শনিবার, ২১ মার্চ, ২০২০

শাহানারা ঝরনা


শাহানারা ঝরনা

ইচ্ছেপাতার বাঁশি

দৃষ্টিজুড়ে সন্ধ্যা যখন নামে
মনমহলে পূর্ণায়ু দ্বীপ জ্বলে
পূরাণকারের রূপকথা দিন নিয়ে    
অদ্ভুত এক সম্মোহনী চলে
হিসেব খাতায় হয় না কিছুই লেখা
নিয়ম মেনে একটু তবু থামি
ভাবি একি শুভঙ্করের ফাঁকি
নাকি মোহের শিল্পীত পাগলামি?
যাচ্ছি কোথায়, কোন সীমানায় যাবো
ফুলেল বাতাস  দিচ্ছে শুধুই দোলা
উষ্ণতা কি বরফ জলে ভেজে
প্রাচীন নদীর বুক কি থাকে খোলা?
নদীর কাছে একটু না হয় এসো
থাকবো দুজন নীরব-নিবিড় হয়ে
ইচ্ছেসুতোয় ফুলমালিকা গেঁথে
কাল মহাকাল যাবে-ই তো যাক ভেসে
উনুনজুড়ে স্মৃতির পোড়ামাটি
কেউ দেখে না হয়তো ছুঁয়ে  তাকে
বুকের বনে পাঁচমিশালি সুরে
তবু কেন মায়াহরিণ ডাকে?
হৃদ-দেউলে  রঙ করা সব ফানুশ
সুযোগ পেলেই দস্যিপনায় ওড়ে
পথিক দিনের স্বপ্নকাতরতায়
কোন বিরহীর পরাণটা হায় পোড়ে
জড়িবুটি ভাব বিনিময় নিয়ে   
ইচ্ছেরা হয় বড্ড বেহিসেবি
মানঅভিমান জলাঞ্জলি দিয়ে
একলা কাঁদে হৈমবতী দেবী
ভ্রাম্যমাণ এক ইচ্ছেপাতার বাঁশি
জীবনটাকে স্বপ্নে ভরে রাখে
থাকলে বোধের ঋদ্ধ বুননবাড়ি
হারায় না কেউ বিজন পথের বাঁকে।







নিঃশব্দে পোড়ে

অভিমানী ইচ্ছের ভেতর ঘরোয়া রীতিনীতিও
নিয়মসিদ্ধ হয়, প্রতিমার মতো কেউ
বিসর্জন দিই বোধগম্য স্তুতিগাথা
অনেকেই জ্যামিতিক নকশাগুলো না চিনেই
অন্ধকারে পোড়ায় রাজ-জীবনের নথিপত্র
নিঃশব্দে, নীরবে, কী অবলীলায় পোড়ে
মননের গ্রন্থিসমূহ প্রশ্নোত্তর লিখেও
কাঁটাচেরা করি খাতার শরীর
মূর্খতা এবং ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি ছাড়া কিছুই দেখি না
আত্মাহুতির আড়ালে বসে অপেক্ষায় থাকি,
শব্দের শৈত্যপ্রবাহে কখনও  হিম হই
বিস্ময়ে ভরে যায় দুটি চোখ   
প্রতিবেশি সুজনের মতো ধীর পায়ে
কাছে আসে বিষন্নতা কিংবা দীর্ঘশ্বাস     
দ্বিধান্বিত সময়ের ভাঁজভাঙা কোন মহামহিম
স্বপ্নের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রায়নে তৎপর হয় --
বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হলেও
ফরমায়েশি আবেদনে চলে নৈবেদ্য নিবেদন! 







জোনাকি জীবন

আরতির জলছাপে এঁকে মন্দ্রিত মুখচ্ছবি
বাঁশিময় বিলাসে কাটে অনাবাদী প্রহর
কাকস্যবেদনায় পোড়া ইশক্ এর রেশমবাণী
পূণ্যতায় চিরজীবী হয়
গীতিকাব্যের উঠোনে বসে বাগদি রমনী বাঁধে
বিষাদ ঝুলন
আমরা এড়িয়ে যাই দায়িত্বের সংবিধান
অথচ আমরা কোন ভিনগ্রহের মানুষ নই --!
আলোছায়ার খেলায় মেতে ঋতুমতী সকাল দেখি,
বৈকালিক আবহে গাঁথি মিলনমালা
চাতকী মন তবু সংশয়ে দোলে
হৃদয়ঙ্গম হয় না কোন বঙ্কিমবাণী
মায়ামুক্তির হিতৈষীতায় পুনরুত্থানের হাতেখড়ি হয়, 
জলীয় আর্দ্রতায় করি বৈধব্যবিলাস
আমাদের বাকচাতুরী বড় বেশি নিম্নগামী এখন
ভাষাতাত্ত্বিক বোধকে পিছনে ফেলে
ভূতপূর্ব ধ্যানে করি জীবনবন্দনা
কেউ কেউ অচ্ছুৎ ব্যুৎপত্তির আড়ালেই
বৈশ্বিক সীমানা বাড়ায়
কেউ বা মৃত্যুঞ্জয়ী জীবনে গড়ে স্বপ্নের এপিটাফ।