়
সমস্ত শরীর,
স্বেদবিন্দু জমা ক্ষীরকে গলিয়ে
দেয়,
মাটির কি অসম্ভব ক্ষমতা!
নিকোনো উঠোন, তুলসীতলা,
ধানসেদ্ধর গন্ধে ম ম করে
আর বাঁশগাছের আশ্চর্য চিকনতা,
ঢেউ খেলানো সবুজ চুল,
সর্ষেফুলের হলুদবসনা শাড়িতে
কবেকার লেগে থাকা কিশোরী অহঙ্কার,
সব মিলেমিশে এ পরিক্রমা
শতযোজন দূরের মানুষকে কাছে টেনে
আনে।
হঠাৎ খুশী
হঠাৎ করে বন্ধু তুমি, ছুঁলে চোখের
পাতা,
হঠাৎ করে আলোয়-আলোয়, অপরুপ
মুগ্ধতা!
হেমন্তধানে মাঠ ভরে আছে,
নদীতে খুশীর ঢেউ,
ডিঙ্গিনৌকো বেয়ে ও কে?
তাকে তোমরা চেনো কি কেউ?
তার দুহাত ভরা মিঠে রোদ্দুর,
বুকেতে রুদ্রপলাশ,
দুচোখ ভরা কবিতার লিপি,
ভালোবাসা এক আকাশ।
সে চিলের বিরহ বুকে নিয়ে,
মোর আঙিনাতে পাখা মেলে,
তার শিশিরধৌত চাওয়াখানি,
ঘাসের বুকেতে দোলে।
মাধুকরীমন ছুঁতে চায় তাকে,
যাকে সে পলকে হারায়,
সাতরঙা চাওয়া আকাশবুকে,
রঙের ঝরণা ঝরায়।
ভরা দুপুরের কার্তিক ঘ্রাণে,
বন্ধু তোমার তরী,
তীরেতে ভেড়ালে শুভ্রমেঘে,
ওড়ে তব উত্তরী।।